কাতার বিশ্বকাপটা অবিস্মরণীয় হয়ে রইবে। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ তো অবশ্যই থাকবে। একঝাঁক তারকা ফুটবলারদের এটাই ছিল শেষ বিশ্বকাপ। ইতোমধ্যেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মত উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের পতন হয়ে গিয়েছে। তালিকাটা বেশ লম্বা। হতাশার গল্পে গোটা জার্মানি দল থেকে শুরু করে বেলজিয়াম, স্পেনেরও অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। তবে মুদ্রার বিপরীত পিঠের অবতারণাও যে একেবারেই হয়নি তা নয়।
আর্জেন্টিনার মত পরাশক্তিকে হারিয়ে অঘটনের সূত্রপাত করেছিল সৌদি আরব। এরপর ছোট দলগুলোর রূপকথায় নতুন নতুন পাতা যুক্ত হয়েছে। একপাশে যখন আনন্দ মিছিল। আরেকটা দিক বিষন্নতার কালো মেঘে ছেয়ে গেছে।
তবে শেষ অবধি ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ শেষের পথে হাঁটা শুরু করেছে। কাতার বিশ্বকাপ পেয়ে গিয়েছে তাঁর সেরা চার দল। ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো খেলতে চলেছে ২০২২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল।
এই চার দলের মাঝে সকল বিতর্কের উর্ধ্বে গিয়ে এগিয়ে রয়েছে ফ্রান্স। টুর্নামেন্টের শুরুতে ফ্রান্সে শিবিরে লাগাতার দুঃসংবাদ আসতে থাকে। এক এক করে তারকা ও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে থাকে।
এনগোলো কান্তে, পল পগবাদের পথে পরবর্তীতে হাঁটতে শুরু করেন করিম বেনজেমা, প্রিসনেল কিমপেম্বে ও ক্রিস্টোফার এনকুনকু। এত সব ইনজুরি পেছনে ফেলে ফ্রান্স নিজেদের দাপটটা ঠিকই ধরে রেখেছে বিশ্বকাপের মঞ্চে।
কিলিয়ান এমবাপ্পে ও অলিভার জিরুডের বদৌলতে এখন অবধি বিশ্বকাপে দারুণ সময়ই পার করছে ২০১৮ এর চ্যাম্পিয়ন দলটি। এমনকি দলের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স ও মানসিক উৎফুল্লতা তাদের এগিয়ে রাখছে শিরোপা জয়ের দৌড়ে।
নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপটা নিশ্চয়ই জিততে মুখিয়ে আছে দিদিয়ের দেশমের দল। ব্রাজিলের পর ফ্রান্সের সামনেই রয়েছে সুযোগ টানা দুইটি বিশ্বকাপ বাড়ি নিয়ে যাওয়া। তবে সে কাজটায় ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় বাঁধার নাম আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনার প্রাণভোমরা লিওনেল মেসির এটাই শেষ বিশ্বকাপ। তিনি নিজেও যেমন এই বিশ্বকাপটা জিততে চাচ্ছেন, ঠিক তেমনি গোটা দল তাঁর জন্য হলেও এবারের বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। লিওনেল স্কালোনির অধীনে নিজেদেরকে দারুণভাগে গুছিয়ে নিয়েছে আলবিসেলেস্তারা।
আট বছর পর আবারও বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখার অনেকটা সামনেই চলে এসেছে মেসির দল। আর মাত্র দুই কদম দূরেই তাদের ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান। ২৮ বছর বাদে ২০২১ সালেই কোপা আমেরিকা পুনরুদ্ধার করেছে।
মুখিয়ে থাকবে নিশ্চয়ই তাঁরা বিশ্বকাপ জয়ের জন্য। তবে তাদেরকে সেমিফাইনালে কঠিন পরীক্ষাটাই দিতে হবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে। আর্জেন্টাইনদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে কোয়ার্টার ফাইনালে রুখে দিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে লুকা মদ্রিচের দল। তাই হয়ত খুব সহজেই আর্জেন্টিনাকে ফাইনাল অবধি পৌঁছাতে দিতে চাইবে না লিভাকোভিচ। ২০১৮ সালের ফাইনালের অপূর্ণ গল্পটা নিশ্চয়ই পূরণ করতে চাইবে পেরিসিচ, পেটকোভিচরা।
স্বপ্ল সময়ের ফুটবল ইতিহাসে, ইতোমধ্যেই বাজিমাত করে ফেলেছে ক্রোয়েশিয়া। টানা দ্বিতীয়বারের মত তাঁরা হাজির সেমিফাইনালের মঞ্চে। নিশ্চয়ই অল্পতেই হেরে যাওয়ার মানসিকতা নিয়ে তাঁরা এতটা পথ আসেনি। তাঁরাও নিশ্চয়ই বিশ্বকাপ জয়ের রুপকথা লিখতে মুখিয়ে আছে।
অন্যদিকে, ইতোমধ্যেই নিজস্ব রুপকথাকে মহাকাব্যে রুপ দিয়ে ফেলেছে মরক্কো। আফ্রিকার বুকে ফুটবল ইতিহাসের অনন্য এক প্রদীপ বাতি মরক্কো। সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে, প্রথম আফ্রিকার দেশ হিসেবে সেমিফাইনালে পৌঁছেছে অ্যাটলাস টাইগাররা।
এমনকি ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বাদে তৃতীয় দল হিসেবে ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের শীর্ষ্যরা সেমিফাইনালে পা রেখেছে। এখান থেকে তাদের আসলে আর হারাবার কিছুই নেই। তাঁরা ইতোমধ্যেই ইতিহাস রচনা করে ফেলেছে।
তবে নিশ্চয়ই হাকিম জিয়েচ, আশরাফ হাকিমিরা এখানেই থেমে যেতে চাইবেন না। তাঁরা নব্বই মিনিটের শেষ সেকেন্ড অবধি নিশ্চয়ই মহাকাব্যের পুরুত্ব বাড়াতে চাইবে। কোন সম্ভাবনাই ফেলে দেওয়ার নয়। কোন কিছুই আগে থেকে বলে দেওয়া কঠিন। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ অন্তত সে বার্তাই তো দিয়ে গেল।