Social Media

Light
Dark

মিডিয়া প্রোটেক্টেড মেসি? ফ্যাক্ট বনাম ফ্যালাসি

ডাচদের সাথে ম্যাচ শেষে লিওনেল মেসির যে ক্যারেক্টারটা দেখা গেল, এটা মেসি সুলভ না হইলেও এইটা একটা কমন ফুটবল ইন্সিডেন্ট। প্রতি বড় টুর্নামেন্টে এগুলা হয়। প্রায় প্রতি বিশ্বকাপে এক দুইটা ম্যাচ এরকম থাকবেই থাকবে।

ম্যাচের আগে শিট টকিং, ইন্টেন্স ম্যাচ,আইকনিক সেলিব্রেশন, কন্ট্রোভার্শিয়াল রেফারিং, একাধিক বার ডাগ আউট ক্লাশ, ১০০ তম মিনিটে গোল, হাই ইন্টেন্স এক্সট্রা টাইম, টাই ব্রেকার, টাই ব্রেকারে আবার ম্যান টু ম্যান ক্লাশ প্রোভোকিং। এই যেখানে একটা ম্যাচের টাইম লাইন সেখানে উইনিং ক্যাপ্টেন যে ম্যাচের পর অপনেন্ট ডাগ আউটে গিয়ে ফেটে পরতে পারে এইটা ইটসেল্ফ একটা আইকনিক ইন্সিডেন্ট। এরকম ম্যাচের শেষ এভাবেই হয়। এ রকম ঘটনা এভাবেই ইতিহাসের পাতায় যায়। খুব খুব খুবই স্বাভাবিক বিষয়।

ঘটনা এই পর্যন্ত থাকলে ঠিক ছিল। কিন্ত সামহাউ এই ব্যাপারটাকে সার্টেইন ফ্যানবেজ অন্য একটা ব্যাপারে যেখানে কোনো ম্যাচ ইনভলভ নাই, কোনো হিট ইনভলভ নাই, কোনো মোমেন্ট অফ মেল্টিং ডাউন ইনভলভমেন্ট নাই, কোনো বিগ স্টেজ এপিক ক্লাশ ইনভলভমেন্ট নাই। নিতান্তই ব্যাক্তিগত ইগোর ব্যাসিসে নিজ দলের কোচকে ইন্টার্ভিউ ডেকে করা অসম্মানের সাথে মিলিয়ে যখন মেসি মিডিয়া প্রোটেক্টেড দাবি করার চেষ্টা চলছে তখনই কথা বলা প্রয়োজন হয়। যদিও এগুলা নিয়ে আজকে এইটাই শেষ কথা। কারণ, মেসি বলেছিল সেলিব্রেশন লাফালাফি করো একদিন, তারপর সিরিয়াস। সো দ্যাটস ইট।

যা বলছিলাম, মিডিয়া প্রোটেক্টেড কি না সেটা বোঝার আগে বুঝতে হবে যে লিও মেসি কে? এবং সে কোন শু তে দাঁড়ায় আছে ক্যারিয়ার এর প্রথম থেকে।

মেসি ক্যারিয়ারের শুরু থেকে চাওয়া না চাওয়া ছাড়াই ওয়ার্ল্ডের চারটা গ্রেটেস্ট রাইভালরি এবং টকিং পয়েন্টের ‘ফোকাল পার্সন’। কথা গুলা বোঝার চেস্টা করতে হবে। মেসি আর্জেন্টাইন স্টার। ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা হল ফুটবল জগতের আইকনিক একটা রাইভালরি। মেসি সেই রাভালরির ফোকাল পার্সন।

মেসি বার্সা স্টার, তাও হোমগ্রোন বার্সা স্টার। বার্সা ভার্সেস রিয়াল মাদ্রিদ আর্গুয়েবলি পৃথিবীর যে কোনো স্পোর্টস এর সব থেকে আইকনিক রাইভালরি। মেসি সেই রাইভালরির একজন ‘ফোকাল ফেস’। মেসি লাতিন স্টার। লাতিন আমেরিকা ভার্সেস ইউরোপ ফুটবল রাইভালরি সম্ভবত বিশ্বকাপের সব থেকে পুরাতন রাইভালরি। এই গল্প করতে চাইলে আলাদা লেখা লাগবে। মেসি লাতিন ক্যাম্পের টপ সুপার স্টার প্রায় এক যুগ ধরে।

