মেসি কি রাষ্ট্রপ্রধান হবেন!

ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মত লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে ফুটবলকে ধর্মের পর আরেকটি ধর্ম হিসেবে মানা হয়; এই ফুটবল নিয়েই তাদের জীবন। এসব দেশ বিশ্বকাপ জয় করলে আনন্দের মাত্রাটা সীমা ছাড়ানোই স্বাভাবিক। এমনটাই ঘটেছে আর্জেন্টিনার ভাগ্যে; দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষা শেষে সোনালী ট্রফি ফিরেছে দেশটিতে। এরপরই পুরো দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে অদ্ভুত উন্মাদনা।

১৯৮৬ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ জেতানোর পর থেকে শুধুই স্বপ্ন দেখেছিল আর্জেন্টিনা, কিন্তু পূরণ হয়নি। কখনো হৃদয় ভেঙ্গেছিল কাছে গিয়েও কখনো আবার লজ্জা লুকাতে মুখ ঢাকতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপটা নিজেদের করে নিয়েছে দলটি; আর এর নেপথ্যে আছেন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি।

তাই তো লিওনেল মেসিকে নিয়েই মেতে আছে আর্জেন্টাইন ভক্ত-সমর্থকেরা। পূর্বের জনপ্রিয়তাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। এমনকি মেসি রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করলে কেমন ফলাফল হবে সেটি নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা। সেই সাথে অনুষ্ঠিত হয়েছে গণভোটও, যেখানে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা যাচাই করা হয়।

আর্জেন্টিনার গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান Giacobbe & Asociados একটি জরিপ আয়োজন করেছিল যেখানে মেসিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চায় কি না সেই মতামত জানানোর সুযোগ ছিল। প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত তথ্য মতে, ৪৩.৭ শতাংশ মানুষ লিওনেল মেসিকে রাষ্ট্র পরিচালকের আসনে দেখতে চান। অবশ্য ৩৭.৮ শতাংশ মানুষ মেসিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চান না। অন্যদিকে ১৭.৫ শতাংশ ভোটার বলছেন তাঁরা পরবর্তী সময়ে বিবেচনা করবেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে নিয়ে। বাকিরা এই বিষয়ে মতামত দেননি।

শুধু যে রাজনৈতিক পরিচয়ে লিওনেল মেসিকে দেখতে চান আর্জেন্টিনার নাগরিকেরা তেমনটি নয়, অন্য যেকোনো রাজনীতিবিদের চেয়ে তাঁকে এগিয়ে রাখছেন অধিকাংশ ব্যক্তিই। সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাভিয়ের মিলেইকে ১২ শতাংশ, ক্রিস্টিয়ানা ক্রির্চনারকে ১১.৩ শতাংশ, প্যাট্রিচিয়া বুলরিচকে ৮.৮ শতাংশ এবং মরিসিও মাসরিকে ৬.৯ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে। অথচ লিওনেল মেসি একাই দখল করেছেন ৩৬.৭ ভাগ নাগরিকের ভোট।

প্রেসিডেন্টের বাসভবন ক্যাসা রোসাডাতে শিরোপা উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েও নিজেদের মতামত দিয়েছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে দেশে আসার পর খোলা বাসে প্যারেড করে জনগণের সাথে একত্রে উল্লাস করলেও রাষ্ট্রপতির সাথে আনুষ্ঠানিক কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।

প্রায় ৮২.৯ ভাগ মানুষই মনে করেন ক্যাসা রোসাডাতে খেলোয়াড়দের না যাওয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। তাঁদের মতে, খেলাধুলা বা খেলোয়াড়দেরকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ না করানো ভাল। অন্যদিকে ১৫.৮ শতাংশ জানিয়েছেন ঠিক বিপরীত সিদ্ধান্ত। তারা মনে করেন এমন একটি বৈশ্বিক অর্জনের পর সরকারিভাবে একটি আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা অন্তত লিওনেল মেসিদের প্রাপ্য। বাকি ১.৪ ভাগ জরিপকারীরা এই ব্যাপারে কিছু বলেননি।

শুধু রাজনীতি নয়, আলোচনা হয়েছে খেলা সম্পর্কেও। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের পরবর্তী মেসি বা ভবিষ্যৎ পোস্টার বয় হবেন কোন খেলোয়াড় হবেন সেটি নিয়ে ছিল প্রশ্ন। জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশই এমন প্রশ্নে বলেছেন জুলিয়ান আলভারেজের নাম। ম্যানসিটিতে খেলা এই স্ট্রাইকার ইতোমধ্যে নিজের সামর্থ্যের ঝলক দেখিয়েছেন। আবার কয়েকজন এনজো ফার্নান্দেজের নামও বলেছেন। আর বাকিরা চুপ থেকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে এখনো তেমন কাউকে তারা যোগ্য ভাবছেন না।

ফুটবল ক্যারিয়ার শেষে অনেক কিংবদন্তি বেছে নিয়েছন কোচিং পেশা অথবা দায়িত্ব নিয়েছেন কোন ক্লাব ম্যানেজম্যান্টের। লিওনেল মেসিও হয়তো সেই পথে হাঁটবেন; তবে এই জরিপের ফলাফল দেখলে হয়তো রাজনীতিতে যোগ দেয়ার কথাও মাথায় আসতে পারে এই সুপারস্টারের। কি জানি, ভবিষ্যতে একদিন লিওনেল মেসিকে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট পদে দেখা যেতেও পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link