সম্প্রতি পর্তুগালের কোচ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন রবার্তো মার্টিনেজ। এর আগে কাতার বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের ডাগআউট সামলেছিলেন এ কোচ। বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের ভরাডুবি হওয়ার পরই তিনি কোচের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন।
তবে তার মাস খানেক না গড়াতেই এবার ফার্নান্দো সান্তোসের স্থলাভিষিক্ত হয়ে পর্তুগালের কোচ হিসেবে আসছেন তিনি। আগামী ২৩ মার্চে লিচেনস্টাইনের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে পর্তুগাল ডাগআউটে অভিষেক হবে ৪৯ বছর বয়সী স্প্যানিশ এ কোচের।
নতুন কোচ হিসেবে রবার্তো মার্টিনেজ পর্তুগালে এসেই যে খুব স্বস্তিতে থাকবেন তা নয়। তাঁর কাধেই এখন পর্তুগালকে ঢেলে সাজানোর গুরুদায়িত্ব। শেষ ৮ বছরে ফার্নান্দো সান্তোসের অধীনে খেলেছে রোনালদো, ব্রুনো ফার্নান্দেজরা।
সান্তোসের ট্যাক্টিসে অভ্যস্ত হওয়া দলটার সাথে এখন মার্টিনেজ কিভাবে খাপ খাইয়ে নিবেন সেই চ্যালেঞ্জ তাঁর জন্য অবধারিতভাবেই থাকছে। তাছাড়া নতুন দায়িত্বের এ পথযাত্রায় সামনে আরো অনেক প্রতিকূলতা অপেক্ষা করছে রবার্তো মার্টিনেজের জন্য। এক নজরে সেই সব বিষয়াদি নিয়েই বিশ্লেষণ করা যাক।
- পর্তুগালের সাথে রোনালদোর যাত্রা
রবার্তো মার্টিনেজের জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোনালদো ৩৮ পেরিয়ে ৩৯-এ পা দিবেন। এখন এই বয়সে এসে তিনি দলের জন্য কেমন প্রভাব ফেলবেন সেটা বেশ প্রশ্ন সাপেক্ষ। ২০২৬ বিশ্বকাপে তাঁকে দেখা রীতিমত অসম্ভবই বলা চলে।
এখন পর্তুগালের এই দলটাই তৈরি করা হবে সামনের বিশ্বকাপের লক্ষ্য নিয়ে। এখন মার্টিনেজের পরিকল্পণায় রোনালদো আদৌতে আছেন কিনা সেটা এখনও অজানা। তবে রোনালদো ইস্যুতে বেশ বড়সড়ো একটা চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়বেন রবার্তো মার্টিনেজ।
কারণ, রোনালদোকে দলে রাখার ব্যাপারে তিনি পরিকল্পনা আঁটলে তাঁর জায়গায় তরুণ খেলোয়াড় আসার পথটা বন্ধ হয়ে যাবে। যা ভবিষ্যৎ দল গঠনের ক্ষেত্রে একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর সবচাইতে বড় যে বিষয়টা, ইউরোপে এখন প্রেসিং ফুটবলের জোয়ার বইছে। এই বয়সে এসে প্রেসিং ফুটবলে রোনালদো ঠিক এই ঘরানার ফুটবলে তটস্থ হয়ে উঠতে পারেননি।
এই এক কারণেই ম্যানইউতে তিনি শেষ মৌসুমে বেশিরভাগ সময়েই বেঞ্চে বসে কাটিয়েছেন। তাছাড়া, রোনালদো এখন ইউরোপ ছেড়ে ক্লাব ফুটবল ছেড়ে আল নাসেরে যোগ দিয়েছেন। অর্থাৎ ক্লাব ফুটবলে শেষের শুরুটা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে সিআরসেভেনের। এখন মার্টিনেজের অধীনে পর্তুগালের হয়ে রোনালদোর ভবিষ্যৎ কতদূর এগোয় সেটাই দেখার পালা।
- নান্দনিক ফুটবল খেলা
রবার্তো মার্টিনেজের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো ফার্নান্দো সান্তোসের উত্তরসূরি হওয়া। কারণ পর্তুগাল তাদের ইতিহাসে দুটি মেজর শিরোপা জিতেছিল সান্তোসের অধীনে। এখন সেই ধারাটা ধরে রাখতে পারবেন তো মার্টিনেজ? এমনিতে স্প্যানিশ এ কোচের প্লেয়িং স্টাইল বেশ নান্দনিক।
