মেসি ও একটি লাল ফিতা

এ যেন বহুকালের তপস্যার ফল। তিনটে যুগ রীতিমত ঠেকেছে তিনটি ভিন্ন শতাব্দী। এতকাল পরে, অবশেষে বিশ্বকাপ জেতা গেল। বিশ্বসেরা হওয়া হল আর্জেন্টিনার। গেল প্রায় দেড়টা দশক ধরে যে মানুষটা এই পৃথিবীর প্রতিটা ফুটবল সমর্থকদের আনন্দে ভাসিয়েছে সে মানুষটার জীবন রইলো না আর অপূর্ণ। এই পৃথিবী নামক ছোট্ট গোলকটায় যা কিছু জেতা সম্ভব তার সবকিছুই ছোঁয়া পেয়ে গেছে ভিনগ্রহের ফুটবলারের।

তবে এই পথটুকু পারি দিতে কম কাঠখর পোড়াতে হয়নি। টানা তিনটি ফাইনাল হারার নিদারুণ কষ্ট সয়ে নেওয়ার মত ক্ষমতা সবার থাকে না। তবে মেসি কোন এক অদ্ভুত শক্তির বলে তা সয়ে গেছেন। বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। আবার স্বরুপে ফিরেছেন। ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে এসে পূর্ণতা দিলেন সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় মেসি। তবে ২০১৮ সালের পর থেকে তিনি একা লড়াই চালিয়ে যাননি। তাঁর সঙ্গী ছিল একটি লাল রঙা ফিতা।

২০১৮ সালের বিশ্বকাপটাও আর্জন্টিনা হাজির হয়েছিল, বিশ্ব জয়ের আশা নিয়ে। তবে সেবার অপ্রতিরোধ্য এক ফ্রান্সের কাছে হেরে বসেছিল আর্জেন্টিনা। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরও আরও একবার বিশ্ব জয়ের আক্ষেপ নিয়ে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা তথা লিওনেল মেসি। তবে সেবার এই লাল রঙের ফিতাও নিজের সাথে করেই নিয়ে গিয়েছিলেন মেসি।

রাশিয়া বিশ্বকাপে এক সাংবাদিক মেসিকে জানিয়েছিলেন তাঁর মা মেসির ভীষণ বড় ভক্ত। সেই সাংবাদিক বলেছিলেন, ‘আমার মা তোমাকে আমার থেকেও বেশি ভালবাসে। আমি তাঁর দেওয়া একটি লাল ফিতা নিজের সাথে নিয়ে ঘুরি, সৌভাগ্যর প্রতীক হিসেবে। তুমি যদি চাও, তবে আমি সেটা তোমাকে দিতে পারি।’

প্রতিউত্তরে মেসি বলেছিলেন, ‘হ্যা, অবশ্যই’। সেই সাংবাদিক রিবনটি দেওয়ার সময় অনুরোধ করেছিলেন যে, সেটি যেন মেসি সাবধানে রাখে। মেসি সেটা সাবধানেই রেখেছিলেন। মেসি সেটাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। বেঁধে রেখেছিলেন নিজের বাম পায়ের গোড়ালির কাছে। সেই বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গোল পাওয়ার পর সেই সাংবাদিকের পুনরায় মুখোমুখি হয়েছিলেন লিওনেল মেসি। তখন সেই সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘সম্ভবত তোমার মনে নেই, আমার মা তোমাকে একটা লাল রঙের ফিতা দিয়েছিল’।

মেসি তখন তাঁর পায়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘দেখো এটা’। সেই বিষয়টি বিস্ময়ের জন্ম দেয় সেই সাংবাদিকের জন্যে। তিনি অবিশ্বাসের সুরে বলেন, ‘এটা হতে পারে না, তুমি সত্যিই সেটা পরেছ!’ তারপর তিনি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘প্রিয় মা, মেসি সেটা পরেছে।’

এরপর থেকে মেসি সত্যিই বিশ্বাস করতে শুরু করেন সেই লাল ফিতাটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবেই মেনে নিয়ে পুরোটা সময় নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। এবারের বিশ্বকাপ জয়ের উদযাপনের সময় মেসির পায়ে সেই লাল রঙের রিবনটি দেখা গেছে। মেসির জন্যে সেই ফিতাটি সত্যিকার অর্থেই সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে এসেছে। এর আগে ২০১৪ সালেও মেসি উঠেছিলেন বিশ্বকাপের ফাইনালে। তবে সেবার অল্পের জন্যে জেতা হয়নি।

তবে এবার ছিল একেবারেই ভিন্ন এক গল্প। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারার পর, আর্জেন্টিনার প্রতিটা ম্যাচ বনে যায় নকআউট। সেই পরিস্থিতি টপকে ফাইনালে পৌঁছায় লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। এরপর ফাইনালে দারুণ এক লড়াইয়ে মেসি করেন দুইটি গোল। শেষ অবধি এক অপরিচিত মায়ের আশীর্বাদ কাজে লেগে যায়। মেসি জিতে ফেলেন আরাধ্য সেই বিশ্বকাপ ট্রফি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link