ঐ যে বললাম, এরা ঠিক হেরে যাবে। হেরে যায়ই এরা। ডেনমার্ক হেরে যায়, হেরে যায় ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন।
ছেঁড়া পাজামা, ফুটোফাটা ফতুয়া পরে গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে বিড়ি টানে। কবিতার বই বিক্রি হয়নি। নিজের আলসারটা আর টাকার অভাবে অপারেশন করানো হল না। মরতে মরতে বেঁচে থাকে অপয়াগুলো কোনওদিন কোথাও জিততে পারে? কেউ দেখেছে কখনও?
ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন আবার ফাইনাল থার্ডে ডিফেন্স চেরা পাস বাড়াবে। গ্যালারি থেকে ভেসে ওঠা টিফোতে মুখ দেখাবে। ফুটবলকে বিসর্জন দিতে দিতেও ফিরে এসে পরপর দুটো ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে যাবে।
দেশকে বিশ্বকাপের মূল পর্বে তুলবে, ক্লাবকে লিগ টেবিলের একটা সিকিওর পজিশনে এনে ফেলে দেবে। তারপর? তারপর হেরে যাবে। উল্লাসে মাতোয়ারা গোটা মাঠের এক কোণে কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। ময়দানে তো রোজ কত হকার আসেন, সবাই কি দিনের শেষে লাভের মুখ দেখেন?
কারোর সিগারেট আজ তেমন বিক্রি হল না, ঝুরিভাজার প্যাকেট দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিল আর্বান মর্ডানরা। জেতার ফর্মুলা যাদের জানা নেই, তারা শেষ হয়েও হইল না শেষ বলেই থেমে যাবে। জেতার কম্পিটিশনে নিত্যদিন লড়ে চলা গোটা পৃথিবীর বয়ে গেছে ওদের দিকে খানিক মুখ ফিরিয়ে তাকাতে।
তারপর? তারপর গল্প শেষের পথে। ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন, লুকা মদ্রিচরা মাঠ থেকে স্পাইক গুটিয়ে বেরিয়ে চলে যাবে। ঠাস ঠাস দ্রুম দ্রুম আওয়াজের মাঝে কয়েকটা পরিচিত মুখ বুভুক্ষু চোখে খুঁজে বেড়াবে তাদের। না পেয়ে মন খারাপ করবে, উদাস মনে পথে পথে হেঁটে বেড়াবে, খানিক চা-বিড়ি খাবে – এই তো!
শিল্পটিল্প ভালবাসা লোকগুলো স্রেফ হেরেই যায়। সেটা মৃত্যুঞ্জয়ীর মত হার্ট অ্যাটাকের পরে ফুটবল মাঠে বীরদর্পে ফিরে এলেও। মৃত্যুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাঁরা ফিরতে জানে। কেউ মনে রাখে না কী ঘটেছিল আগে, কেউ না। না মনে রাখুক, কার কী! জীবনের দামে কেনা ফুটবলে একটা জয় বা একটা পরাজয়ে কি-ই বা আসে যায়।
ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন হেরে গেছে। হেরে গেছে ডেনমার্ক, জিতে গেছে বাস্তবতা। এই উপসংহারই তো নিয়তি। এই তো জীবন আর জীবনের বাস্তবতা – সব গল্পের পূর্ণতা পাওয়ার দিব্যি কেই বা দিয়েছে। কিংবা এই গল্পটার এই অপূর্ণতাটাই হয়তো চূড়ান্ত পূর্ণতা।