সময়টা ২০১২। ক্ষুদে জাদুকর লিওনেল মেসির সাথে সেলফি তুলতে চাইলেন ১২ বছর বয়সী এক কিশোর। তখন নিশ্চয়ই ব্যালন ডি’অর জয়ী ক্ষুদে জাদুকরের পাশে একটা সেলফি তোলাটাই পরম আরাধ্য ছিল সেই কিশোরের। ১০ বছর পর কাতারের লুসাইল স্টেডিয়াম, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচ। মহাতারকা মেসির অ্যাসিস্টে গোল করে একই সাথে উদযাপন করেছেন সেই কিশোর। জুলিয়ান আলভারেজের এই গল্পটা রূপকথার গল্পের চেয়েও কোনো অংশে কম নয়।
কয়েক বছর আগেও চিত্রটা এমন ছিল যে মেসি একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন পুরো আর্জেন্টিনা দলকে। কিন্তু লিওনেল স্কালনির আমলে এই দলের চিত্রটা ভিন্ন। পুরো দলটি খেলছে তাদের মহাতারকা মেসির জন্য। বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল চলাকলীন বিখ্যার ধারাভাষ্যকার পিটার ড্রুরি তো বলেই দিলেন যে, ‘বিষয়টা এমন মেসি তার দলে ১০ জন দেহরক্ষী নিয়ে খেলছেন। সেই ১০ জন যেকোনো কিছু করতে পারে মেসির জন্য।’
সেই দশজনের সর্বকনিষ্ঠদের একজন জুলিয়ান আলভারেজ। ২২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড প্রায় একক দক্ষতায় এক অসাধারণ গোল করার পর লিওনেল মেসির এক অতি মানবীয় অ্যাসিস্ট থেকে করেন ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল।
আলভারেজের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ মেসিও। ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে সাফ জানিয়ে দিলেন, পুরস্কারটা আলভারেজেরই প্রাপ্য। কিন্তু ১০ বছর আগে কেবল মেসির ভক্তই ছিলেন আলভারেজ। সব আর্জেন্টাইনের মত আলভারেজের আইডলও ছিলেন মেসি। সেই আইডলের সাথে সেলফি তোলার পরই বোধহয় আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মাঠ মাতানোর স্বপ্নের বীজ বোনেন আলভারেজ।
একটা স্বপ্ন মানুষকে কোন জায়গা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে তার একটি প্রমাণ হয়ে থাকবে আলভারেজের দুটি ছবি। প্রথম ছবিটিতে দেখা যায় ১২ বছর বয়সী ভক্ত আলভারেজের সাথে ক্যামেরা বন্দী লিওনেল মেসিকে। আর পরের ছবিটিতে লুসাইল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে গোল করার পর আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে একই সাথে উদযাপন করছেন মেসি ও তাঁর সেই ভক্ত আলভারেজ।
সেমিফাইনাল ম্যাচের পর দুটি ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জুলিয়ান আলভারেজের জন্ম ২০০০ সালে। ২০১৪ সালে তিনি যোগ দেন স্থানীয় ক্লাব অ্যাটলেটিকো কালচিনের বয়স ভিত্তিক দলে। ২০১৬ সালে আলভারেজ যোগ দেন আর্জেন্টিনার বিখ্যাত ক্লাব রিভার প্লেটে। ২০১২ সালে মেসির সাথে প্রথম ছবিটি তোলার সময় কোনো ক্লাবের বয়স ভিত্তিক দলেও ছিলেন না। তাঁর ফুটবলার হবার যাত্রা শুরু হয় এরও দুই বছর পর।
জুলিয়ান আলভারেজ মূলত আলোচনায় উঠে আসেন গত মে মাসে কোপা লিবার্তাদোরেসে এক ম্যাচে ৬ গোল করে। এর আগেই জানুয়ারিতে আলভারেজের সাথে কথা বার্তা পাকা করে ফেলেছিল ম্যানচেস্টার সিটি। সার্জিও অ্যাগুয়েরোর উত্তরসূরি হিসেবে আলভেরেজকে বেশ মনে ধরেছিল পেপ গার্দিওলার। চলতি মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ২০ ম্যাচে ৭ গোল করেছেন আলভারেজ।
আর্জেন্টিনা দলে তার অভিষেক হয় জুন মাসে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে চিলির বিপক্ষে ম্যাচে। মূলত লাউতারো মার্টিনেজকে আর্জেন্টিনার প্রথম সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড হিসেবে ধরা হলেও পারফরম্যান্স দিয়ে দলে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন আলভারেজ। এবারের বিশ্বকাপে ইতোমধ্যেই করেছেন ৪ গোল। যা লিওনেল মেসির পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ম্যানচেস্টার সিটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নিজের নায়ক মেসিকে নিয়ে নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়েছিলেন আলভারেজ। বলেছিলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই তিনি আমার আদর্শ। আমার পরিবার আর আমার ভাইদেরও আদর্শ তিনি। আমাদের কাছে মেসি একজন নায়ক। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখছি জাতীয় দলে মেসির পাশে খেলব।’
সেই স্বপ্নের নায়ক মেসি আজ আলভারেজের সতীর্থ। যার অ্যাসিস্ট থেকে গোল করে একসাথে উদযাপনও করছেন আলভারেজ। ১০ বছর আগে নিশ্চয়ই এই ভাবনা থেকেও অনেক দূরে ছিলেন আলভারেজ। কিন্তু স্বপ্ন তো এমনই। স্বপ্ন মানুষকে কোথায় পৌঁছে দেয় তা ভাবনারও বাইরে।