গত মাসে আবার আলোচনায় এলো ব্যাপারটা।
সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে আবার মাঠে ঢুকে পড়েছিলেন এক দর্শক। দীর্ঘ বিরতির পর এই ম্যাচে আবার আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে দর্শক ফিরেছিলেন মাঠে। আর প্রথম ম্যাচেই ঘটলো অঘটন। নিরাপত্তা বেষ্টনী টপকে দু জন প্রতিবাদকারী মাঠে ঢুকে পড়লেন। তাও আবার খালি হাতে নয়; রীতিমতো প্লাকার্ড হাতে ঢুকেছিলেন তারা মাঠে।
এক বছর আগে হলেও ঘটনাটা নিয়ে হয়তো ততো হইচই হতো না। কিন্তু এবার একেবারে কেলেঙ্কারি হয়ে গেলো।
খেলোয়াড়দের অনেক নিয়ম মেনে জৈব বলয়ে রাখা হচ্ছে। বিশেষ ব্যবস্থায় ম্যাচ আয়োজন করা হচ্ছে। কোনো খেলোয়াড়, কর্মকর্তা যাতে সংক্রমিত না হন, সে জন্য চেষ্টার কমতি নেই। চেষ্টা করা হচ্ছে অরক্ষিত দর্শকের কাছ থেকে তাদের দূরে রাখার জন্য। কিন্তু সেই চেষ্টাতে যেনো পানি ঢেলে দিলেন এই দু জন অনুপ্রবেশকারী!
ক্রিকেটে এমন অনুপ্রবেশকারী অবশ্য এই প্রথম নয। বলা যায়, অনুপ্রবেশকারীদের মাঠে ঢুকে পড়ার ইতিহাস প্রায় ক্রিকেটেরই বয়সী।
১৮৭০ সালের এই কাঠে খোদাই করা ছবিটা দেখতে পাচ্ছেন। এখানে মাঠে ঢুকে পড়া দর্শকদের পাল্লায় পড়ে বিব্রত খেলোয়াড়দের দেখা যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, সে সময়ও বেশ আলোচিত ছিলো এইসব ঘটনা। তবে গত শতকের সত্তর, আশির দশকটা ছিলো পিচ অনুপ্রবেশকারীদের স্বর্নযুগ।
খেলা শেষ হলে গ্যালারি ও স্ট্যান্ড ফাঁকা করে সবাই মাঠে নেমে যাওয়াটা একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছিলো। ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়াতে তখন একটু বড় কোনো উপলক্ষ পেলে দর্শকরা মাঠে ঢুকে পার্টি জমিয়ে ফেলতেন রীতিমতো। ১৯৫৩ সালে লেন হটন যখন ১৯ বছর পর ইংল্যান্ডকে অ্যাশেজ এনে দিলেন, তখন এই ঘটনাটা ঘটেছিলো।
আসলে এতো আগের কথা কী বলবেন। এই ১৯৯৯ বিশ্বকাপে এই ঘটনার শিকার তো বাংলাদেশও হয়েছিলো। পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর মাঠে ঢুকে পড়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। আসলে ‘জয়ের পর’ বলাটা ঠিক হলো না। জয় সম্পন্ন হওয়ার আগেই নর্দাম্পটনের মাঠ ভরে গিয়েছিলো দর্শকে। ওই সময় কে যেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর টুপিও খুলে নিয়ে গিয়েছিলেন, যা পরে আর পাওয়াই যায়নি।
খেলা চলাকালেও এমন ঘটতো। বিশেষ করে কোনো খেলোয়াড় কোনো মাইলফলকে পৌছালে দু চার জন দিব্যি মাঠে নেমে আসতেন পিঠ চাপড়ে দিতে। এসে একটু হাত মিলিয়ে বাহবা দিয়ে আবার ফিরে যেতেন জায়গায়। ওভালে ১৯৭৩ সালে ক্লাইভ লয়েড সেঞ্চুরি করার পর এই ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। দিব্যি লোকজন এসে ভিড় করে তার পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলো। ভাগ্যিস সে কালে সেলফি তোলার ব্যাপারটা ছিলো না!
সবসময় ব্যাপারটা এরকম নিরীহ ছিলো না। কখনো কখনো এই দর্শক একটু মারমুখী হয়ে উঠতেন। খুব অপছন্দের ব্যাপার ঘটলে খেলোয়াড়দের ধাওয়াও দিতেন। আর তা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় ছিলো ঝেড়ে একটা দৌড় দেওয়া। সে কালে ইয়ো ইয়ো বা বিপ টেস্ট না থাকলেও এই দৌড় প্রমাণ করতো যে, ব্যাটসম্যান বা বোলার ফিটই আছেন!
একটা সময় এলো যখন রাজনৈতিক বক্তব্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে অনেক দর্শক বেছে নিয়েছেন ক্রিকেট মাঠকে। কার্যত এটা সব খেলার ক্ষেত্রেই ঘটেছে। বিভিন্ন এক্টিভিস্টরা হঠাৎ করেই খেলা চলাকালীন মাঠে ঢুকে পড়ে নিজেদের মতাদর্শ প্রচারের চেষ্টা চালিয়েছেন।
এর পাশাপাশি যোগ হলো নগ্ন হয়ে মাঠে ঢোকা। স্ট্রিপ ইনভাডরদের প্রকোপ এই ক দিন আগেও বেশ দেখা গেছে। মাঠের ভেতর নগ্ন হয়ে ঢুকে পড়ে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষন করা আর কী!
দর্শকের এরকম অনুপ্রবেশে খেলার ফল পাল্টে যাওয়ার কথা শুনেছেন?
১৯৯৯ সালে এই ঘটনা ঘটেছিলো। জর্জ টাউনে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই ম্যাচটা আগেও দু’বার দর্শক ঢুকে পড়ায় বাঁধাগ্রস্থ হয়েছিলো। এরপর সব ভালোই চলছিলো। শেষ বলে অস্ট্রেলিয়ার চার রান দরকার ছিলো। স্টিভ ওয়াহ বল লং অনে পাঠালেন। শেন ওয়ার্ন আর স্টিভ দৌড় শুরু করলেন। ক’বার দৌড়েছিলেন তারা?
এটা আর কখনো জানা যাবে না।
কারণ, চতুর্থ দৌড় বা তৃতীয় দৌড় চলা অবস্থায় মাঠে ঢুকে পড়েন দর্শকরা। যাদের আর বেরই করা যায়নি। ফলে এই ম্যাচের ফলটাও বের করা যায়নি। বাধ্য হয়ে ম্যাচ রেফারি ও দু দল মিলে ম্যাচকে ‘টাই’ বলে মেনে নিয়েছিলেন।
সাধে কী আর এদের অনুপ্রবেশকারী বলে!