সাদা পোশাকে লোকেশ রাহুলের সাম্প্রতিক ফর্মটা বড্ড সাদামাটা। শেষ ১০ ইনিংসে নেই কোনো অর্ধশতক। সবশেষ ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন সেই এক বছর আগে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এরপর থেকেই যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন লোকেশ রাহুল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাটিতে হওয়া সিরিজেও ব্যাট হাতে বিবর্ণ তিনি। নাগপুর থেকে দিল্লী টেস্ট, কোনোটাতেই নিজের ভাগ্য বদলাতে পারেননি।
তবে টানা ব্যর্থতায় নিজের ভাগ্যটাই বদলে যায় কিনা! আপাতত চারপাশের আলোচনা, সমালোচনা একটা গুঞ্জনকে সত্য প্রমাণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। লোকেশ রাহুলের জায়গায় আগামী টেস্টে আসতে পারেন শুভমান গিল। যিনি কিনা এই মুহূর্তে দলে সবচেয়ে ছন্দে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন। এমন ফর্মে থাকা ব্যাটারকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখার কোনো মানেই খুঁজে পাচ্ছেন না ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।
ভেঙ্কাটাশ প্রসাদ থেকে শুরু করে হরভজন সিং, এমনকি সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রীও একাদশে দেখতে চান শুভমান গিলকে। তবে বর্তমান কোচ রাহুল দ্রাবিড় পরবর্তী টেস্টের জন্য সম্ভাব্য একাদশ নিয়ে তেমন কিছু বলেননি। অধিনায়ক রোহিত শর্মাও এক প্রকার নিশ্চুই আছেন। তবে লোকেশ রাহুলের কাঁধে থাকা সহ-অধিনায়কের দায়িত্বটা এরই মধ্যে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আর এর পর থেকেই অনেক ধরেই নিয়েছেন যে, হয়তো পরের টেস্টের জন্য লোকেশ রাহুলকে বিবেচনা করা হচ্ছে না।
রাহুলকে মূলত এতদিন সুযোগ দেওয়া হচ্ছি বিদেশের মাটিতে দুর্দান্ত পরিসংখ্যানের কারণে। টেস্ট ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৭ সেঞ্চুরির ৬ টিই করেছেন বাইরের মাটিতে। তবে ক্যারিয়ার সেরা ১৯৯ রানের ইনিংসটি আবার খেলেছিলেন দেশের মাটিতে। সব মিলিয়ে একটা সময় পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের অন্যতম সম্পদ বিবেচনা করা হতো লোকেশ রাহুলকে। কিন্তু শেষ দুই বছরে, সেই প্রত্যাশায় একটা বাঁধা পড়েছে। ম্যাচের পর ম্যাচ খেলে যাচ্ছেন। কিন্তু ব্যাট হাতে রান নেই। টেস্টে অফফর্মের প্রভাব পড়েছে বাকি দুই ফরম্যাটেও।
এমতাবস্থায় লোকেশ রাহুলকে ফেরানোর দিকেই নজরে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের। তাই চারপাশের আলোচনা, সমালোচনাকে উপেক্ষা করে পরের একাদশেও রাহুলকে রাখতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। দল যেহেতু সফলতা পাচ্ছে, তাই রাহুলকে বাদ দেওয়ার তাড়াহুড়ো না করার সম্ভাবনায় বেশি।
তবে শুভমান গিলকে কেন শুধু ওপেনার হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে? এই সিরিজের দলে নেই ঋষাভ পান্ত। প্রথম টেস্টে ছিলেন না শ্রেয়াস আইয়ারও। দলের দুই সেরা মিডল অর্ডার ব্যাটার ছিলেন না। তারপরও তাদের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে কি শুভমান গিলকে কি বিবেচনাই করা হয়নি? এমন প্রশ্ন অনুমিতভাবেই আসে।
তবে শুভমান গিলের সুযোগ যে খুব শীঘ্রই আসছে, তা এক প্রকার নিশ্চিতই। প্রথমত ওপেনার হিসেবে গিল এখন পর্যন্ত দারুণ এক অপশন। তবে ভবিষ্যত বিবেচনায়, চেতেশ্বর পুজারার জায়গাটাও নিতে পারেন তিনি। আগের ম্যাচ দিয়েই ক্যারিয়ারে শততম টেস্ট খেলার মাইলফলক ছুঁয়েছেন পুজারা। তবে পুজারা ঠিক আগের মতো ছন্দে নেই। তার উপর বয়স বেড়েছে। সব মিলিয়ে গিল এখন শুধু রাহুলের জন্যই হুমকি নন। একই সাথে পুজারার জন্যও অস্বস্তির কারণ হতে পারেন গিল।
ভারতের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম বলছে, ইন্দোরে হওয়া আগামী টেস্টেই একাদশে থাকবেন শুভমান গিল, বাদ পড়বেন লোকেশ রাহুল। এমনটা হলে, রঙিন পোশাকের ফর্ম সাদা পোশাকেও ছড়িয়ে দেওয়ার আরেকটা সুযোগ পাবেন গিল। এর আগে ১৩ টেস্টে ৩২ গড়ে ৭৩৬ রান করেছেন তিনি। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আগামী টেস্টে সুযোগ পেলে, এই গড়পড়তা পরিংসংখ্যানকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার দিকে চোখ থাকবে শুভমান গিলের।