বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে চারটি স্পেশাল পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড রেখেছিল বিসিবি। যোগ্যরাই সেটি পেয়েছেন, নাজমুল হোসেন শান্ত, শরিফুল ইসলাম, পারভেজ হোসেন ইমন ও রবিউল ইসলাম রবি। আমার খুব ভালো লাগত, কোনোভাবে যদি শামীম হোসেন পাটোয়ারিকেও একটি স্বীকৃতি দেওয়া যেত।
সেটি স্রেফ ফিল্ডিংয়ের জন্য। সাংবাদিকতায় আসার আগে ও পরে মিলিয়ে আমি যতদিন বাংলাদেশের ক্রিকেট দেখছি, কোনো একটি টুর্নামেন্টে এতটা ভালো ফিল্ডিং আমি আর কারও দেখিনি। একটি-দুটি ম্যাচ বলছি না, ধারাবাহিকভাবে আসর জুড়ে এরকম বিশ্বমানের ফিল্ডিং, আর কাউকে করতে দেখিনি।
অলক কাপালি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসার পর কিছুদিন দুর্দান্ত ফিল্ডিং করেছেন। বিশেষ করে বৃত্তের ভেতর। আমার চোখে ভাসে এখনও। আফতাব আহমেদও কিছুদিন দুর্দান্ত ফিল্ডার ছিলেন। নানা সময়ে আরও অনেকেই ভালো ফিল্ডিং করেছেন। কিন্তু শামীমের এই টুর্নামেন্টের ফিল্ডিং অন্য লেভেলের ছিল। বৃত্তের ভেতরে পয়েন্টে, সীমানায় কাভারে, মিড উইকেটে, স্কয়ার লেগে, অসাধারণ ফিল্ডিং করেছেন তিনি।
আজকে ফাইনালে একটা চার তিনি বাঁচালেন, টিভি পর্দায় হয়তো দেখা গেছে চার বাঁচানোর সময়ের প্রচেষ্টাটুকু। ডাইভ দেওয়ার টাইমিং একদম নিখুঁত, বল একটু বাজে বাউন্স করার পরও সেটির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বলকে থামানো, ডাইভের পর দ্রুত রিকভার করে থ্রো করা, সবই ছিল অবিশ্বাস্য। তবে টিভিতে হয়তো যেটা দেখা যায়নি, মাঠে থেকে যেটা দেখেছি, কতটা দ্রুত দৌড়ে শামীম বলের কাছে গেলেন। এতটা গতিময়তায় ছুটতে বাংলাদেশের আর কাউকে দেখেছি বলে আমার মনে পড়ে না। আফিফ হোসেন সম্পর্কে ক্রিকেটার-কোচরা সবাই বলেন যে তিনি প্রচণ্ড দ্রুত দৌড়ান। কিন্তু শামীমের এই গতির চেয়ে বেশি হবে বলে মনে হয় না।
শুধু এটিই নয় বা এই ম্যাচেই নয়, টুর্নামেন্ট জুড়ে যে লেভেলের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং তিনি দেখিয়েছেন, তাঁর গতি, গ্রাউন্ড কাভার করা, তার রিফ্লেক্স, তার পিক আপ, তার থ্রোয়িং, তার আত্মবিশ্বাস – সব মিলিয়ে এই লেভেলের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং আমি বাংলাদেশের আরও কারও দেখিনি।
এমনিতে এই টুর্নামেন্টে শামীমের কাছে আমার প্রত্যাশা ছিল ব্যাটিং নিয়ে বেশি। বোলিং নিয়ে খানিকটা। এই টুর্নামেন্টের ঠিক আগে, হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডের প্র্যাকটিস ম্যাচগুলিতে শামীম বোলারদের যাকে বলে পিটিয়ে ছাতু বানিয়েছেন। কয়েকটি ম্যাচে। এজন্যই আশা ছিল তাঁকে নিয়ে। এখানে শুরুটা ভালো করে পরে সেটা তিনি পারেননি। তবে ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটার হওয়ার সব উপকরণ তার ভেতরে আছে।
ব্যাটিংয়ে তার একটা সামর্থ্য আছে, যেটা বাংলাদেশে বিরল। তার মাসল পাওয়ার। গায়ের জোরে বড় শট খেলার ক্ষমতা। এরকম কাউকে সচরাচর আমরা পাই না। চোখ খুবই ভালো, লেংথ পড়তে পারেন একটু আগে। রিফ্লেক্স, ব্যাট স্পিড ভালো। চাবুকের মতো চালিয়ে দেন। পাশাপাশি তার অফ ব্রেকও বেশ কার্যকর। নতুন-পুরোনো, সব বলেই কাজে লাগানো যায় প্রয়োজনে।
অবশ্যই ব্যাট হাতে তাকে আরও কম্প্যাক্ট হতে হবে একটু, শট সিলেকশন আরও ভালো হতে হবে, রেঞ্জ বাড়াতে হবে। অনেক কাজ করতে হবে। তবে তাকে যদি গড়ে নেওয়া যায়, পথে রাখা যায়, তাহলে সীমিত ওভারের ভালো প্যাকেজ তিনি হতে পারেন ভবিষ্যতে। বিশেষ করে আমরা যে মিডল অর্ডারে একজন বিগ হিটার খুঁজছি, সেটির সমাধান হতে পারে তাকে দিয়ে।
আবারও বলছি, অনেক কাজ তাঁকে করতে হবে। উন্নতির পথ ধরে ক্রমাগত ছুটতে হবে। দেশের ক্রিকেটের দায়িত্ব আছে, তার নিজেরও দায়িত্ব আছে। নিবেদন, পরিশ্রম, মনোযোগ, ইচ্ছাশক্তি ধরে রাখতে হবে। কতটা পারবেন, সময়ই সেটা বলবে। তবে ফিল্ডিংয়ে এখনই তিনি বিশ্বমানের।
এই বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে অনেক কিছুই দারুণ উপভোগ করেছি। সেই তালিকায় আমার কাছে সবার ওপর শামীমের ফিল্ডিং।
– ফেসবুক থেকে