এবারের মৌসুমে মাঠে সময়টা মোটেই ভাল কাটছে না ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুলের। মাঠ এবং মাঠের বাইরে নানা সমস্যায় জর্জরিত দলটির লিগে অবস্থান নবম। শংকা আছে সামনের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলা নিয়েও। অন্যদিকে, লিভারপুলেরই সাবেক ফুটবলার জাবি আলোনসোর অধীনে জার্মান বুন্দেসলিগায় রীতিমতো উড়ছে বায়ার লেভারকুসেন। দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে অনেকেই তাই আগামী মৌসুমে লিভারপুলের ডাগ আউটে দেখছেন এই স্প্যানিয়ার্ডকে।
গত অক্টোবরে লেভারকুসেনের দায়িত্ব পান আলোনসো। তিনি দায়িত্ব পাবার সময় রীতিমত ধুঁকছিল দলটি, ছিল পয়েন্ট তালিকার ১৭ নম্বরে। আলোনসো কোচ হবার পরই যেন ভোজবাজির মত পাল্টে যায় সব, টানা পাঁচ জয়ে রেলিগেশন শংকা কাটায় দলটি। শেষ ম্যাচে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে জয়ের পর তো আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার দৌড়ে আছে দলটি। এছাড়া স্প্যানিশ জায়ান্ট অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে উঠে গেছে ইউরোপা লিগের পরের রাউন্ডেও।
৪১ বছর বয়সী আলোনসো খেলোয়াড়ি জীবনে লিভারপুল ছাড়াও রিয়াল মাদ্রিদ এবং বায়ার্ন মিউনিখের মত বড় ক্লাবে খেলেছেন। এরপর কোচিং ক্যারিয়ারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন ধাপে ধাপে। প্রথমে রিয়াল মাদ্রিদের বয়সভিত্তিক দল, রিয়াল সোসিয়াদের বি দল সামলে নিজেকে যোগ্য করে তুলেছেন। এরপর লেভারকুসেনের সাথে মিলে গড়েছেন দুর্দান্ত এক জুটি।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তাঁর কোচ রবার্তো ওলাবে জানান, ‘আমি রিয়াল সোসিয়াদে তাঁর শুরুর দিকে কোচ ছিলাম। তরুণ বয়সে তাঁর মধ্যে সহজাত নেতৃত্বগুণ দেখা গিয়েছিল। আমার মনে পড়ে আমরা সেগুন্দা ডিভিশনে রেলিগেশন এড়ানোর জন্য লড়ছিলাম। তখনই সে তাঁর ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেয় এবং দলের সবাইকে উজ্জীবিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। তাঁর গেম সেন্স এবং বুদ্ধিমত্তা অসাধারণ, ভাল কোচ হয়ে ওঠার পথে এই গুণাবলিগুলো তাঁকে সাহায্য করবে।’
খেলোয়াড়ি জীবনে প্রতিটি ক্লাবের সাফল্য উপচে পড়েছে। লিভারপুলে প্রথম মৌসুমেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন মাদ্রিদের সাথেও। এরপর ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় বায়ার্নের হয়ে টানা তিন বুন্দেশলিগা জিতে ইতি টেনেছেন সমৃদ্ধ এক ক্যারিয়ারের। এছাড়া জাতীয় দলের হয়েও দুইবার ইউরো এবং একবার বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পেয়েছেন। জাভি, ইনিয়েস্তা, বুসকেটস, ফ্যাব্রেগাসদের স্বর্ণালি সেই সময়ে জাতীয় দলের হয়ে ১১৪ ম্যাচ খেলাই প্রমাণ করে তিনি কতোটা ভালো মানের ফুটবলার ছিলেন।
ওলাবে বলেন, ‘আলোনসো তাঁর ক্যারিয়ারে বেশ ভাগ্যবান ছিল। অসাধারণ সব কোচের অধীনে খেলার সুযোগ হয়েছে তাঁর। রেইনাল্ড ডেনোয়িক্স পজিশন ধরে রেখে খেলাতে পছন্দ করতেন। এরপর সেরা ট্যালটিক্যাল কোচদের একজন রাফা বেনিতেজকে লিভারপুলে পেয়েছিল। রিয়ালে খেলেছে দ্য স্পেশাল ওয়ান জোসে মরিনহোর অধীনে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ভিসেন্তে দেল বস্ক, পেপ গার্দিওলা, কার্লো আনচেলত্তির অধীনে খেলার সুযোগ হয়েছে তাঁর। ফুটবল ক্যারিয়ারে এতসব অসাধারণ কোচের সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্য ক’জনের হয়!’
রিয়াল সোসিয়েদাদের বি দলের কোচ থাকাকালীন সময়েই বুঝা গিয়েছিল কোচ হিসেবে সফল হবেন আলোনসো। রবার্ট নাভারো, উরুগো জারাতে, মার্টিন জুবিমেন্দির মতো তরুণ প্রতিভাদের তুলে আনেন তিনি। তরুণ ফুটবলারদের উজ্জীবিত করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।
কোচ হিসেবেও খেলোয়াড়ি জীবনের ধারা বজায় রেখেছেন তিনি। দলকে খেলায় পজিশনভিত্তিক ফুটবল, প্রাধান্য দেন মিডফিল্ডারদের। এছাড়া সব সময়েই দলের তরুণ ফুটবলারদের সুযোগ দিয়েছেন বারবার। সোসিয়েদাদের মত বায়ার লেভারকুসেনেও ধরে রেখেছেন সেই ধারা। তুলে এনেছেন অ্যাডাম হলোজাক, জেরেমি ফ্রিমপং, মুসা দিয়াবি, ক্যালাম হাডসন ওডোই, ফ্লোরিয়ান উইর্টজদের মত ভবিষ্যতের তারকাদের।
নি:সন্দেহে লিভারপুল নজর রাখছে তাঁর উপর। যদিও ইয়ুর্গেন ক্লপের সাথে দলটির চুক্তি রয়েছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এছাড়া অ্যাস্টন ভিলার হয়ে স্টিফেন জেরার্ডের বাজে ফর্ম আলোনসোকেই এগিয়ে রাখছে কোচ হবার দৌড়ে।
স্পেনের বাস্ক অঞ্চল থেকে একের পর এক দারুণ সব কোচ উঠে আসছেন। মিকেল আর্তেতা, হুলেন লোপেতেগুই, উনাই এমেরি, জাভি গার্সিয়া, ইমানুয়েলরা সাফল্য এনে দিচ্ছেন দলগুলোকে। সেই বাস্ক অঞ্চলের সন্তান জাবি আলোনসোকে তাই আগামী মৌসুমে লিভারপুলের ডাগ আউটে দেখলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না।