ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে বিশ্বজয়। এরপর দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষা। কাতার বিশ্বকাপে এসে সেই অপেক্ষা অবশেষে ফুরোলো। ম্যারাডোনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতালেন লিওনেল মেসি।
যা এতদিন ছিল অধরা, আরাধ্য, সেই সোনালি ট্রফি পেয়ে বাঁধন হারা আনন্দে মেতে উঠেছিল গোটা আর্জেন্টিনা। কিন্তু মেসি, এমিলিয়ানো মার্টিনেজদের অতিরঞ্জিত সেই উৎসবই তাদের জন্য বোধহয় কাল হয়ে আসছে। দৃষ্টিকটু উদযাপনের জন্য ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি থেকে নেমে আসতে পারে শাস্তির খড়গ।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পথটা মোটেই সহজ ছিল না। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে প্রায় প্রত্যেকটি ম্যাচই তাদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় নকআউট পর্ব। হারলেই বাদ, এমন সমীকরণে আলবিসেলেস্তারা অবশ্য ঠিকই সব পথ ডিঙ্গিয়ে ফাইনালে উঠেছিল।
আর সেই ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ফ্রান্স। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার আধিপত্য দেখে অবস্থাদৃষ্টে একপেশে এক ফাইনালে দেখতে বসেছিল সবাই। কিন্তু প্রথমার্ধে দুই গোল হজম করা ফ্রান্স পাল্টে যায় ম্যাচের ৭০ মিনিটের পর থেকে।
পেনাল্টি থেকে প্রথমে একটি গোল শোধ করেন এমবাপ্পে। আর এর কয়েক সেকেন্ড বাদেই দুর্দান্ত এক ভলিতে আরো একটি গোল করে বসেন এমবাপ্পে। সমতায় ফেরে ফ্রান্স। আর এরপরের ম্যাচের রঙ পাল্টে যায়। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে ২-২ গোলে সমতায় থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে।
অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলার আবার ১০৮ মিনিটে মেসির গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু ম্যাচ সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। চূড়ান্ত নাটকীয়তা অপেক্ষা করছিল ১১৮ মিনিটে। আবারো পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। স্পটকিক থেকে গোল করতে ভুল করেননি এমবাপ্পে। ফ্রান্সকে আবারো ম্যাচে ফেরান তিনি। ১২০ মিনিটে ৩-৩ গোলে শেষ হওয়া ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর সেখানেই আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মার্টিনেজের বীরত্বে বিশ্বকাপ জিতে নেয় আলবিসেলেস্তারা।
এমন স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচ জেতার পর স্বভাবতই উচ্ছ্বাস উন্মাদনায় ভেসে যান মেসি, মার্টিনেজরা। তবে এর মধ্যে গোলরক্ষক এমি মার্টিনেজ দৃষ্টিকটু একটি কাজ করে বসেন। সেরা গোলরক্ষকের গোল্ডেন গ্লাভস অ্যাওয়ার্ড নিতে গিয়ে ফ্রান্স ডাগআউট মুখো করে করে বসেন অশালীন এক অঙ্গভঙ্গি। আর সেখান থেকেই শুরু হয় সমালোচনায় সূত্রপাত।
মার্টিনেজ আবারো সেই বিতর্ক আরো উষ্কে দেন আর্জেন্টিনায় বাসে করে উদযাপনের সময়। সে সময় এমবাপ্পের চেহারা সম্বলিত এক পুতুল নিয়ে তিনি মক করতে থাকেন। মার্টিনেজের এমন দৃষ্টিকটু সেলিব্রেশন স্বাভাবিকভাবেই অনেকে ভালভাবে নেননি। অবশ্য এমবাপ্পে এ ব্যাপারে তেমন প্রতিক্রিয়াই জানাননি।
তবে ফিফা ঠিকই এবার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। সবশেষ খবর বলছে, ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি মার্টিনেজের এমন দৃষ্টিকটু উদযাপনের বিপরীতে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা তদন্তও শুরু করে দিয়েছে। ফিফার আচরণ বিধি অনুযায়ী, আর্জেন্টিনা কোড অফ কনডাক্টের ১১ ও ১২ নম্বর বিধি লঙ্ঘন করেছে। আর এ কারণে শাস্তির মুখে পড়তে পারেন মেসিরা। এখন দেখার পালা, এই তদন্ত এখন কতদূর গড়ায়।
এর আগে বিশ্বকাপ চলাকালীন কোয়ার্টাল ফাইনাল ম্যাচের পর তদন্তের মুখে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। তবে সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিল মেসিরা।