খাইবার গিরিপথের প্রতিটা বাঁকে বাঁকে লেখা আছে কত ইতিহাস। বৈরী আবহাওয়া, উচু-নিচু পাহাড়, যুদ্ধ সবকিছুই খাইবারের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িত। আফগান সীমান্ত ঘেষা এই জায়গাটার মানুষজনও যে একেকজন যোদ্ধা। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে যারা বাঁচতে শিখে। যুদ্ধ, বন্দুক, লড়াই এসবই যাদের প্রথম পরিচয়। খাইবারের সেই পাশতুন গোষ্ঠী থেকেই উঠে আসা আরেক যোদ্ধা মোহাম্মদ ওয়াসিম।
পাশতুন শব্দটা শুনলেই প্রথম যে কথাটা আপনার মাথায় আসবে সেটা হল যুদ্ধ। এমনকি গুগলে পাশতুন লিখে খোঁজ করলেও আপনাকে একদল যোদ্ধার ছবি দেখানো হবে। যারা সৈনিকের পোশাক পরে বন্ধুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো বিশ্বের সামনে এই হলো তাঁদের পরিচয়। আফগান জাতিকে আগলে রাখা ছিল যাদের দায়িত্ব।
এই পাশতুন জাতির একজন হয়েই ক্রিকেট দুনিয়া শাষন করেছিলেন শহীদ আফ্রিদি। তিনি অবশ্য ছিলেন খাইবার এজেন্সির ‘আফ্রিদি’ গোত্রের একজন। আমরা যে আফ্রিদি নামে তাঁকে চিনি সেটা মূলত তাঁর গোত্রের নাম। সে যাইহোক, আফ্রিদি ক্রিকেটে দুনিয়া শাষন করে গেলেও খাইবারের ক্রিকেট কাঠামোর তেমন আগ্রগতি হয়নি।
ওইযে বলা হচ্ছিল, যুদ্ধই তাঁদের আসল পরিচয়। সেখান থেকেই আরেকবার ক্রিকেটের ব্র্যান্ড হতে চাইলেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। তাঁর জন্য ক্রিকেট খেলাটাই যে একটা যুদ্ধ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উপরের এই শহরেই বল হাতে দৌড়ানো শুরু করলেন তিনি। তখন অবশ্য খেলতেন টেপ টেনিসে।
তবে টেপ টেনিসের ক্রিকেটে ওয়াসিমের মন ভরে না। তিনি ক্রিকেট বলেই খেলতে চান। চামড়ায় মোড়ানো শক্ত ওই বলটাকে পেটাতে চান। জোরে বল ছুঁড়ে স্ট্যাম্প ভেঙে দিতে চান। সত্যিকারের যোদ্ধা না হলেও, যোদ্ধার রক্ত তো তাঁর গায়ে বইছে।
সেই ক্রিকেট খেলার তাগিদের মোহাম্মদ ওয়াসিম চলে এলেন পেশওয়ারের। সেখান থেকেই ক্লাব ক্রিকেটের যাত্রা শুরু এই অলরাউন্ডারের। পেরোতে থাকেন ক্রিকেটের নানা ধাপ। জেলা পর্যায়ের ক্রিকেট খেলতে খেলতে ডাক আসে বয়সভিত্তিক দলে। পাকিস্তানের হয়ে ২০২০ সালে খেলেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ।
সেই থেকেই ছুটে চলে ২১ বছর বয়সী মোহাম্মদ ওয়াসিমের। যুব বিশ্বকাপ খেলে এসেই অভিষেক হয় পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। সেখানে প্রমাণ করে চলে আসেন পাকিস্তান জাতীয় দলে। তিন ফরম্যাটেই পাকিস্তানের হয়ে খেলে ফেলেছেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। দারুণ পেস বোলিং, সাথে কার্যকর ব্যাটিং। অনেকে আবার তাঁকে বলছেন পাকিস্তানের নিজস্ব হার্দিক পান্ডেয়া।
যদিও পাকিস্তানের হয়ে ব্যাট হাতে প্রমাণ করার সুযোগ খুব বেশি পাননি। তবে বল হাতে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন। পাকিস্তানের হয়ে খেলতে খেলতেই সুযোগ এলো বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলার।
অধিনায়ক সাকিবও ব্যবহার করলেন খাইবারের এই টগবগে তরুণকে। হাতে তুলে দিলেন নতুন বল। আর তাতেই ওয়াসিমের বাজিমাত। ছুটতে থাকা সিলেটের ব্যাটিং লাইন আপ তছনছ করে দিলেন এক ওভারেই। প্রথম বলেই ভেঙে দিলেন জাকির হাসানের স্ট্যাম্প। তারপর পেলেন ইনফর্ম ব্যাটার তৌহিদ হৃদয়ের উইকেট। আর পরের বলেই আবার মুশফিকুর রহিমকে ফেরালেন এই পেসার।
নিজের প্রথম ওভারেই তিন উইকেট নেয়া ওয়াসিম দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন ফরচুন বরিশালকে। যদিও পরে নাজমুল হোসেন শান্ত’র ইনিংসে আবার ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। ওয়াসিম চার ওভার বল করে ৩৪ রান খরচ করে নিয়েছেন ৪ উইকেট।