ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই স্নায়ুশক্তির লড়াই। ভারতের টেন্ডুলকার-গাঙ্গুলি-দ্রাবিড়দের ব্যাটিং লাইনআপের সাথে পাকিস্তানের ওয়াসিম-ওয়াকার-মুস্তাকের বিখ্যাত বোলিং লাইন আপের দ্বৈরথটা এখনো স্পেশাল ক্রিকেট রোমান্টিকদের কাছে।
১৯৯৯ সালে চেন্নাই টেস্টে পাকিস্তানকে প্রায় একাই হারিয়ে দিচ্ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। কিন্তু ওমন পরিস্থিতি থেকেও টেন্ডুলকারকে আউট করার মাধ্যমে সেই ম্যাচে জয় পায় পাকিস্তান। সেই টেস্টের নাম লেখা হয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়।
ওয়াসিম আকরাম আর শচীন টেন্ডুলকারের লড়াইটা ছিল ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা। ১৯৯৯ সালে ওয়াসিম যখন পাকিস্তানের অধিনায়ক তখন স্মরণীয় এক টেস্ট জিতেছিলেন চেন্নাইতে। সেই টেস্ট জেতার স্মৃতিচারণ করে স্পোর্টসস্টারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়াসিম বলেন, ‘চেন্নাই টেস্ট আমার কাছে স্পেশ্যাল। সাকলাইন মুশতাকের মতো বিশ্বসেরা বোলার আমাদের কাছে থাকা সত্ত্বেও অনায়াসে খেলে যাচ্ছিল শচীন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম ইনিংসে সাকলাইনের দুসরাও সে খুব সহজেই খেলেছে। প্রতিবার সাকলাইন দুসরা দেওয়ার সময় উইকেট কিপারের পিছন দিয়ে ল্যাপ শট খেলছিল শচীন, যা সেই সময় দেখাই যেত না। এসব কারণেই শচীন সর্বকালের সেরাদের একজন।’
আকরাম আরো বলেন, ‘আমি এখনো মনে করতে পারি ম্যাচটা কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা-পূর্ণ ছিল। ভারতের জয়ের জন্য ২০ রান মতো দরকার ছিল এবং শচীন ১৩৬ রানে ব্যাট করছিল। তখন প্রত্যেক ফিল্ডার বাউন্ডারিতে। শচীনের বিপক্ষে বল করছিল সাকলাইন। আমি তাকে বললাম, অফস্টাম্পের বাইরে দুসরা করতে এবং হাওয়ায় বলটা ভাসিয়ে দিতে।’
রোমাঞ্চকর সেই মুহূর্তের স্মৃতিচারণা করেন ওয়াসিম। তিনি বলেন, ‘তাহলে শচীন মিডউইকেট দিয়ে মারার চেষ্টা করবে এবং ক্যাচ ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ঠিক সেটাই হয়েছিল! শচীন ছক্কা মারতে যাওয়ায় বল তার ব্যাটের কানায় লেগে আমার হাতে চলে আসে। আমরা ম্যাচটা জিতে যাই।’
ম্যাচের ফল নির্ধারণী সেই ক্যাচটি ধরার পর বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেনি ভারতের টেল এন্ডাররা। হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচ শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান জিতে যায় ১২ রানে। এমন স্মরণীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা-পূর্ণ এক ম্যাচ জেতার পর দল নিয়ে মাঠের চারদিকে ‘ভিক্টরি ল্যাপ’ দেন ওয়াসিম আকরাম।
ওয়াসিম বলেন, ‘প্রায় ৪০ হাজার মানুষ তখন চিৎকার করছিল যখন আমি শচীনের ক্যাচটি ধরতে যাচ্ছিলাম। ভারতের বিপক্ষে জেতা এমনিতেই অনেক বড় কিছু কিন্তু চেন্নাইয়ের দর্শকরা দাঁড়িয়ে আমাদের অভিবাদন জানিয়েছিল তাতে আমরা খুব অবাক হয়েছিলাম। চেন্নাই টেস্ট আমার কাছে সব সময়ই বিশেষ হয়ে থাকবে ম্যাচের নাটকীয়তা, দর্শকদের অভিবাদন, আর সফরের ঘটনাপ্রবাহের জন্য। আমার ক্যারিয়ারে খেলা অন্যতম সেরা টেস্ট এটি। তাই চেন্নাইয়ের মানুষদের আমি ধন্যবাদ জানাই।’