মেসি বনাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ফুটবল ইতিহাসের সব থেকে বড় ম্যান টু ম্যান রাইভালরির একটা। আর্গুয়েবলি বেস্ট রাইভালরি। ১২ টা ব্যালন, ১০ গোল্ডেন বুট, ৮০+ ট্রফি, প্রায় ১৫০০ গোল, ৫০০+ অ্যাসিস্ট এই রাইভালরির পার্ট। ক্রিশ্চিয়ানো এই জেনারেশনের সব থেকে বড় ‘ইকোনমিকাল’ ব্যান্ড, যে কিনা ইউরোপের টপ তিন টা ক্লাব অর্থাৎ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড , রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্তাস এর আইকনিক প্লেয়ার উইথ হিউজ হিউজ ফ্যান ফলোয়ার। মেসি সেই রাইভালরির পার্ট।

এই যে রাইভালরি গুলো, এগুলো কোনো ছিচকে রাইভালরি না। এই রাভইভালরি গুলো ওয়ার্ল্ড স্পোর্টসই না শুধু ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স, ওয়ার্ল্ড ইকোনমি ও ইনফ্লুয়েন্স করার মত ব্যাপার।

এই জায়গা থেকে মেসির প্রতিপক্ষ যখন গ্রেটেস্ট এভার ফুটবলিং নেশন ব্রাজিল, গ্রেটেস্ট এভার ক্লাব ইন হিস্ট্রি রিয়াল মাদ্রিদ, ইউনাইটেড -জুভেন্টাসের মত বিরাট ব্র্যান্ড তখন মেসি যে বড় একটা অংশ মিডিয়া দিয়ে এটাকড না, প্রোভোকড না, বা টার্গেটেড না এইটা যদি আপনি বলেন আমার কিছু উত্তর দেয়ার নাই তবে বাস্তবতা ভিন্ন।

মেসি তাঁর ক্যারিয়ারে যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে সে কোনো কারণ ছাড়াই ওয়ার্ল্ড মিডিয়া দ্বারা টার্গেটেড।

কিন্ত মেসির ক্যারিয়ারে যে কন্ট্রোভার্সি কম, বা মিডিয়া ফ্ল্যাশ যে সে কন্ট্রোল করতে পেরেছে এটা নিতান্তই তাঁর স্কিল, যোগ্যতা এবং সাফল্য। নাথিং এলস। মেসি তার জীবনে ফুটবলের বাইরে কিছু করে নাই, অ্যাটেনশন খোঁজেনি, কন্ট্রোভার্সি করতে চায়নি – এটা মেসির ট্রেইট এবং এখানে মেসি সফল। বার্সার বিরাট ক্যারিয়ারে সে যত স্টারের সাথে খেলেছে বিভিন্ন সময় মিডিয়া বিভিন্ন নিউজ করে তাকে ভিলেন বানাতে চেয়েছে। মেসি উত্তর শুধু মাঠেই দিয়েছে। কোনো কন্ট্রোভার্সি তে সে কথা বলেনি। কথা বলছে যাদের সাথে তাকে জুড়ে দেওয়া হয়।

মিডিয়া বলছে ইব্রাহিমোভিচ মেসির জন্য ক্লাব ছেড়েছে, অথচ ইব্রা মেসিকে তার শেষ দিন ক্যাপ্টেন্সি পর্যন্ত ব্যালন ‍ডি’অরের প্রথম ভোটটা দিয়েছেন। মিডিয়া ডেভিড ভিয়ার সাথে তার ক্লাশ দেখাতে চেয়েছে, ভিয়াই বলে গেছেন ভাওতাবাজি। সানচেজ, গ্রিজম্যানের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। বার্সায় থাকা অবস্থায় বা বার্সা ছাড়ার পর একজনও ‘আই রিপিট একজনও’ দাবি করে নাই সে মেসি দ্বারা মিস ট্রিটেড। নেভার।

