আমিরের ফেরার দুয়ার খোলা

২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল; বাঁ-হাতি এক পাকিস্তানি পেসারের সামনে সেদিন রীতিমতো হাস ফাঁস করছিল ভারতের বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা। এই বোলারের ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচের স্পেলটি নির্বাচিত হয়েছিল দশকের সেরা বোলিং স্পেল হিসেবে। নিঁখাদ ক্রিকেটপ্রেমী হলে সেই দ্বৈরথ স্মৃতিতে আছে নিশ্চয়; লর্ডসের মাঠে ভারতীয় দম্ভ চূর্ণ করে দেওয়ার নায়ককে মনে আছে?

আছে হয়তো, মোহাম্মদ আমিরই সেদিন বল হাতে আবির্ভূত হয়েছিলেন রূদ্রমূর্তি হয়ে। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নামা ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ তাঁর এক স্পেলেই ভেঙে যায়। কার্যত সেখানেই ম্যাচটা জিতে নিয়েছিল পাকিস্তান।

সে সময় এই বাঁ-হাতির বয়স ছিল মাত্র পঁচিশ বছর। অথচ বছর তিনেক পরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন তিনি। না, বড় কোন ইনজুরিতে পড়তে হয়নি তাঁকে, বল হাতে আগের সেই দ্যুতি না থাকলেও অধিনায়কের ভরসা হয়েই ছিলেন।

নিজের অকাল অবসরের কারণ প্রকাশ করে অবশ্য ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন মোহাম্মদ আমির। জানিয়েছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)-এর কাছ থেকে মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন তিনি। পিসিবির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান রমিজ রাজার সাথে তাঁর দ্বন্দের কথাও একেবারে জনসম্মুখে চলে আসে। সব মিলিয়ে গত প্রায় দুই বছর ধরেই জাতীয় দলের বাইরে এই পেসার।

তবে পিসিবির সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রকের পদ থেকে রমিজ রাজা সরে যেতেই নতুন আশার আলো জেগেছিল আমির ভক্তদের হৃদয়ে। আর এবার এসেছে স্বস্তির খবর, নতুন বোর্ড চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি জানিয়ে দিয়েছেন যে মোহাম্মদ আমির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে চাইলে বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন প্রকার বাঁধা দেয়া হবে না। ইতোমধ্যে এই অভিজ্ঞ পেসারকে ন্যাশনাল হাই পারফরম্যান্স সেন্টারে অনুশীলন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

পিসিবির বর্তমান চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সে (মোহাম্মদ আমির) যদি পাকিস্তান জাতীয় দলে খেলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চায় আমি আটকাবো না।’

মোহাম্মদ আমিরের ক্যারিয়ারে বিতর্ক এর আগেও ছিল। তরুণ বয়সেই ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলার সময় স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে এটির জন্য পেতে হয়েছে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা; দিতে হয়েছে জরিমানা এমনকি জেলেও যেতে হয়েছে তাঁকে। তবে নাজাম শেঠি এ ব্যাপারে আমিরের পক্ষ হয়েই কথা বলেছেন।

পিসিবি চেয়ারম্যান জানান যে, ‘একজন খেলোয়াড় যে তার অপরাধ স্বীকার করেছে, আইসিসিকে ম্যাচ ফিক্সিং এবং দুর্নীতি বন্ধ করতে সাহায্য করেছে এবং শাস্তি স্বরূপ পাঁচ বছর ক্রিকেটের বাইরে ছিল সে অবশ্যই পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ প্রাপ্য।’

ঠিক এই ব্যাপার নিয়েই মোহাম্মদ আমির এবং রমিজ রাজার মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। সাবেক পিসিবি চেয়ারম্যান বিশ্বাস করেন যে, ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে শাস্তি পাওয়া খেলোয়াড়দের পুনরায় জাতীয় দলে খেলার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। আর রমিজ রাজার এই মতবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন নাজাম শেঠি।

৭৪ বছর বয়সী এই ক্রিকেট সংগঠক বলেন , ‘মোহাম্মদ আমির মনে করে সাবেক নির্বাচক কমিটি এবং চেয়ারম্যান রমিজ রাজা সহ পিসিবির অন্যরা তাঁর সাথে সঠিকভাবে আচরণ করেনি। রমিজ রাজা ভাবেন যে-ই ক্রিকেটার দুর্নীতি করেছে তাঁকে আর কখনোই পাকিস্তানের হয়ে খেলতে দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু এটা আমার দৃষ্টিভঙ্গি নয়! আমি বিশ্বাস করি যে শাস্তি পেয়েছে তাঁকে আবারো পাকিস্তান দলে ফিরে আসতে দেওয়া যায়।’

মোহাম্মদ আমিরের এক সময়কার সতীর্থ ওয়াহাব রিয়াজও মনে করেন খুব শীঘ্রই পাকিস্তানের জার্সি গায়ে জড়াবেন মোহাম্মদ আমির। এই বাঁ-হাতির ভক্তরাও তেমনটাই প্রত্যাশা করছেন। তিনি ফিরলে নিশ্চিতভাবেই বাবর আজমদের বোলিং শক্তি আরো বাড়বে; তরুণরাও শিখতে পারবে অনেক কিছু। আপাতত প্রয়োজন মোহাম্মদ আমিরের সদিচ্ছা আর জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার মত পারফরম্যান্স করতে পারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link