দুর্দান্ত একটা শুরুর মাঝ পথে ছন্দপতন। যেকোন খেলোয়াড়ের চিরশত্রু ইনজুরির হানা। হাত গড়িয়ে রক্ত মাটি স্পর্শ করল। কাতর এক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মাঠ ছাড়লেন। এরপর অবশ্য ফিরে এলেন। কিন্তু ঠিক ফিরে আসা হচ্ছিল না। দারুণ ধারাবাহিক তৌহিদ হৃদয় যেন স্রেফ এক দাঁড়িয়ে থাকা স্তম্ভ। সবাই ভেবে বসল, শুরুতে যা কিছু তিনি করেছেন, তা কেবলই ফ্লুক।
কিন্তু ২০১৯ সালে যারা বিশ্ব জিতেছিল তরুণ হয়েও, সে দলের হৃদয় তো অদম্য। নিজের সে খারাপ সময়টা কাটিয়ে উঠলেন দ্রুতই। স্ব-মহীমায় তাঁর প্রত্যাবর্তন সিলেটের মাটিতে। সেই অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বই তো তিনি করছেন চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)। সিলেটের স্টেডিয়াম ভরা দর্শকদের আনন্দ উল্লাসে ভাসিয়ে তিনি তুলে নেন এবারের বিপিএলে ব্যক্তিগত চতুর্থ অর্ধশতক।
টেবিলের শীর্ষস্থানের লড়াইয়ে রয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। তাদের সাথে লড়াই খুলনা টাইগার্সের। কোন রকমে প্লে-অফের টিকিট কাটবার অপেক্ষায় খুলনার বাঘেরা। এমন এক ম্যাচে অবশ্য আবারও হেসে উঠল হৃদয়ের ব্যাট। কোন অহেতুক তাড়াহুড়ো নেই। কেবলই নিজের স্বাভাবিক ক্রিকেটটা খেলে গেলেন তিনি। ক্রিকেটীয় ব্যাকরণ মেনে শট খেললেন মাটি কামড়ানো শট।
১৫১ স্ট্রাইক রেটে তিনি ব্যাটিং করেছেন। বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের সাধারণ স্ট্রাইক রেটের থেকে ভিন্ন ধাঁচের ইনিংস। তবুও নেই কোন ছক্কার মার। বিপদের শঙ্কার বাড়ানোর বিন্দুমাত্র প্রয়াস তিনি করেননি তাঁর গোটা ইনিংসটিতে। দলের পক্ষে রান করে গেছেন ৭৪ রান। দারুণ ছন্দে থাকা নাজমুল শান্ত ফিরে যাওয়ার পর দলের হাল ধরেন সতীর্থ জাকির হোসেনকে সাথে নিয়ে।
দুইজনে মিলে গড়ে তোলেন প্রায় অপ্রতিরোধ্য এক জুটি। যে জুটি থেকে রান আসে ১১৪টি। ৬৫ বলের গড়া সেই জুটিতে ভর করেই দারুণ সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে সিলেট স্ট্রাইকার্স। তবে এদিন তৌহিদ হৃদয়ের ফিরে আসাটা যেন স্বস্তির সুবাতাসে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে গোটা সিলেট দলকে। এমন দৃষ্টিনন্দন এবং কার্যকর ব্যাটিং সচরাচর দেখা মেলে না।
তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় নিজেকে খুঁজে নেওয়াটা। শুরুর প্রথম তিন ইনিংসে যথাক্রমে হৃদয় করেছিলেন ৫৫, ৫৬ এবং ৮৪। কিন্তু ইনজুরি থেকে ফিরে সে চিত্রে বদলে গেল ৩৬০ ডিগ্রি। এরপরের তিন ইনিংসে হৃদয় রান করলেন, ৪,০ এবং ১৫। সিলেটের আস্থার জায়গাটা দেশিয় তরুণ খেলোয়াড়দের দুর্দান্ত পারফরমেন্স। সে দিক থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন হৃদয়।
কিন্তু নয়টি চার দিয়ে সাজানো ইনিংস দিয়ে হৃদয় জানালেন, অতি দ্রুতই অন্ধকার কোন গলির পথ ধরতে আসেননি তিনি। হৃদয় নিজেকে মেলে ধরবে বিশ্ব ক্রিকেটের আঙিনায়। সে পথে তিনি প্রস্তুত। ধারাবাহিকতাও তাঁর আয়ত্ত্ব। তিনি অপেক্ষমান একটি সুযোগের। জাতীয় দলের সেই অধরা জার্সিটি আর বাকিদের মত তিনিও গায়ে জড়িয়ে নিতে চান।
তবে এর আগে নিশ্চয়ই ভিন্ন কোন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে হৃদয়ের। এবারে বিপিএলটা তিনি নিশ্চয়ই শেষ করতে চাইবেন ইতিবাচক কোন একটা জায়াগায়। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মত রসদ তাঁর দলের রয়েছে। হয়ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়ার সুযোগটায় বেশ খানিকটা পিছিয়ে গেছেন তিনি। তবুও সেই একটা কীর্তি নিজের ঝুলিতে যুক্ত নিশ্চয়ই করতে চাইবেন হৃদয়। সে পথে হাঁটতে গিয়ে হয়ত তিনি হয়ে যেতে পারেন দলের শিরোপা জয়ের অন্যতম কাণ্ডারি।
সামনেই দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ। সেখানে চাইলে তৌহিদ হৃদয় চোখ রাখতেই পারেন। আর বোর্ডের নির্বাচকরা তো তাঁর দিকে চোখ রাখতে বাধ্য।