মেসির বড় কন্ট্রোভার্সি দুই তিনটা। ১৬ তেসালে অবসর, ১৯ সালে কোপাকে পাতানো বলা এবং বার্তোমেউর সাথে ক্লাশে ক্লাব ছাড়তে চাওয়া।

মেসির ২০১৪ সালে ক্লাবের ইনজুরি নিয়ে মিডিয়া ফেক ইনজুরির দায় দেয় নাই? টানা ফাইনাল হারের পর তার মিডিয়া ছাড় দিছে? ইউরোপিয়ান লিজেন্ডরা ছাড় দিছে? বার্সায় হার গুলো কেউ ইগ্নোর করছে? অবসর ইন্সিডেন্ট ছাড় দিয়েছে? মেসিকে ছিড়ে ফেলা হইছে, রক্তাক্ত করা হইছে। ইউরোপীয় মিডিয়া, লিজেন্ডরা তাকে চুড়ান্ত লেভেলের অসম্মান দেখিয়েছে। এই তো সেদিন ই এস পি এন এর মত শো তে জাভি নাকি দোয়া করে তারে দলে না আনার জন্য এই ধরনের মকারি করছে অন লাইভ। গ্যারি নেভিল ন্যাশনাল টিভিতে তাঁর স্টাট দেখাতে গিয়ে ১০ টা ট্রফি বাদ দিয়ে, ন্যাশনাল ট্রফি বাদ দিয়ে, গোল কমিয়ে আজগুবি মিথ্যা স্টাট দাড় করিয়ে ডিফেম করেছে।

কিন্ত মেসি নেভার কেয়ারড। সে স্টাটাস দেয়নি, সে ইন্টার্ভিউ দেয়নি, সে মাঠে লাইভ চলাকালীন একজনকে অপমান করার জন্য আরেকজনের সাথে হাত মিলাইতে যায়নি, মেসি খেলা শেষের আগে মাঠ থেকে চলে যায়নি, মেসি ম্যাচ হেরে ফ্যানের ফোন ভাঙেনি, মেসি সোশ্যাল মিডিয়ার ফ্যান পেজে যাযে ফ্যাক্টোস লেখে নাই। তাই মেসির কন্ট্রোভার্সি হয় না। সিম্পল ব্যাপার।

ওয়ার্ল্ডের ওয়ান অফ দা গ্রেটেস্ট ফুটবল ফিগার মেসিরে পত্রিকার পাতায় আনলে মিডিয়া চলবেনা? জগতে পত্রিকা খালি এক মেসিই চালাতে পারে? মেসির ফ্যানডম নাই? কিন্ত মেসিরে পত্রিকার পাতায় আনা যায় না কারণ সে কন্ট্রোভার্সি করে না। সে সেন্টার অব অ্যাটেনশন প্রোভোক করে না। এটা তার ট্রেইট, তার সাক্সেস।

পত্রিকার কথা বাদ দেন। এই যে রিসেন্ট ইন্সিডেন্ট গুলা হইছে এর মিথ্যা কোনটা? সে মেসিরে প্রচণ্ড রকম মিথ্যা স্টাট দিয়া ডিফেম করা ফ্যান আইডির পোস্টে ‘ফ্যাক্টোস’ লিখে নাই? এটা মিডিয়া বানিয়েছে? খেলা শেষের আগে মাঠ ছাড়েনি? মিডিয়া বানিয়েছে? তার ক্যাম্প রেগুলার মেসিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় মক করে না? মিডিয়া ক্রিয়েটেড? ম্যাচ হেরে তার দলের প্লেয়াররা ডিরেক্ট টুর্নামেন্ট আর্জেন্টিনার জন্য পাতানো বলেছে?

