এক ক্যাচেই বদলে গেল জীবন

সেদিন সন্ধ্যায় মাঠ থেকে ফেরার পর থেকেই কিরণ তারলেকারের ফোনে বারবার মেসেজ আসছিলো। কিরণ প্রথমে বুঝতে না পারলেও, কিছুক্ষণ বাদেই টের পেয়ে যান কি অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি। বাউন্ডারি সীমানায় দাঁড়িয়ে তাঁর অ্যাক্রোবেটিক শটে ক্যাচে পরিণত করার ভিডিওটা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকার শেয়ার করেছেন ভিডিওটা, প্রশংসা করেছেন কিরণেই। তাতেই যেন বদলে গেল বেলগামের এই টেপ টেনিস  ক্রিকেটারের জীবন। 

গত তিন দিন ধরেই ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে কিরণকে। একের পর এক সাংবাদিক এসেছেন তাঁর কাছে, সাক্ষাৎকার দিতে হয়েছে তাঁকে। কর্ণাটকের প্রত্যন্ত গ্রাম বেলগামের কোনো ক্রিকেটারকে নিয়ে এমন হুল্লোড় আশ্চর্য ঘটনাই বটে। 

কি ছিল সেই ভিডিওটিতে! ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায় সাইরাজ ওয়ারিহর্সের ক্রিকেটার কিরণ বাউন্ডারি সীমানায় দাঁড়িয়ে ছক্কা হতে যাওয়া একটি বলকে কি অবলীলায় বাইসাইকেল কিকে মাঠের ভিতরে পাঠালেন এবং তাঁর সতীর্থ সহজেই ক্যাচটি লুফে নিলেন।

কিরণের বাইসাইকেল কিকটা এতটাই অসাধারণ ছিল যে পেশাদার ফুটবলাররাও হিংসে করবেন। তাছাড়া ক্রিকেট মাঠে এমন উদ্ভাবনী চিন্তা আসাটাই তো চমকপ্রদ। বিশ্বজুড়ে তাই প্রশংসায় ভাসছেন কিরণ। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন তো এই ক্যাচটিকে সর্বকালের সেরা ক্যাচ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েই দিয়েছেন। 

কিরণ অবশ্য এখনো শচীনের বুঁদ হয়ে আছেন। তাঁর ভাষ্যে ক্রিকেট ঈশ্বরের প্রশংসা পেয়েছেন, জীবনে আর কিছু প্রয়োজন নেই তাঁর। তবে ম্যাচের ওই সময়ে কি ভাবছিলেন কিরণ? তিনি বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল সীমানার বাইরে না যাওয়া। কিন্তু যখন আর ভারসাম্য রাখতে পারলাম না তখন ভাবলাম ফ্লাইং কিকের চেষ্টা করেই দেখি কি হয়। ভাগ্য ভালো ছিল বলটা সোজা গিয়ে কুনালের হাতেই পড়লো।’ 

টেন্ডুলকার তাঁর টুইটে লিখেন, ‘এটাই ঘটে যখন আপনি ক্রিকেট মাঠে এমন একজনকে আনেন যে কিনা ফুটবলও খেলতে জানে।’ কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ২৮ বছর বয়সী কিরণ ফুটবল খেলেন না। তবে এমন অ্যাক্রোব্যাটিক দক্ষতার জন্য সে কৃতিত্ব দেয় ভারতীয় আর্মির পরীক্ষা দেবার জন্য প্রস্তুতির সময়টাকে।

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা এবং বড় ভাই আর্মিতে আছেন। আমিও তাই আর্মিতে যেতে চেয়েছিলাম। সে সময়ে প্রস্তুতির জন্য প্রতিদিন দশ কিলোমিটার দৌড়াতাম। তাই আমার ফিটনেস ভালো। আমি এখনো প্রতিদিন পাঁচ কিলোমিটার দৌড়াই।’

তবে তাঁর ক্যাচ নিয়ে বিতর্কও হয়েছে বিস্তর। মাঠের আম্পায়ার আউট দিলেও অনেকেই দাবি করছেন এটি আসলে নট আউট। সেই ম্যাচের ব্রডকাস্টার গজানন জাইনোজি বলেন, ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে থার্ড আম্পায়ারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মাঠের আম্পায়ার। তিনটি ভিন্ন অ্যাংগেল থেকে দেখার পর তিনি আউটের সিদ্ধান্ত দেন। আপনি যখন ভিডিওটি দেখবেন, তখন খেয়াল করবেন বলটি কিক করার সময়ে তাঁর পা মাটি থেকে উপরেই ছিল। আমরা প্রতি মাসে ১০০ এর বেশি ম্যাচ ব্রডকাস্ট করি, কিন্তু কখনো এমন কিছু দেখিনি।’

পেশায় কিরণ একজন টেপ টেনিস ক্রিকেটার। স্থানীয় টুর্নামেন্টগুলোতে খেলার মাধ্যমে যা আয় হয়, সেটা দিয়ে নিজের পড়ালেখার পাশাপাশি পরিবারে সাহায্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি দিনে তিন থেকে চারটি ম্যাচ খেলি। চার কিংবা পাঁচটি টুর্নামেন্ট বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত হতেই থাকেই এবং প্রতিটাতেই আলাদা আলাদা প্রাইজমানি থাকে।’

এর আগে ২০১৯ সালে কিরণ ঈশান কিষাণ, প্রিয়াংক পাঞ্চালদের বিপক্ষে নেটে বোলিং করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা এ বনাম ভারত এ দলের ম্যাচে আমি শ্রীলংকা দলের নেট বোলার ছিলাম। তবে ম্যাচের শেষে ঈশান কিষাণ এবং প্রিয়াংক পাঞ্চালদের বিপক্ষেও বল করেছি।’

গত কয়েকদিনে জীবনটা বদলে গেছে কিরণের, বেলগামে সে এখন তারকাই বটে। তবে তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই শচীন টেন্ডুলকারের সাথে দেখা করা। তাঁর ভাষায়, ‘শচীন স্যার আমাকে নিয়ে টুইট করেছেন এবং ঈশ্বর কৃপা করলে আমি একদিন হয়তো তাঁর সাথে দেখাও করতে পারবো।’   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link