এমিলিয়ানো ‘বাজপাখি’ মার্টিনেজ

তখন ২০১০ সাল। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বস্তির শহর বুয়েনস আয়ার্সের বছর সতেরোর গোলরক্ষক ছেলেটা একদিন সন্ধ্যাবেলায় প্র্যাকটিস থেকে ফিরে এসে দেখলো সংসারের জোয়াল টানতে টানতে কাঁধ ঝুলে যাওয়া অর্থনৈতিক দুরবস্থায় জর্জরিত বাবার চোখে জল।

দিন কয়েক আগেই প্রিমিয়ার লিগের বিখ্যাত ক্লাব আর্সেনালের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু মা ও ভাই ছেলেটির এত কম বয়সে এত দূরে পাড়ি দেওয়া নিয়ে আশংকিত হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে কাঁপা কাঁপা গলায় বারেবারে বলে উঠছে – ‘অতদুরে যেতে হবে না!’

ছেলেটিও দোনামনায় ভুগছিল। কিন্তু, ঠিক আগের রাতেই অর্থের অভাবে বাবার চোখের জল ছেলেটিকে সাহসী করে তুললো। ছেলেটি সংসারের হাল ফেরাতে ও নিজের স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে বিলেতে পাড়ি জমালো।

কাট টু ২০২০ সাল।

মানুয়েল আলমুনিয়া, ওজিয়েক সেজনি, ডেভিড ওসপিনা, পিটার চেকদের মত খ্যাতনামা গোলরক্ষকদর ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসা ছেলেটা নিজের প্রতি বিশ্বাসটা হারিয়ে যেতে দিল না। অবশেষে কোভিড ১৯ মহামারির কারণে দীর্ঘায়িত মৌসুমে সুযোগ আসলো। চোটপ্রাপ্ত বার্ন্ড লেনোর পরিবর্তে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো দলের প্রধান গোলরক্ষকের দায়িত্ব পেল সেই ছেলেটা।

ধারাবাহিকভাবে চোখধাঁধানো পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ক্লাবকে টালমাটাল মৌসুমেও এফএ কাপ এনে দিল। এখানেই শেষ নয়। এরপর ক্লাবের জার্সিতে শেষ ম্যাচে কমিউনিটি শিল্ডেও ক্লাবকে আরো একটি ট্রফি এনে দিলেন।

ব্যাস, বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সমর্থকদের কাঁদিয়ে বিদায় নেওয়ার সাথে সাথে ক্লাবের আত্মার সাথে নিজের নাম আজীবনের জন্য জড়িয়ে নিল। আর অ্যালবিসেলেস্তে সমর্থকদের ভরসা দিল যে এবার অন্তত তেকাঠির নিচে এমন একজনকে পাওয়া গেছে যাকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়।

এরপর এল সেই সময়। ২০২১-২২ মৌসুম। শুরুটা হল কোপা আমেরিকা দিয়ে। লম্বা সময়ের মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট জয়ের ক্ষরা কাটানোর নায়ক বনে গেল সেই ছেলেটা। লিওনেল মেসি কিংবা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার সাথে তাঁর নামটাও উচ্চারিত হল। আর্জেন্টিনা পেয়ে গেছে তাঁদের একালের সার্জিও গয়কোচিয়া – এমন বলা লোকেরও অভাব হচ্ছিল না।

কাট টু নয় ডিসেম্বর, ২০২২ সাল। মধ্যপ্রাচ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে ডাচদের জোড়া পেনাল্টি আটকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মনে গোলরক্ষকটি সম্পর্কে জন্ম নেওয়া প্রত্যাশা পূরণ করে ইতিহাসের পাতায় নাম তোলার পথে আরো দেশকে আরো একধাপ এগিয়ে দিল।

কুর্নিশ এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতুক আর নাই জিতুক। আপনার নাম লেখা হয়ে গেল ইতিহাসের পাতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link