আপনি এগুলা করবেন, মিডিয়া অ্যাটেনশন আসবে। এরপর মেসিকে কেনো মিডিয়া ধরেনা এই আজগুবি গল্প আনেন? মেসিরে কেন আনবে? নেদারল্যান্ডস ম্যাচে যা হইছে পিওর ফুটবল ইন্সিডেন্ট। ডাগ আউট ক্লাশ রিয়াল বার্সায় ও হইতো, হয়। এই রোনালদোই পেপকে ধাক্কা দিয়েছিল। এগুলোকে ফ্যাব্রিকেটেড করে এনে দেখাতে চান মেসি মিডিয়া প্রটেক্টেড? তারে মিডিয়া কেন প্রোটেক্ট করবে আমারে বোঝান?

যে লোক হিউজ ব্রাজিলিয়ান প্রেসের অপনেন্ট তাকে কে প্রোটেক্ট করে? যে লোক রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসের অপনেন্ট তারে কে প্রটেক্ট করে? যে ইউনাইটেড এর এক সময়ের আইডডের অপনেন্ট তাকে ইউরোপের অন্যতম পাওয়ার ফুল ইউনাইটেড মিডিয়ার থেকে কে প্রোটেক্ট করে?

সে নিজেই। এইটা তার ট্রেইট।

অডিয়েন্স চায় কন্ট্রোভার্সি, অডিয়েন্স চায় কন্টেন্ট। মিডিয়া কন্টেন্ট দেয়। মিডিয়া কন্টেন্টের জন্য তাদের ই টার্গেট করে যারা বিভিন্ন সময়ে কন্টেন্ট দিয়ে আসতেছে। এটাই মিডিয়ার কাজ।

প্লেয়ার রোনালদো গ্রেট। হ্যাঁ, তাঁর ওয়ার্ল্ড কাপ ট্যালি খারাপ কিন্ত পর্তুগাল এর একটা জেনারেশন স্টেপ আপ করছে তার ইনফ্লুয়েন্সে। তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে যা করেছেন তা মানুষের জন্য স্বপ্ন। ভাবনার বাইরে করেছেন। তাঁর ফ্যানডম এমনি এমনি আসেনি। তার ক্যারিয়ারে সে এত কিছু করছে যে তিনি এই ফ্যানডম ডিসার্ভ করেন। তিনি মিডিয়ার অ্যাটেনশনে থাকে এইটা তার ট্রেইট। এই ট্রেইটে তাঁর গ্রেটনেস কমবে না। কমার সুযোগ নাই। কিন্ত তার ট্রেইট যদি তার দুর্বলতা হয় সেটার দায়ও তাঁর। এই অ্যাটেনশনের চক্করে নিজের ক্যারিয়ার হাই টোনে শেষ করতে না পারলে সেটা তাঁর দুর্বলতা।

আর নিজেকে অ্যাটেনশনের বাইরে রাখা, ক্লিন রাখা, স্টেবল রাখা এবং শুধুমাত্র ফুটবলের জন্য বিলিয়ে দেয়াও ট্রেইট। এই ট্রেইটকে ‘মিডিয়া প্রোটেকশন’ মার্কা মিথ্যা ব্লাশফেমি বানোয়াট টার্ম দিয়ে ডিফাইন না করে যেটা সত্য সেটা বলেন। মেসি সেদিন থেকে সেন্টার অব অ্যাটেনশনে যেদিন সে ডেব্যু হইছে। তিনি তাঁর ফুটবল জীবনকে এসবের বাইরে নিয়ে নিজের মত সাজাতে পেরেছেন এটা তাঁর ট্রেইট। সিম্পল।

মেসি বিশ্বকাপ জিতুক না জিতুক মেসি তাঁর ব্যক্তিগত কারণে তাঁর দলকে সাফারার হতে দেয় নাই – এটা তাঁর কৃতিত্ব। এই হতে দেয়নি বলেই সে দেবতার ট্রিটমেন্ট পায়, এই হতে দেয়নি বলেই তাঁর জাতি তাঁকে মাথায় তুলে রাখে, এই হতে দেয়নি বলেই তার ক্লাবের তরুণরা পুরস্কার নিতে যেয়ে নিজের পরিবার, বাবা-মার আগে মেসির কথা বলে। এটাকে আপনারা নাম দেন মিডিয়া প্রোটেকশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link