শান্ত, অভাগা ও অশান্ত

একটা ক্ষোভ নিয়ে মাঠ ছাড়লেন। দিনটি যে ছিল কেবলই তার। শুরু থেকেই একটা আলাদা ছন্দে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। খানিকটা বিতর্কের জন্ম দেওয়া আউটের শিকার তিনি। তাইতো বাইশ গজ ছেড়ে যেতে যেতে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কাছে। রাগের আবেগটা যেন কোন ভাবেই দমন করা যাচ্ছিল না। যাবার কথাও নয়। একটি ভুল সিদ্ধান্ত যেন সব পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দেয়।

নাজমুল হোসেন শান্ত, বাংলাদেশ ক্রিকেটের বেশ পরিচিত এক মুখ। প্রবল সম্ভাবনাময় একজন খেলোয়াড়। তবুও তিনি জাতীয় দলে আলো ছড়াতে পারেন না। বারংবার ব্যর্থ হন তিনি। তবুও দলের নির্বাচক থেকে শুরু করে, দেশি-বিদেশি কোচদের ভীষণ পছন্দের শান্ত। এর পেছনে অধিকাংশ সময়ই যুক্তি দাঁড় করানো হয়েছে তার দারুণ ব্যাটিং দক্ষতার। তবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সেই দক্ষতা যেন অমাবশ্যার চাঁদ।

তাইতো দর্শক সমর্থকদের রাজ্যের অভিযোগ তাকে ঘিরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দা ও ট্রলের বন্যা বয়ে যায়। সে সবকিছুর জবাব দিতেই তিনি বেছে নেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের নবম আসরকে। পুরো টূর্নামেন্ট জুড়েই ছিলেন তিনি দলের অন্যতম আস্থাভাজন। সিলেট স্ট্রাইকার্স দলটা দেশি খেলোয়াড় নির্ভর। আর সে নির্ভরতা অর্জনের পেছনে এবার শান্তর অবদান ভুলে যাওয়ার নয়। তিনি রান পেয়েছেন, তিনি নিয়ম করে দলের জন্যে রান করে গেছেন।

তেমনই আরও এক রানের দিন দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। এদিন শুরু থেকেই সাবলীল ছিলেন শান্ত। তিনি কর্তৃত্ব নিয়ে খেলেছেন বাইশ গজে। তিনি একজন নির্ভীক নাবিকের মত করে সামনে থেকে পরিচালনা করেছিলেন সিলেটের ব্যাটিং ইনিংস। ‘৩০ বলে ৪০ রান’ এই অংকগুলো শান্তর ইনিংসটি ঠিকঠাক বর্ণনা করতে পারবে না। প্রায়শই তার ব্যপারে কোচদের মত, সে নাকি নেট অনুশীলনে দারুণ করে। এমনকি বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই শান্তর প্রতিভা আর দক্ষতার সুনাম ছিল। সে সবকিছুর প্রতিফলনই যেন তিনি ঘটান এই ম্যাচে।

দারুণ সব ক্রিকেটীয় শটে তিনি আপন গতিতে ব্যক্তিগত ইনিংসের পাশাপাশি দলের সংগ্রহও বড় করতে থাকেন। অপরপ্রান্ত থেকে ইনফর্ম তৌহিদ হৃদয় উপভোগ করলেন শান্তর দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং। কৌশলগত দিক থেকে এদিন শান্ত প্রমাণ করলেন তাকে জাতীয় দলে বহুবার সুযোগ দেওয়া মোটেও ভুল কিছু না। হৃদয়কে সাথে নিয়ে ৬৫ রানের জুটি গড়েন শান্ত। সেই জুটির অধিকাংশ রানই এসেছে তার ব্যাট থেকে। বাঁচা-মরার এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দূর্দান্ত এক শুরু এনে দেয় জুটি।

এই জুটিটাকে আরও বড় নিঃসন্দেহে করতে পারতেন হৃদয় আর শান্ত। তবে শান্তকে এক বিতর্কিত আউটে মাঠ ছাড়ার নির্দেশ দেন থার্ড আম্পায়ার। নবম ওভারে শেখ মাহাদির চতুর্থ বলে বিশাল এক ছক্কা হাকান শান্ত। ঠিক এর পরেই লেগ বিফোরের আবেদন ওঠে। বেশ জোড়ালো আবেদন। তবুও মাঠে থাকা আম্পায়ার নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। আউট দেননি। রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান জানতেন এদিন শান্তর উইকেটটি ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

তাইতো তিনি রিভিউ নিয়ে নেন। আপাতদৃষ্টিতে শান্তর আউট হবার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষিণ। কেননা তিনি প্রায় মিটার তিনেক ডাউন দ্য ট্র্যাকে চলে এসেছিলেন। সেদিক বিবেচনায় আউট হওয়ার কথা নয়। অন্যদিকে খালি চোখে দেখা যায় বলের ইম্প্যাক্ট ছিল অফ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরে। কিন্তু ডিআরএস জানায় ইম্প্যাক্ট লাইনেই ছিল। তবে অনফিল্ডে থাকা আম্পায়ার নিশ্চয়ই বাকি থাকা বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই আউট দিতে অসম্মতি জানায়। তবে কাজের কাজ হয়নি, অসম্মতি নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় শান্তকে।

নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। তবে খেলার মাঠে আম্পায়ারের দেওয়া সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত। তাইতো নিজেকে প্রমাণের সুযোগটাও অহেতুক হাতছাড়া হয়ে যায় শান্ত। নতুবা তিনি হয়ত নিজের ইনিংসটি আরও বড় করতে পারতেন। নানন্দিক শটের কমতি নিশ্চয়ই ঘটত না। দিনটা তখন হতে পারত নাজমুল হোসেন শান্তর। তবে তা হয়নি। আফসোসটা নিশ্চয়ই থেকে যাবে তার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link