প্রতিপক্ষ বুঝে তিনি লাইনআপ সাজান। এমনিতে তিন সেন্টারব্যাক নিয়ে তিনি দল সাজাতে পছন্দ করেন। আর মিডে একজন ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডার দিয়ে আক্রমণভাগ সাজান। এখন দেখার পালা, পর্তুগাল তাঁর এই ট্যাকটিসে ঠিক কেমন সফল হয়।
- পেপের রিপ্লেসমেন্ট বের করা
৩৯ বছর বয়সে এসেও পর্তুগালের ডিফেন্স লাইনআপে অন্যতম ভরসার নাম পেপে। তবে বয়সের ভারে আগামী বিশ্বকাপে তাঁকে দলে পাওয়াটা বেশ কঠিন। কিন্তু সমস্যা হলো, তাঁর রিপ্লেসমেন্টও তেমন নেই। এখন নতুন কোচ হিসেবে রিপ্লেসমেন্টটাই খুঁজে বের করতে হবে মার্টিনেজকে।
পেপের জায়গায় তিনি এখন দলে টানার জন্য চোখ রাখতে পারেন বেনফিকার আন্তোনিও সিলভা, পোর্তোর ডেভিম কার্মো ও ফ্যাবিও কার্দাসোর উপর। মূলত তাদেরকেই আগামী বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করতে হবে রবার্তো মার্টিনেজকে।
- জাও ফেলিক্সের সেরাটা বের করা
পর্তুগালের এই দলটায় দারুণ সম্ভাবনাময় একজন ফুটবলার হচ্ছেন জাও ফেলিক্স। কিন্তু এখন পর্যন্ত পর্তুগালের হয়ে তিনি তাঁর সেরাটা দেখাতে পারেননি। কিংবা ফার্নান্দো সান্তোস তাঁর সেরাটা বের করে আনতে পারেননি। এখন সান্তোসের না পারা কাজটাই করে দেখাতে হবে মার্টিনেজকে। কারণ ঠিকঠাক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে এই ফেলিক্সই আগামী বিশ্বকাপে বাজির ঘোড়া হতে পারেন।
- তরুণদের দলে ভেড়ানো
২০২১ সালে অনূর্ধ্ব-২১ চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্সআপ হয়েছিল পর্তুগাল। এ ছাড়া ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়শীপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পর্তুগিজরা। বুঝাই যাচ্ছে, আগামীর ফুটবলে রাজ করবে এই পর্তুগিজরাই। তাই স্প্যানিশ এ কোচের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, বয়সভিত্তিক দল থেকে সেরা ফুটবলারদের বের করে আনা। একই সাথে, তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে দল গড়ার চ্যালেঞ্জ তো থাকছেই।
- প্লে-অফ এড়ানো
এই মুহুর্তে পর্তুগালকে ইউরোপের একটি বড় দলই বলা যায়। কিন্তু শেষ ৪ বিশ্বকাপের ৩ বারই পর্তুগালকে প্লে-অফ খেলে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে হয়েছে। এখন রবার্তো মার্টিনেজের চ্যালেঞ্জ হলো, এই প্লে-অফের ভাগ্য এড়ানো। কারণ এই দলটার যেমন রসদ রয়েছে তাতে তারা সরাসরিই বিশ্বকাপ খেলার সক্ষমতা রাখে।
পর্তুগালের কোচের দায়িত্ব পাওয়ার দিনে রবার্তো মার্টিনেজ বলেছেন, আমাদের অবশ্যই বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। কথাতেই পুরস্কার, দারুণ কিছু করার স্বপ্ন নিয়েই তিনি এ দলের দায়িত্ব নিয়েছেব। এখন দেখার পালা, এই যাত্রাটা তাঁর কতটা রঙিন হয়। ধূসর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে বটে। তবে তার বিপরীতে বড় কিছু করে দেখানোর সক্ষমতাও রয়েছে মার্টিনেজের। ভুলে গেলে চলবে না, বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মের কোচ তো তিনিই ছিলেন।