মেসি-মদ্রিচ, দ্য ব্যাটল অব গ্রেটনেস

লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা রীতিমতো স্বপ্নীল সময় পার করছে। টানা ৩৬ ম্যাচ ধরে অপরাজিত ছিল দলটি, দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০২১ সালে ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা শিরোপা জিতেছিল আলবিসেলেস্তারা। নিকট অতীতের তুলনায় আর্জেন্টিনার স্কোয়াডও এখন অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ। সব মিলিয়ে ১৯৮৬ সালের পর আরও একবার সোনালী ট্রফি নিজেদের করে নেয়ার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী লাতিন আমেরিকার দেশটি।

বিশ্বজয়ের নেশায় উন্মত্ত আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে গতবারের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া, ফাইনালে ওঠার শেষ লড়াইয়ে লুকা মদ্রিচের দলের বিপক্ষে লড়তে হবে মেসিদের। নামের ভারে পিছিয়ে থাকলেও ইউরোপের দলটিকে ছোট করে দেখার কিছু নেই, ইতোমধ্যে আসরের অন্যতম ফেভারিট ব্রাজিলকে হারিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে তাঁরা।

কোয়ার্টার ফাইনালে নেইমার জুনিয়রদের হতাশা উপহার দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। নির্ধারিত নব্বই মিনিট গোলশূন্য ড্রতে শেষ হওয়ায় খেলা গড়িয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে। প্রথমে পিছিয়ে পড়লেও ম্যাচের প্রায় শেষদিকে সমতায় ফিরে ক্রোয়েশিয়া, শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় জয় তুলে নেয় দলটি।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ম্যাচের গল্পটাও প্রায় একই; ২-০ গোলে এগিয়ে থাকলেও শেষদিকে পর পর দুই গোল হজম করে টাইব্রেকার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় আর্জেন্টিনাকে। শেষ পর্যন্ত জয় পেলেও ডিফেন্স লাইন নিয়ে চিন্তা বেড়েছে কোচ লিওনেল স্কালোনির।

কখনও হাল না ছাড়ার মনোভাব সম্ভবত ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি। সময় যখন তাদের বিরুদ্ধে, ম্যাচের পরিস্থিতি যখন প্রতিকূলে তখনও ঘুরে দাঁড়াতে জানে দলটি। তাইতো টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের অবমূল্যায়ন করা আর্জেন্টিনার বিপদ বাড়াবে।

ব্যালন ডি’অর জয়ী প্লেমেকার লুকা মদ্রিচ ক্রোয়েশিয়া দলের চালিকা শক্তি, স্কোয়াডের অন্য সবার জন্য একটি অনুপ্রেরণা। ৩৭ বছর বয়সেও এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকা আর্মব্যান্ড হাতে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আপনিতেই জেগে ওঠে।

লিওনেল মেসির জন্য কাতারের এই বিশ্বকাপই ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্ব আসর; তাই তো ট্রফি জিততে মরিয়া হয়ে উঠেছে তিনি। শুধু মেসি নয়, দলের সবাই-ই এবার বিশ্বকাপ জিততে চান পিএসজি ফরোয়ার্ডের জন্য। তবে এমন প্রত্যাশার চাপও যেন হিতে বিপরীত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে ওতামেন্ডি, ডি পলদের।

আর্জেন্টিনার জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কার্ড নিষেধাজ্ঞা। হলুদ কার্ড দেখায় সেমিফাইনালে মাঠে নামতে পারবেন না দুই ফুলব্যাক মার্কোস অ্যাকুনা এবং গঞ্জালো মন্টিয়েল। ফলে ডিফেন্স লাইন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে লিওনেল স্কালোনিকে। লেফটব্যাক অ্যাকুনার অনুপস্থিতিতে ডিফেন্স লাইনের বামপাশে দেখা যাবে নিকোলাস ট্যাগ্লাফিকোকে, কিন্তু আক্রমণে অ্যাকুনার মত ততটা কার্যকরী নন তিনি।

এছাড়া অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার ফিটনেস নিয়েও রয়েছে সংশয়। টুর্নামেন্টের অধিকাংশ ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামা ডি মারিয়াকে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে শুরু থেকে পাওয়া যাবে কি না সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।

অবশ্য ইনজুরি কিংবা কার্ড নিষেধাজ্ঞা – এমন কোন সমস্যা নেই ক্রোয়েশিয়ার স্কোয়াডে, পূর্ণশক্তির দল নিয়েই তাই মেসিদের বিপক্ষে পরিকল্পনা সাজাতে পারবেন ক্রোয়াট কোচ জ্লাতকো ডালিচ। আর এই পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে থাকবে মেসিকে আটকানোর ছক, সেটা বোধহয় আলাদা করে বলার প্রয়োজন হয় না। উড়তে থাকা মেসিকে আটকাতে না পারলে আরো একবার ফাইনাল খেলার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে দলটির, সেটি ভাল করেই জানা আছে ক্রোয়াট কোচের।

কোয়ার্টার ফাইনালে দুই দলের ভাগ্যই নির্ধারিত হয়েছিল পেনাল্টি শুট আউটে। সেটির পুনরাবৃত্তি এবার অন্তত চাইবে না লাতিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়নরা। কেননা ক্রোয়েশিয়া টাইব্রেকারে হারতে জানে না, ২০১৮ এবং ২০২২ সালের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত চারবার টাইব্রেকার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে ক্রোয়েশিয়া; আর চারবারই শেষ হাসি হেসেছে লুকা মদ্রিচ, পেরিসিচরা।

আপাতত শুধু অপেক্ষা, অপেক্ষা দুই দলের মাঠে নামার। দুই দেশের দুই মহারথীয় লড়াই দেখার অপেক্ষায় আছে পুরো ফুটবল বিশ্ব। ব্রাজিলের বিপক্ষে যেভাবে একাই খেলা নিয়ন্ত্রণ করেছেন লুকা মদ্রিচ, তেমন পারফরম্যান্স আবারো দেখাবেন তিনি নাকি মেসি ছুটবেন আপন গতিতে? এমন প্রশ্নের জবাব একমাত্র সময়ই দিতে পারে, অঘটনের এই বিশ্বকাপে বাকি সব হিসেব-নিকেশ যে বড্ড অযৌক্তিক।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link