এই তো সেদিনের কথা, একটা চাপা উদ্রেগ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। বয়সের সাথে নাকি সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং ধার কমতে শুরু করেছিল। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। সাকিবের ফ্লেক্সিবিলিটি নাকি কমে গেছে। অবশ্য ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ব্যাট হাতে মাতানো সাকিব অতি সহজেই যে হারিয়ে যাবেন তা কি করে হয়! বয়স তো স্রেফ একটা সংখ্যা।
তবুও সাকিবের ব্যাটিংকে ঘিরে একটা চাপা শঙ্কা যেন শেষ হবার নয়। অবশ্য কেউ আবার সে বিষয়টা চাপাও রাখলেন না। ভারতের ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টূর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে সাকিব খেলেছেন বহু বছর। তবে ২০২২ আসরে তিনি ছিলেন দলশূন্য। দলের তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ছিল সবার মনে। তাইতো খোদ কলকাতা নাইট রাইডার্সও তাঁকে দলে ভেড়ায়নি।
২০২১ ও ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সাকিব ছিলেন প্রায় নিষ্প্রভ, ব্যাট হাতে। কিন্তু বছর ঘুরে নতুন এক বছরের পদার্পণ ঘটতেই সাকিব নিজেকে বদলে ফেললেন। নিজেকে বদলে ফেলতে জানেন বলেই হয়ত সাকিব আজ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারদের একজন। তাইতো তিনি রাজত্ব করেন ব্যাট আর বলে।
বদলে যাওয়ার এবারের মঞ্চ হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। সেখানেই তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি যে একেবারেই ফুরিয়ে যাননি। অবশ্য তিনি যেন ব্যাট হাতে আরও বেশি বিধ্বংসী। বিপিএলের গ্রুপ পর্বের প্রায় মাঝপথে চলে আসার পর সাকিবের অবস্থান এখন সবার উপরে। সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটারদের নেতৃত্বটা তিনিই দিচ্ছেন।
পাঁচ ইনিংসে ব্যাট করে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ২৭৫ রান। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তাঁর গড় আর স্ট্রাইকরেট। প্রায় ৯২ গড়ে তিনি রান তুলে যাচ্ছেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। তবে এই গড় ধরে রাখতে যে তিনি ধীরস্থির সব ইনিংস খেলছেন, বিষয়টা তেমনও নয়। তিনি বরং আগ্রাসী। পূর্বের যেকোন সময়ের থেকে অন্তত তাঁর আগ্রাসনের মাত্রা বেড়েছে বহুগুণে।
১৯৬.৪২ স্ট্রাইকরেটে তিনি ব্যাটিং করে যাচ্ছেন। যে সাকিবের ব্যাটার সত্ত্বা ফুরিয়ে গেছে বলে গুঞ্জন রটেছিল সে সাকিবই কিনা, রান তুলছেন প্রায় ২০০ স্ট্রাইকরেটে! নিন্দুকদের জন্যে অবশ্য খানিকটা পীড়াদায়ক এক পরিস্থিতি। তবুও সাকিব এখানেই থেমে যেতে চান না। তিনি বরং নিজের ব্যাটিংটাকে আরও বেশি শাণিত করতে চান। তাইতো বিপিএলে অফডে-তে মিরপুর একাডেমি মাঠে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছেন সাকিব।
ব্যাটিং অনুশীলনেই ছিল তাঁর রাজ্যের মনোযোগ। অনুশীলনটা হয়েছেও বেশ। এবারের বিপিএলে তিনি ১৫ খানা সুবিশাল ছক্কা হাঁকিয়েছেন। তাঁর থেকে বেশি ছক্কা মেরেছেন তাঁরই ফরচুন বরিশাল সতীর্থ ইফতেখার আহমেদ। পাকিস্তানি ব্যাটার ১৮ খানা ছক্কা হাঁকিয়েছেন। তবে তা ছয় ইনিংস থেকে। ছক্কার বিচারে অবশ্য সাকিবের পেছনে থাকা তৌহিদ হৃদয় ও লিটন দাসদের দূরত্বটা অনেক। এই দুই ব্যাটারের ব্যাট থেকে দশ খানা করে ছক্কার মার দেখেছে এবারের বিপিএল।
সাকিব তাই পাওয়ার হিটিংয়েই বেশি নজর দিয়েছেন। নেট অনুশীলনেও বিশাল সব শট খেলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। সাকিব অল্পতেই সন্তুষ্ট হওয়ার মানুষ নন, সেটা ক্রিকেট মাঠ হোক কিংবা অন্য কোন ক্ষেত্রে। সাকিবের এই ক্ষুধাই তাঁকে বিশ্ব সেরাদের একজন হিসেবে গড়ে তুলেছে। নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার তাড়না সাকিবদের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তোলে। সামনেই ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সাকিবের অলরাউন্ড পারফরমেন্সই নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করে দল।
এই সাকিবের ব্যাটিং দেখা তৃপ্তি দেয়। সাকিবরা বুঝিয়ে দেন, বিনোদনের কোন কমতি থাকে না ক্রিকেটেও। সব সময় আলোচনায় থাকা সাকিব তাই এবারও রয়েছেন আলোচনায়। তবে এদফা ইতিবাচক।