গত ছয় বছরে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি কোনো সফরকারী দল। সেই রেকর্ড ভাঙার একেবারেই দ্বারপ্রান্তে ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ফাস্ট বোলার নিল ওয়াগনারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে অবিশ্বাস্যভাবে নাটকীয় এই টেস্ট এক রানে জিতে নিয়েছে কিউইরা। প্রায় দেড়শ বছরের টেস্ট ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় দল হিসেবে ফলো অনে পড়ার পরেও টেস্ট জিতল নিউজিল্যান্ড। এর আগে এমন কীর্তি ছিল কেবল ইংল্যান্ড ও ভারতের।
‘টেস্ট ক্রিকেট অ্যাট ইটস বেস্ট’ – ইংরেজি এই বাক্যটি বোধহয় বেসিন রিজার্ভ টেস্টের ক্ষেত্রে পুরোপুরি মিলে যায়। টেস্টের পঞ্চম দিনে চরম রোমাঞ্চ উপহার দিয়েছে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট।
নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ইংল্যান্ডের লাল বলের কোচ হয়ে আসার পর থেকে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের খোলনলচে পাল্টে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। বেন স্টোকসের দল টেস্ট টাও খেলে টি-টোয়েন্টির মত করে। সেই ইংল্যান্ডই কিনা ২৫৮ রান তাড়া করতে পারেনি।
প্রথম ইনিংসে ৪৩৫ রান করার পর সেই রানকেই যথেষ্ঠ মনে করেছিল ইংল্যান্ড। হ্যারি ব্রুক আর জো রুটের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংস শেষেই নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশের স্বপ্নও দেখছিল ইংলিশরা। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের পর সেই আশার পালে আরো হাওয়া লাগে। টপ অর্ডারদের চরম ব্যর্থতায় মাত্র ২০৯ রানে অল আউট হয় কিউইরা। ইনিংস ব্যবধানে জয়ের আশায় নিউজিল্যান্ডকে ফলো অনে পাঠায় ইংল্যান্ড।
তবে অধিনায়ক বেন স্টোকস নিউজিল্যান্ডেকে পুনরায় ব্যাটিংয়ে পাঠালেও দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরি ও টম ব্লান্ডেলের ৯০ রানে ৪৮৩ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের লিড দাঁড়ায় ২৫৭ রানে।
২৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১ উইকেটে ৪৮ রানে চতুর্থ দিন শেষ করেছিলো ইংল্যান্ড। শেষ দিনে ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ২১০ রানের লক্ষ্যটা দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইংল্যান্ডের জন্য মামুলিই মনে হচ্ছিল। কিন্তু সিরিযে নিজের সেরা স্পেলটা করার জন্য ওয়েগনার বেছে নিলের পঞ্চম দিনটিকেই। শুধু ওয়েগনার নয়, টিম সাউদি, ম্যাট হেনরিদের দারুণ বোলিংয়ে প্রথম সেশনেই চার উইকেট হারায় ইংলিশরা।
এক প্রান্ত আগলে রাখা রুট তখনো আছে ক্রিজে।৮০ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পরেও দলকে জয়ের পথে ভালোই এগিয়ে নিচ্ছিলেন রুট আর স্টোকস। লাঞ্চের পরেও ৫ উইকেট হাতে রেখে ইংল্যান্ডের দরকার আরো ৯০ রান।
ওয়াগনারের বাউন্স আর গতিতে পরাস্থ হয়ে আউট হন বেন স্টোকস, জো রুটরা। ওয়াগনার রুটকে আউট করার পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি ইংল্যান্ড। জো রুটের ৯৫ রানের পর বেন ফোকস ৩৫ রান করলেও তা যথেষ্ট হয়নি ইংল্যান্ডের জন্য। শেষ পর্যন্ত ২৫৬ রানে অল আউট হয় ইংল্যান্ড।
প্রথম টেস্ট জিতে আগেই ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ড অপেক্ষায় ছিল ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার। কিন্তু নাটকের চেয়েও নাটকীয় হয়ে ওঠা টেস্ট ১ রানে জিতে ঘরের মাঠে নিজেদের সিরিজ না হারার রেকর্ড ধরে রাখল উইলিয়ামসম, ওয়েগনাররা।