সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলারের তকমাটা পেয়েছিলেন আরো অনেক আগে। তবে বিশ্বকাপ জয় লিওনেল মেসির এই অর্জনকে নিয়ে গেছে সব সংশয় আর বিতর্কের উর্ধ্বে। ফুটবলের সম্ভাব্য সব শিরোপার মালিক লিওনেল মেসির দীর্ঘ সময়ের আক্ষেপ হয়েই ছিল বিশ্বকাপ। সেই আক্ষেপ ঝরেছে আনন্দের অশ্রু হয়ে, কাতার বিশ্বকাপ শেষে সোনালী ট্রফিটা উচিঁয়ে ধরেছেন তিনি।
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলারের বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন উদ্যোগ। সেই উদ্যোগে সামিল হয়ে কাতার ইউনিভার্সিটিও। বিশ্বকাপ খেলার সময় টিম হোটেলের যে কক্ষে মেসি থেকেছিলেন, সেটিকে ছোট একটি জাদুঘরে পরিণত করতে যাচ্ছে তারা।
বিশ্বকাপ খেলতে এসে কাতারের কোন বিলাসী পাঁচ তারকা হোটেলে নয়; আর্জেন্টিনা দল নিজেদের ক্যাম্প করেছিল কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। মূলত বিফ বারবিকিউ নিয়মিত খাওয়ার জন্যই এমন জায়গা বেছে নিয়েছে তারা। আর এই উদ্দেশ্যে সুদূর আর্জেন্টিনা থেকে দলটির জন্য মাংস নিয়ে আসা হয়েছিল। এমন কি সঠিকভাবে রান্নার জন্য রাখা হয়েছিল একজন বাবুর্চি।
আর্জেন্টাইন জাতীয় দলের থাকার জায়গাগুলো ছবির একটি সিরিজে নথিভুক্ত করেছে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়। এবং সেই সাথে ঘোষণা করেছে যে আলবিসেলেস্তা অধিনায়কের কক্ষটি শীঘ্রই একটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে। যদিও জাদুঘরটি একই ভবনে করা হবে নাকি ক্যাম্পাসের অন্য কোথাও তা এখনও জানা যায়নি।
কাতার বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো হয়নি আর্জেন্টিনার। টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর উদ্বোধনী ম্যাচেই সৌদি আরবের সাথে হোঁচট খায় তারা। র্যাংকিংয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকা দলরে বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ২-১ গোলে হেরে গিয়েছিল লিওনেল মেসিরা। কিন্তু এবারের বিশ্ব আসরে আর্জেন্টিনা যে হার মানতে আসে নি, তাই তো পিছিয়ে গিয়েও লড়াই করেছে।
মেক্সিকো আর পোল্যান্ডকে হারিয়ে শীর্ষস্থানে থেকেই গ্রুপ পর্ব শেষ করে আর্জেন্টিনা। এরপর রাউন্ড অব সিক্সটিনে অস্ট্রেলিয়াও পারেনি লাতিন আমেরিকার প্রতিনিধিদের থামাতে। কোয়ার্টার ফাইনালে শক্তিশালী নেদারল্যান্ডস কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও টাইব্রেকারের স্নায়ুযুদ্ধে ঠিকই হেরে গিয়েছে। সেমিফাইনালে লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়া তো দাঁড়াতেই পারেনি উজ্জীবিত আর্জেন্টিনার বিপক্ষে।
বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচেও নিজেদের দাপট অব্যাহত রেখেছিল টিম আর্জেন্টিনা। তবে ফ্রান্সের তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে প্রায় একাই ম্যাচটি টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন টাইব্রেকার পর্যন্ত। তবে শেষরক্ষা হয়নি, এমিলিয়ানো মার্টিনেজের দৃঢ়তায় জয় তুলে নিয়েছে ডিয়েগো ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা। সেই সাথে অবসান ঘটিয়েছে ৩৬ বছরের অপেক্ষার।
প্রথম ম্যাচে হার, এরপর একটানা পাঁচ ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপ জয়; খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্ব জয় – এ যেন অনন্য এক রূপকথা লিখেছিল লিওনেল মেসি ও তাঁর দল। দারুণ এই অভিযাত্রার স্মারকচিহ্ন হিসেবেই লিওনেল মেসির ব্যবহৃত ঘরটি সংরক্ষণ করে রেখে দিতে চায় কর্তৃপক্ষ। মূলত শিক্ষার্থী ও পরবর্তী প্রজন্মকে মেসির অর্জনের কথা মনে করিয়ে দিতেই এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তারা। এই কক্ষে আর কাউকে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে না; শুধুমাত্র দর্শকেরা ঘুরে দেখতে পারবেন চারপাশ।
ভক্তদের নানা কার্যক্রম সব সময়ই কানে আসে সুপারস্টারদের। আর তিনি যদি হন লিওনেল মেসি, তবে তো কথাই নেই; ভক্তের ভালবাসার গল্প শোনা তাঁর জন্য নিত্যদিনের ব্যাপার। তবু নিজের কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অনন্য উপায়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন নিশ্চিতভাবেই গর্বিত করবে লিওনেল মেসিকে; একই সাথে অনেকটা সময় মানুষের স্মৃতিতে থাকবে এই আর্জেন্টিনা দলটি।