দৃশ্যপট – ১। ২০১৫ সাল। ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ। সেই সিরিজেই অভিষেক হওয়া মুস্তাফিজুর রহমান পাঁচ উইকেট নেয়ার পর তাঁকে ঘিরে বাংলাদেশ দলের উচ্ছ্বাস। সাকিব আল হাসান মুস্তাফিজের চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছেন আনন্দে। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা চুমু এঁকে দিলেন মুস্তাফিজের কপালে। সেবার ভারকে হারানোর নায়ক ছিলেন এই বাঁহাতি এই পেসার।
দৃশ্যপট – ২। ২০২২ সাল। সাত বছর পর আবার বাংলাদেশে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে এসেছে ভারত। প্রথম ম্যাচেই ধ্বসে পড়লো ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ। তবে সহজ টার্গেটেও হোঁচট খেল বাংলাদেশ। নয় উইকেট হারিয়ে ফেলা দলটাকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুললেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এবার ম্যাচ জয়ের নায়ক ব্যাটার মিরাজ, সিরিজ জয়েরও। তাইতো এবার মিরাজকে নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন সাকিব আল হাসান। এবাদত, নাসুম, সোহানরাও আছেন সেই উদযাপনে।
ঘরের মাঠে ভারতকে পরপর দুইবার সিরিজ হারালো বাংলাদেশ। অবশ্য এরমাঝে পেরিয়ে গেছে প্রায় সাতটা বছর। এই সময়টায় ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের উত্থান সবাই দেখেছে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ, আইসিসি টুর্নামেন্ট সব জায়গাতেই বাংলাদেশ নিজেদের ছাপ রেখেছে। মাশরাফি বিন মর্তুজার তৈরি করা লেগেসিটা বহন করে চলেছেন তামিম ইকবাল। প্রত্যাশার চাপ মেটালেন লিটন দাসও।
সবমিলিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল অপ্রতিরোধ্য। এই শব্দটা আরো অনেক বেশি কার্যকর হয় যখন খেলাটা ঘরের মাঠে। অর্থাৎ মিরপুর, চট্টগ্রাম কিংবা সিলেটের মাঠে। তাহলেই সাকিব, তামিমদের হারানো যেন অসম্ভব। সিরিজটা শুধুই এক আনুষ্ঠানিকতা।
২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে টানা তিনটি সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ছিল সেই সিরিজগুলো। টানা তিন সিরিজ জয় নিয়ে অনেক আলোচনাই হয়। তবে সেই ধারাবাহিকতা বাংলাদেশ ধরে রেখেছে ২০২২ সাল অবধি। মাঝের সময়টাতেও ঘরের মাঠে প্রায় সব দ্বিপাক্ষিক সিরিজই জিতেছে বাংলাদেশ।
ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে এই সময় বাংলাদেশ হেরেছে কেবল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে সেই সিরিজেও প্রতিদ্বন্দিতা করেছিল বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ হারতে হয়েছিল তীরে এসে। এরবাইরে ঘরের মাঠে উপমহাদেশের কিংবা উপমহাদেশের বাইরের দলগুলোকেও হারিয়েছে বাংলাদেশ।
ওদিকে ঘরের মাঠে স্পিনিং উইকেট বানিয়ে জেতার একটা অভিযোগ শোনা যায়। তবে ওয়ানডে ফরম্যাটে সেই অভিযোগও মিথ্যা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ। টেস্ট কিংবা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ স্পিনিং উইকেটের ব্যবহার করলেও ওয়ানডে ফরম্যাটে সেই দৃশ্য দেখা যায়নি।
যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজও পেস আক্রমণ দিয়ে জিতেছে বাংলাদেশ। এছাড়া ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ গুলোতেও পেসারদের আধিপত্যই দেখা গিয়েছে। কিছু ম্যচ জিতিয়েছেন তরুণ ব্যাটাররাও।
যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে ব্যাট হাতে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন সৌম্য সরকার। এছাড়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ী ইনিংস আছে আফিফ হোসেন ধ্রুবর। আর এবার ভারতের বিপক্ষে তো মিরাজ নিজের ব্যাটিং সত্ত্বা নতুন করেই প্রমাণ করলেন।
এছাড়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ে সবার উপরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ২০১২ সাল থেকে এখন অবধি নিজেদের মাটিতে ৫৬ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে ৪০ টিই জিতেছে সাকিবরা। এই সময়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে শতকরা ৭০.৯১ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে টাইগাররা।
ফলে বাংলাদেশে যে দলই খেলতে আসুক না কেন, অন্তত ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশই ফেভারিট। আরো সহজ করে বললে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের কাছ থেকে ট্রফি ছিনিয়ে নেয়াটা প্রায় অসম্ভবই।