বিপিএল শুরু হবার আগে একটি অনুষ্ঠানে মিরাজকে দিয়ে ওপেন করানোর কথা বলেছিলেন সাকিব। ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান সেদিন হয়তো নেহায়েত দুষ্টুমির ছলেই কথাটা বলেছিলেন। ওপেন না করালেও মেহেদী হাসান মিরাজকে ব্যাটিং অর্ডারে ঠিকই প্রমোশন দিয়েছেন সাকিব।
এমনকি রংপুরের বিপক্ষে বিগ ম্যাচে সাকিব নিজে না নেমে আগে মিরাজকে পাঠিয়েছেন। চার নাম্বারে ব্যাট করতে নামা মিরাজ তাঁর প্রতিদানও দিয়েছেন। দলকে জয়ের মঞ্চ গড়ে দিয়েছেন ব্যাট হাতে।
মেহেদী হাসান মিরাজ অলরাউন্ডার। তিনি যতটা ভাল বোলার, ব্যাটিংটাও ঠিক ততটাই ভাল পারেন। একথা সবাই জানে, সবাই মানেও। এই কথা মিরাজ প্রমাণ করেছেন অসংখ্যবার। বেশিদূর যেতে হবে না। স্রেফ ভারতের বিপক্ষে সিরিজটা মনে করুন। ব্যাট হাতে, বল হাতে মিরাজ পারফর্ম করেছেন সমানতালে।
মিরাজ ব্যাট হাতে রান করতে জানেন, তবে সেই সুযোগটা তিনি খুব কমই পান। বাংলাদেশ দলে তাঁর উপরের দিকে খেলার সুযোগ হয় না। ব্যাট করতে হয় সাত কিংবা আট নাম্বারে। সেখান থেকেও চেষ্টা করেন নিজের সর্বোচ্চটা দেয়ার। এমন কি ঘরোয়া ক্রিকেটেও নানা অজুহাতে মিরাজের উপরে খেলা হয় না।
বিপিএলেও মিরাজকে খেলতে হয় একজন বোলার হিসেবেই। এই যেমন সিলেটের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মিরাজ ব্যাট করতে নেমেছিলেন আট নাম্বারে। আর সেখান থেকে আজ সাকিব তাঁকে নামিয়েছেন চার নাম্বারে। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। যেখান থেকে মিরাজ ব্যর্থ হলে ম্যাচ হারতে হত বরিশালকে। দায়টা তখন সাকিবকেই নিতে হত।
অধিনায়ক সাকিব ভরসা রেখেছেন। মিরাজের উপরই বাজি ধরেছেন। গত ম্যাচে তিনি নিজেও দারুণ ব্যাটিং করেছেন। তবুও আগে ব্যাট করতে পাঠিয়েছেন মিরাজকে। এতটা সম্মান, এতটা বিশ্বাস, এতটা ভরসা মিরাজ ফিরিয়ে দিবেন কী করে। মিরাজ খেললেন ম্যাচ জেতানো ইনিংসই।
মিরপুরে মাত্র ২৯ বল থেকে করলেন ৪৩ রান। ব্যাটিং করেছেন প্রায় দেড়শ ছুঁই ছুঁই স্ট্রাইক রেটে। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে পাঁচটি চারও। তাঁর এই ৪৩ রানের ইনিংসে জয় নিশ্চিত হয়েছে বরিশালের। আর ব্যাটিং করতে নামতে হয়নি সাকিবকে। এই আসরে এটাই প্রথম জয় সাকিবদের।
আর এই জয়ের নায়কও মেহেদী হাসান মিরাজ। কেননা যে জায়গাটায় তিনি সব সময়ই প্রমাণ করেন সেখানে আজও করেছেন। ব্যাট হাতে ৪৩ রান করার আগে বল হাতেও ছিলেন অনবদ্য। যদিও অধিনায়ক সাকিব আজ মিরাজকে একটু দেরিতেই বোলিংয়ে এনেছিলেন।
ইনিংসের দশম ওভারে প্রথম বোলিং করতে আসেন মিরাজ। এরপর টানা চার ওভার করান মিরাজকে দিয়ে। আর মিডল ওভারে মিরাজ দিয়েছেন নিজের সেরাটাই। আঁটকে রেখেছেন রংপুরের রানের চাকা।
বল হাতে মিরাজ চার ওভার করে খরচ করেছেন মাত্র ২১ রান। তুলে নিয়েছেন দুটি উইকেটও। টানা চার ওভারের এই স্পেলে মিরাজ ওভার প্রতি খরচ করেছেন মাত্র ৫.২৫ রান করে। তাঁর এমন কিপ্টে বোলিংয়েই মাঝের ওভার গুলোতে চাপে পড়ে গিয়েছিল রংপুর রাইডার্স। সেখান থেকে আর ফিরে আসতে পারেনি দলটি।
ম্যাচ শেষে ব্যাট হাতে ৪৩ রান আর বল হাতে দুই উইকেট। একেবারে জেনুইন অলরাউন্ডার যতটা ইমপ্যাক্ট রাখতে পারেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে, ততটাই রেখেছেন মিরাজ। অধিনায়ক সাকিবের আস্থা পাওয়া তো আর সহজ কথা নয়।