‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান কি ‘প্রেডিক্টেবল’ হয়ে যাচ্ছে?

বছরের শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি পাকিস্তানের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ হারার পর টেস্ট সিরিজেও তেমন আধিপত্য দেখানি পারেনি বাবর আজমের দল। উল্টো ব্ল্যাকক্যাপসদের আগ্রাসনে প্রতিটা টেস্টই কোনো মতে বাঁচিয়ে ড্র করেছে তারা। সব মিলিয়ে নিজেদের চেনা ভূমিতে অচেনা এক দলের মতই পারফর্ম করেছে পাকিস্তান। 

বছরের শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি পাকিস্তানের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ হারার পর টেস্ট সিরিজেও তেমন আধিপত্য দেখানি পারেনি বাবর আজমের দল। উল্টো ব্ল্যাকক্যাপসদের আগ্রাসনে প্রতিটা টেস্টই কোনো মতে বাঁচিয়ে ড্র করেছে তারা। সব মিলিয়ে নিজেদের চেনা ভূমিতে অচেনা এক দলের মতোই পারফর্ম করেছে পাকিস্তান।

চেনা কন্ডিশন, চেনা মাঠ। তারপরও পাকিস্তানের এমন ভরাডুবির কারণ কী? আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য এই বছরে দলে ধারাবাহিক ছন্দ থাকাটা জরুরি। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে হচ্ছে তার উল্টোটা। অথচ সীমিত ওভার ক্রিকেটে গত বছরটা দারুণ কেটেছিল পাকিস্তানের। এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ- দুটি মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালিস্ট ছিল তারা। কিন্তু এ বছরের শুরুতে যেন কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলল বাবর আজমের দল।

আর তাতে দল নিয়ে বেশ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক আসিফ ইকবাল। এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের চেয়ে ভাল ক্রিকেট খেলেছে নিউজিল্যান্ড। ওরা যেভাবে সফরকারী দেশ হিসেবে পারফর্ম করেছে তাতে মনে হয়েছে এটাই যেন তাদের নিজেদের মাঠ। অথচ পাকিস্তানকে দেখে মনে হয়েছে, ওরা বাইরে কোনো সিরিজ খেলতে গিয়েছে।’

তিনি আরো যুক্ত করে বলেন, ‘অ্যাওয়ে সিরিজ জেতা মানে দলটা স্বাগতিক দেশের চেয়েও ভাল। পাকিস্তান গত বছরে ভাল খেলেছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এ বছরেও একটা বড় টুর্নামেন্ট অপেক্ষা করছে। সেই বিশ্বকাপের আগে নিজেদের মাটিতে এমন পারফরম্যান্স বেশ চিন্তাদায়ক। পাকিস্তান যদি নিজেদের কন্ডিশনেই আটকে যায় তাহলে বাইরের সিরিজ গুলোতে আমরা কিভাবে ভাল করার আশা করব?’

ঘরের মাটিতে পাকিস্তানের এমন ভরাডুবির কারণে অবশ্য আরেক সাবেক ক্রিকেটার ইজাজ আহমেদ কন্ডিশনের দায় দেখছেন। তিনি মনে করেন, পাকিস্তানের মাঠগুলোর পিচ টপ লেভেলে পারফর্ম করার মত নয়।

তিনি বলেন, ‘আমাদের শক্তিশালী দিক হল পেস বোলিং। অথচ  পাকিস্তানের বেশিরভাগ উইকেটই স্লো পিচ। যার কারণে দুবাইতে পাকিস্তান সফলতা পেলেও এখানে ঠিক সেভাবে সফল হতে পারছে না। নিজেদের সম্ভাব্য অস্ত্র ঠিক মত ব্যবহার করাই যায় না। পাকিস্তানের জন্য প্রয়োজন বাউন্সি পিচ। কিন্তু নিজেদের হোম সিরিজ হলেও তারা পাচ্ছে স্লো পিচ। এ কারণে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সফল হতে পারেনি পাকিস্তান।’

পাকিস্তানের আরেক সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক আমীর সোহেল মনে করেন, দলের দুর্বলতা খুঁজে বের করে সেগুলো কাজ করা উচিৎ।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপ ভারতের মাটিতে হবে। আর সেখানকার উইকেট বেশ ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি। পার স্কোরই হতে পারে ৩০০ থেকে ৩৩০। আমাদের যেহেতু বোলিং ইউনিট ভাল তাই, প্রতিপক্ষকে পার স্কোরের চেয়ে আরো কম রানে বেঁধে রাখতে হবে। অর্থাৎ নিজেদের বোলিং দিয়ে ২৮০ এর মধ্যে প্রতিপক্ষকে আটকে দিতে হবে। এজন্য নির্দিষ্ট করে বোলিং নিয়ে আমাদের বোলারদের আরো কাজ করা প্রয়োজন।’

তিনি আরো যুক্ত করে বলেন, ‘একই ভাবে আমাদের ব্যাটারদের সব সময় ৩০০+রানে চোখ রাখা উচিৎ। যাতে করে পরবর্তীতে বোলিং দিয়ে প্রতিপক্ষকে আরো চাপে রাখা যায়।’

পাকিস্তানে বাবর আজমের অধিনায়কত্ব নিয়ে সব সময়ই শোরগোল ছিল। অনেকেই মনে করেন, পাকিস্তানের হয়ে তার আর অধিনায়কত্ব করা উচিৎ নয়। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আসিফ ইকবালও ঠিক সেই কাতারে থেকে তেমনটাই মনে করেন।

এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাবর এই মুহূর্তে আমাদের দলের সেরা ব্যাটার। আমার মনে হয় আলাদা চাপ থেকে দূরে থাকার জন্য তার অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। তার জায়গায় রিজওয়ানকে যদি অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়, তাহলে বাবর চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারবে। যেটা দলের জন্য ভাল হবে।’

আমীর সোহেল অবশ্য এ ভাবনার সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েই বলেছেন, ‘অধিনায়কত্বের পরিবর্তন বিষয়টা সাথে আমি একমত নই। এমন কোনো গ্যারান্টি আছে যে নতুন অধিনায়ক এসেই সফল হয়ে যাবেন?’

পাকিস্তানের আরেক সাবেক অধিনায়ক আমীর সোহেলের সাথে যুক্ত করে বলেন, আমার মনে হয় বাইরের রাজনীতির প্রভাব দলের উপরে পড়ছে। বিশেষ করে ওয়ানডে আর টেস্টে। অধিনায়ক পরিবর্তনের কোনো কারণই দেখি না এই মুহূর্তে। কারণ সামনেই বিশ্বকাপ। এখন অধিনায়ক ইস্যু বাদ দিয়ে দল গড়া নিয়ে মনোনিবেশ করা উচিৎ।’

সামনে এপ্রিলেই পাঁচ টি-টোয়েন্টি আর পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের আবারো পাকিস্তানে আসছে নিউজিল্যান্ড। এর আগে এফটিপি অনুযায়ী আর কোনো সিরিজ নেই বাবর আজমদের সামনে। তাই সব আলোচনা সমালোচনার জবাব দেওয়ার জন্য ভালই সময় পাচ্ছে পাকিস্তান।

তবে, আগের সিরিজের পুনরাবৃত্তি হলে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিয়ে বেশ প্রশ্নের মুখেই পড়ে যাবে বাবর আজমের দল। অবশ্য পাকিস্তান তো বরাবরই আনপ্রেডিক্টেবল দল। ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগে না। বাবর আজমও নিশ্চয় সেই মোমেন্টামের অপেক্ষাতেই আছেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...