পুরো টূর্নামেন্ট জুড়ে রীতিমত অপ্রতিরোধ্য ছিল সিলেট স্ট্রাইকার্স। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকেই তারা উঠেছিল প্লে-অফ রাউন্ডে। মাঝপথে হোচট খেলেও আবারও নিজেদের কক্ষপথে ফিরেছে সিলেট। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই নিজেদের খুজে পাওয়া। শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়। তাতে রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে সিলেট স্ট্রাইকার্স.
দ্বিতীয় প্লে-অফ, জিতলেই স্বপ্নের ফাইনাল। দুই দলই মরিয়া। রংপুর রাইডার্স একমাত্র এলিমিনেটর জিতে বেশ আত্মবিশ্বাসী। অন্যদিকে প্রথম কোয়ালিফায়ার হেরে ফিনিক্স হবার শেষ সুযোগ সিলেট স্ট্রাইকার্সের সামনে। মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স। তরুণ দুই ক্রিকেটার তৌহিদ হৃদয় ও নাজমুল হোসেন শান্তর কাঁধে ভর করে দারুণ শুরু পায় স্ট্রাইকার্সরা। কর্তৃত্ব নিয়ে খেলে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন শান্ত।
তবে বিতর্কিত এক আউটে তাকে থেমে যেতে হয় ৪০ রানে। সেখানেই গতি স্লথ হবার কথা সিলেটের। সেটা হতে দেননি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি এদিন নামলেন ওয়ান ডাউনে। তিনি নেমেই শেখ মাহেদির বলে বিশাল এক ছক্কা হাকালেন। যেন বাকিদের একটা বার্তা দিতে চাইলেন ভয়ের কিছু নেই। হাতখুলে খেলতে হবে। সে বার্তা ঠিকঠাক বোঝার আগেই সাজঘরে টূর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান করা হৃদয়। তবে জাকির হাসান ও রায়ান বার্লদের সাথে নিয়ে দ্রুত রান তোলার মিশনে নামেন মাশরাফি।
১৬ বলের ২৮ রানের ক্যামিও ইনিংসটি বাকিদের খানিকটা হাত চালাবার লাইসেন্স দিয়ে দেয়। যদিও মাশরাফি আউট হওয়ার পর সিলেটের সংগ্রহ বড় হওয়ার সম্ভাবনা কেমন একটা নিভু নিভু প্রদীপ। তবে রায়ান বার্ল, জর্জ লিন্ডে ও থিসারা পেরেরার ছোট ছোট দ্রুতগতির ইনিংসগুলোর বদৌলতে স্কোরবোর্ডে ১৮২ রান তুলতে সক্ষম হয় সিলেট। মিরপুরের উইকেটে এই সংগ্রহ বেশ লড়াকু। বাংলাদেশের ক্রিকেটের খানিকটা খোঁজ খবর যারা রাখেন তারা নির্দ্বিধায় বলে দেবে তা।
বিশাল এই টার্গেট টপকানো খুব একটা সহজ হবার নয়। তবে রংপুরের আস্থা বেশ কার্য্যকর এক ব্যাটিং লাইনআপ। যদিও শুরুতেই হোচট খায় রাইডার্সরা। স্যাম বিলিংসকে সাজঘরে ফেরান তানজিম হাসান সাকিব। সেখানেই ম্যাচ জয়ের স্বপ্নটা একটু একটু করে দেখতে শুরু করে সিলেট স্ট্রাইকার্স। ভিন্ন চিত্র রংপুরের শিবিরে। যদিও খেলার তখনও অনেকটা বাকি। তবে রংপুরের ব্যাটারদের চেপে ধরতে সক্ষম হয় সিলেটের বোলাররা।
হাতখুলে খেলার সুযোগ খুব একটা না দিয়ে আগের দিন রংপুরের নায়ক শামীম হোসেন পাটোয়ারিকে ফেরান রুবেল হোসেন। সেখান থেকেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মত এক দূর্দান্ত ইনিংস খেলেন নিকোলাস পুরান। এই ক্যারিবিয়ান ১৪ বলে ৩০ রান করে ম্যাচ আবারও নিজেদের আয়ত্ত্বে নিয়ে আসতে শুরু করেন। তবে তিনি ফিরে গেলে আরও একবার পেন্ডুলাম ম্যাচের ভাগ্য। রনি তালুকদার ও অধিনায়ক সোহান দায়িত্ব নিয়ে নাস্তানাবুদ করেন সিলেটের সকল পরিকল্পনা। ম্যাচটা বের করে নিয়ে আসতে শুরু করে এই জুটি। এই জুটির কোন প্রতিকার যেন জানা ছিল না সিলেটের।
তবে ১৮ তম ওভারের আগে ফিল্ডিং জনিত কারণে বেশ লম্বা বিরতি ঘটে খেলাতে। সেখানেই মোমেন্টাম ও মনোযোগ হারিয়ে ফেলে সোহান ও রনি। আর ফায়দাটা তুলে নেয় সিলেট। সোহানকে ফেরান সাকিব। আর রনি ফেরেন রান আউট হয়ে।
ব্যাস, এবার পেন্ডুলাম সিলেটের পক্ষে। সমীকরণ কেবলই জটিল হতে থাকে রংপুরের জন্যে। জয়ের জন্যে শেষ ওভারে ২৮ রান প্রয়োজন ছিল রংপুরের। শুরুর দুই বলে বাউন্ডারি হজম করলেও আর কোন সুযোগই দেননি রুবেল। শেষ অবধি ১৯ রানের জয় নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে মাশরাফির দল।