পাঁচটি নকআউট জিতেই ফাইনালে

ফেভারিট হিসেবেই এবার বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলো আর্জেন্টিনা। মেসির সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপে ক্ষুদে জাদুকরকে বিশ্বকাপ উপহার দেবার দায় ছিলো পুরো দলের। কিন্তু কোপা আমেরিকা আর ফাইনালেসিমা জেতা টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকা দল সৌদি আরবের কাছে হেরে বিশ্বকাপ শুরু করবে এটা ভাবেননি কেউ। কিন্তু এরপর যা করে দেখালো আলবিসেলেস্তেরা তা অনন্য। টানা ৫ ম্যাচ জিতে এবার শিরোপা মঞ্চে আলবিসেলেস্তেরা।

দুর্দান্ত ফর্মে থেকে কাতার পৌঁছেছিলো আর্জেন্টিনা। সম্ভবত সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থেকেই বিশ্বকাপে খেলতে আসা দল ছিলো আলবিসেলেস্তেরা। গতবছর মারাকানায় ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা জেতার পর, ইতালিকে বিধ্বস্ত করে জিতেছে ফাইনালেসিমার ট্রফিও। কিন্তু বিশ্বকাপে ইতিহাসেই সবচেয়ে বড় অঘটনের শিকার হলো তারা প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে।

অনুপ্রেরণা নেবার জায়গা ছিলো। ২০১০ সালেও যে স্পেন প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরেও জিতেছিলো শিরোপা। অনুপ্রেরণা নিলেই তো হবেনা। সেটি করে দেখাতে হতো আর্জেন্টিনাকে। এরপর সবগুলো ম্যাচেই খেলতে হয়েছে নকআউট হিসেবে। হারলেই ছিলো পা হড়কানোর ভয়। এমন চাপেও ভেঙে পড়েনি আর্জেন্টিনা। বরং ওমন চাপই যেন বের করে আনলো তাদের সেরাটা। কিংবা কে জানে, দলে মেসি থাকাটাই সেরাটা বের করে আনে আর্জেন্টিনার।

৩৫ বছর বয়সী মেসিও আছেন নিজের সেরা অবস্থানে। ফাইনালে তাই আর্জেন্টিনার পক্ষে বাজি ধরতে চাইবেন অনেকেই। প্রথম ম্যাচে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে হারলেই বিদায় নিশ্চিত হতো আলবিসেলেস্তেদের। কিন্তু মেসি ত্রাতা হয়ে এসেছিলেন সেদিন। এরপর পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর নেদারল্যান্ডস বাধা পেরিয়ে এবার গতবারের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে পৌঁছে গেলো ফাইনালে।

একজন মেসি দলকে কিভাবে অনুপ্রাণিত করতে পারেন তার প্রমাণও দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। পুরো দলটাই খেলছে মেসির জন্য, মেসিকে অমরত্বের পথে আরেকধাপ এগিয়ে নিতে। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৫ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় যৌথভাবে শীর্ষে আছেন মেসি। তবে শুধু গোল দিয়েও বোধহয় মেসির পারফরম্যান্স এর মূল্যায়ন করা যাবে না।

কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মলিনার গোলে করেন অতিমানবীয় এক এসিস্ট। এরপর সেমিতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আলভারেজের দ্বিতীয় গোলে আবারো সেই দুর্দান্ত প্লে মেকিং। মাঝমাঠ থেকে কাটিয়ে বল নিয়ে ডিবক্সে ঢুকে যে এসিস্ট মেসি করলেন তা বোধহয় শুধু মেসির দ্বারাই সম্ভব। এ দুটি এসিস্টকে এবার বিশ্বকাপের সেরা দুটি এসিস্ট বললেও বোধহয় ভুল হবে না একটুও। ৩৫ বছর বয়সী অন্য সব ফুটবলারদের ক্যারিয়ার ফর্ম যেখানে পড়তির দিকে সেখানে ক্যারিয়ারের সেরা অবস্থানে থেকে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন ৭ বারের ব্যালন ডি অর জয়ী এই মহাতারকা।

ভাগ্যও সাথেই ছিলো আর্জেন্টিনার। ঈশ্বরও হয়তো ক্ষুদে জাদুকরের হাতেই বিশ্বকাপ শিরোপাটা দেখতে চান। বিশ্বকাপে মোট ৪ টি পেনাল্টি পেয়েছে আর্জেন্টিনা। যা যেকোনো দলের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারের ভাগ্য পরীক্ষায়ও উতরে গেছে মেসিবাহিনী। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এত পাশাপাশি এমন ছোট ছোট ভাগ্যের ছোঁয়াও খুব করে প্রয়োজন বিশ্বকাপ জিততে।

সেমিফাইনাল শেষে মেসিও জানালেন প্রথম ম্যাচ হারের পর তাদের ‘রোলার কোস্টার’ যাত্রার কথা। বললেন, ‘পুরো স্কোয়াডকে নিজেদের শক্তি বোঝানোর জন্য সেটা অ্যাসিড টেস্ট ছিল। আমরা বাকি ম্যাচগুলো জিতেছি এবং যা করেছি তা খুবই কঠিন ছিল। সব ম্যাচই ফাইনাল ছিল এবং আমরা জানতাম যে, যদি আমরা জিততে না পারি তবে আমাদের জন্য সবকিছু জটিল হয়ে যেত। আমরা পাঁচটা ফাইনাল জিতেছি এবং আশা করি রবিবারের ফাইনালের ক্ষেত্রেও তাই হবে। প্রথম ম্যাচে আমাদের কিছু জিনিসের অভাব ছিল। তবে সেটা আমাদের আরও শক্তিশালী করেছে।’

প্রথম ম্যাচে ওমন হারের পর আর্জেন্টিনাকে নিশ্চয় শক্ত মানসিকতা আর ভেঙে না পড়ার চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েই এই পর্যন্ত আসতে হয়েছে। বিশ্বকাপ জিততে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি দরকার হয় ‘চ্যাম্পিয়নস লাক’ এর। সেই প্রাপ্য চ্যাম্পিয়নস লাক বোধহয় এবার মেসিদের সাথেই আছে। আর মেসি যদি ফাইনালেও এমন অতিমানবীয় ফর্মে থাকেন তাহলে ফাইনালে আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ খড়া ঘোচানোতে বোধহহয় বাঁধা হতে পারবে না কোনোদলই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link