মুগ্ধ ছড়িয়েছেন মুগ্ধতা

ক্রিকেট পাড়ায় তাঁর নামটা উড়ে বেড়ায়। তবে ক্রিকেট পাগল পুরো দেশে তাঁর নামটা এখনও ছড়িয়ে যায়নি খুব একটা। তাইতো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলেন মুকিদুল মুগ্ধ। হার না মানা অদম্য মুগ্ধ, বাইশ গজে ছড়াচ্ছেন তাঁর বোলিংয়ের মুগ্ধতা। তাঁর বোলিং তোপে কুপকাত ফরচুন বরিশাল।

মুকিদুল মুগ্ধ, জন্মের পরই যার লড়াইটা হয়েছিল মৃত্যুর সাথে। তিনি সে লড়াইয়ে টিকে গেছেন। এরপর বেশ বিরল রোগে পা বেঁকে যেতে শুরু করে। লোহার বেড়ি পড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁর পায়ে। ছোট্ট মুগ্ধ তখন বিস্ময় ভরা নয়নে চেয়ে থাকতেন। তবে সে বিস্ময় ভরা চোখ তাঁকে ভবিষ্যতের অতলে তাকিয়ে দেখার সাহসটা জুগিয়েছে।

সকল বাঁধা ডিঙ্গিয়ে তিনি আজ উড়ে বেড়াচ্ছেন বাংলার ক্রিকেটে। এবারের বিপিএলে তিনি মাঠ মাতাচ্ছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। দ্বিতীয় স্থান দখলের লড়াইয়ে তিনি নিজ দলকে এগিয়ে দিলেন দারুণভাবে। একাই নিয়ে নিলেন পাঁচটি উইকেট। নিজের কোটার চতুর্থ ওভারের শুরুতেই ঝুলি পূর্ণ করেন তিনি। ততক্ষণে অবশ্য ফরচুন বরিশাল নাস্তানাবুদ।

এদিন মুগ্ধ শুরু করেন সাকিব আল হাসানের উইকেট তুলে নিয়ে। বরিশালের অধিনায়কের উইকেটটি যেন তাঁর জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি গুলোর একটি। তাইতো নৃত্যের সাথে তিনি সেই উইকেট উদাযাপন করেন। এরপর অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেট উপড়ে ফেলেন। ভঙ্গুর ব্যাটিং লাইনআপের ভীত হওয়ার প্রচেষ্টা করছিলেন রিয়াদ। নিঃসন্দেহে কুমিল্লার পথের কাঁটা। সেই কাঁটাকেই তুলে ফেলেন ২২ বছর বয়সী তরুণ মুকিদুল মুগ্ধ।

কোমড় ভেঙ্গে যায় বরিশালের। আর সেই অবস্থায় অবশ্য আঘাত করা থামিয়ে দেননি মুগ্ধ। করিম জানাতের উইকেটও নিজের বগলদাবা করেন মুগ্ধ। শেষ দিকে মোহাম্মদ ওয়াসিম ও চাতুরাঙ্গা ডি-সিলভার উইকেটগুলোও শিকার করেন মুগ্ধ। তাতেই পাঁচটি উইকেটের ট্যালি বসে যায় তাঁর নামের পাশে। ৩.১ এক বল করেই তিনি পাঁচটি উইকেট নিয়ে ফেলেন।

এই সময় মুগ্ধ খরচ করেন ২৩ রান। খানিকটা খরুচে তিনি ছিলেন। তবে সাধারণত উইকেট শিকারি বোলাররা একটু বেশি রান খরচ করেই থাকেন। মুগ্ধ তাদেরই একজন। বেশ কিছুদিন ধরেই মুগ্ধ বাংলাদেশ দলের পাইপলাইন সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন। হাই পারফরমেন্স ইউনিটের সদস্য হিসেবেই তিনি রয়েছেন একটা লম্বা সময় ধরে।

জীবনটাই একটা সময় দুর্বিষহ হয়ে যাওয়ার উপক্রম ছিল মুগ্ধর। সেই মুকিদুল মুগ্ধ এখন ব্যাটারদের জন্যে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের এক হুমকির কারণ তিনি। বিশ্ব সেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন নিশ্চয়ই মুগ্ধ । সে পথেই রয়েছেন তরুণ এই পেসার। সেই স্বপ্নটা পূরণ নিশ্চয়ই করতে চাইবেন। পেস বিপ্লবের একটা দারুণ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। পেসাররা ঘরোয়া থেকে আন্তর্জাতিক সর্বত্র ভাল করছেন।

আর সেই ভাল করার পেছনেও মুকিদুলদের হাত রয়েছে। তাঁরা জাতীয় দলে থাকা বোলারদের কাঁধের উপর নিঃশ্বাস ফেলছেন। একটু পা হড়কে গেলেই জাতীয় দলের থাকা খেলোয়াড়রা ছিটকে যাবেন সেটা সবারই জানা। মুগ্ধর মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র। তাদের ধারাবাহিকতায় সমৃদ্ধ হোক বাংলাদেশের পেস আক্রমণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link