কুমিল্লার ইনিংসের তখন ১৪ তম ওভারের খেলা চলছিল। বোলিং প্রান্তে ছিলেন ইফতিখার আহমেদ আর অন স্ট্রাইকে ব্যাটিংয়ে ছিলেন জাকের আলী। সে ওভারের দ্বিতীয় বলে জাকেরের ব্যাটে বল সংযোগ না হয়ে বল লাগে প্যাডে। ইফতিখার যথারীতি আউটের আবেদন জানালেন। আর সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই অনফিল্ড আম্পায়ার তর্জনী উচিয়ে জানিয়ে দিলেন, সেটি আউট।
আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে বেশ অবাক বনেই যান জাকের আলী। অপর প্রান্তে থাকা খুশদিল শাহকে আকার ইঙ্গিতে বুঝাচ্ছিলেন, ডেলিভারিটা পিচিং আউট সাইডে থাকতে পারে। খুশদিল শাহও ঠিক তেমনটাই মনে করলেন। তাই জাকের আলী তৎক্ষণাৎ এডিআরএস-এর শরণাপন্ন হলেন।
বিপিএল জুড়ে এডিআরএস অনেকটা সার্কাসেই পরিণত হয়েছে। বিপিএলে বেশ কিছু বিতর্কের মধ্যে এই এডিআরএস বিতর্কই বেশি সমালোচনার যোগান দিয়েছে। তারপরও জাকের ক্ষীণ আশা নিয়ে এডিআরএসের সিদ্ধান্তের দিকেই চেয়ে রইলেন।
টিভিতে রিপ্লে দেখানো শুরু হলো। সেখানে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছিল, ইফতিখার আহমেদের করার বলটা পিচিং আউটসাইড লেগ বরাবর ছিল। এলবিডব্লিউ-এর নিয়ম বলে, বল লেগ স্ট্যাম্প বরাবর পিচিং আউটসাইড হলে ব্যাটার আউট হবেন না। এমনকি বল যদি ঐ অবস্থায় টার্ন করে উইকেট বরাবরও যায় তারপরও ব্যাটার আউট হবেন না। অর্থাৎ অনফিল্ড আম্পায়ারের দেওয়া সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল।
কমেন্ট্রি বক্স থেকে সেটাই বারবার শোনা যাচ্ছিল। জাকেরের রিভিউতে যাওয়া যে বেশ ভাল সিদ্ধান্ত ছিল সেটাও ধারাভাষ্যকররা বলছিলেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে থার্ড আম্পায়ার জানিয়ে দেন, অনফিল্ড আম্পায়ারের দেওয়া সিদ্ধান্তটাই সঠিক।
এমন সিদ্ধান্তে রীতিমত অবাক বনে যান ধারাভাষ্যকররাও। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে শামীম আহমেদ তো বলেই দিলেন, ‘আই এম স্পিচলেস। আই হ্যাভ নো ওয়ার্ডস।’
অনফিল্ডে থাকা আম্পায়ার সিদ্ধান্ত ভুল দিতেই পারেন। কিন্তু থার্ড আম্পায়ার এত স্পষ্ট টিভি রিপ্লে দেখার পরও কিভাবে সেটিকে আউট বলে রায় দেন? প্রশ্নটা এখানেই। বাংলাদেশি আম্পায়ারদের মান নিয়ে বহু কথা হয়েছে। কিন্তু বল লেগে পিচিং আউটসাইড হলে সেটি যে আউট হন না- সেটি তো আম্পায়ারদের সিলেবাসের বাইরের বিষয় না। খুবই বেসিক একটি বিষয়।
এখানে একটা প্রশ্ন আসতে পারে, জাকের আলীর আউটে আম্পায়ার্স কলের কোনো বিষয় লুকিয়ে থাকতে পারে কিনা। কিন্তু আইসিসি’র নিয়মে বল পিচিংয়ের ক্ষেত্রে আম্পায়ার্স কলের কোনো নিয়ম নেই। আম্পায়ার্স কলের নিয়ম আছে বল ইম্প্যাক্টের ক্ষেত্রে, বল উইকেটে হিট করছে কিনা সে সব ক্ষেত্রে। কিন্তু বল পিচিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম নেই। এ ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, যদি উইকেট লাইনের ভিতরে বলের ৫০ শতাংশের বেশি অংশ পিচ করে তাহলে সেটি বিবেচিত হবে।
কিন্তু জাকের আলীর ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ তো দূরে থাক, ৯৯ শতাংশ উইকেট লাইনের বাইরে পিচ করেছে। তাই একদম সাধারণভাবেই জাকের আলী আউট হননি।
হ্যাঁ। থার্ড আম্পায়ার এখানে বেনিফিট অফ ডাউট বলে রায় দিয়ে পার পেয়ে যেতেই পারেন। কিন্তু অনফিল্ড থেকে এডিআরএসের মাধ্যমে যাওয়া মানেই থার্ড আম্পায়ার এখানে সর্বেসবা। কিন্তু সেই তিনি যদি একদম সাধারণ, স্বচ্ছ বিষয় ঘোলাটে করে সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন তাহলে থার্ড আম্পায়ারের কার্যকারিতা নিয়ে নিশ্চিতভাবেই প্রশ্ন ওঠে।
প্রশ্নটা হলো,দায়টা আম্পায়ারের নাকি ডিআরএসের সীমাবদ্ধতার? প্রথমত, এডিআরএসের সীমাবদ্ধতা থাকলেও জাকের আলীর ক্ষেত্রে টিভি রিপ্লেতে বল কোথায় পিচ করেছে, কতটুকু করেছে তার সবটাই দেখিয়েছে। এখন পরের সিদ্ধান্তটা তো আম্পায়ারকে নিতে হবে। তাই দায়টা এখানে তৃতীয় আম্পায়ারের।
তৃতীয় আম্পায়ারের এমন বাজে সিদ্ধান্ত অবশ্য এবারের বিপিএলে এটাই নতুন নয়। সৌম্য সরকার, এনামুল হক বিজয়ের আউট নিয়েও এর আগে বিভ্রান্তি হয়েছে। দিনশেষে, এসব ক্ষেত্রে এডিআরএসের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু দেশি মানহীন আম্পায়ারদের যে অনেকটা দায় আছে এ সব ক্ষেত্রে, সেটিও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আউট বিভ্রাট, বিতর্ক- এসব কিছুই হচ্ছে আম্পায়ারদের হাস্যকর ভুলের কারণে।