দাপুটে শুরু নয়, কিন্তু দুইশো রানে প্যাকেট হয়ে যাওয়ার মতোও ছিল না। অন্তত আড়াইশো রান অনায়াসে ছোঁয়া যেত। ডেভিড মালানের মতো কোনো ব্যাটার টিকে থাকলে হয়তো আরো বড় সংগ্রহও সম্ভব ছিল। কিন্তু কোনোটিই হয়নি। শান্ত ছাড়া ব্যাট হাতে কেউই জ্বলে উঠতে পারেননি। বাংলাদেশ ইনিংসের জ্বলন্ত শুরুও তাই শেষ দিকে নিভে গিয়েছে পঞ্চাশ ওভারের কোঠা না পূরণ হতেই।
বাংলাদেশি ব্যাটারদের মতোই ইংলিশ ব্যাটাররাও যেন উইকেটে টিকে থাকার কোনো পথ খুঁজে পেলেন না। ২১০ রানের লক্ষ্যে সবাই একে একে সাজঘরে পথ ধরলেন। তাতে জমে গেল ম্যাচ। দুর্দান্ত বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে টাইগাররাও জয়ের পথে চোখ রাখছিল। কিন্তু সব কিছুই ভস্ম হয়ে গিয়েছে এক মালানের বীরত্বে। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন। টিকে রইলেন শেষ পর্যন্ত। আর তাতেই ইংলিশদের এক প্রকার খাদের কিনারা থেকেই রক্ষা করেছেন এ বাঁহাতি ব্যাটার।
বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে প্রত্যাশিত রান যোগ হয়নি। একই সাথে কেউ ডেভিড মালান হতে পারেননি। কারণে দুই দলের পার্থক্য যে তৈরি করে দিয়েছে ঐ মালানময় ইনিংসই। দিনশেষে তাই তামিমের কন্ঠে আক্ষেপের সুর। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কোনো রকম কিছু না লুকিয়েই সব আক্ষেপ প্রকাশ করে দিলেন। অবশ্য ম্যাচ হারের পরে টাইগার কাপ্তানদের আক্ষেপ ঝেড়ে দেওয়া নতুন কিছু নয়।
সেই পুরনো অভ্যাসকে পুঁজি করেই তামিম ইকবাল বললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এটা আড়াইশো রানের উইকেট হবে। আমরা সেই লক্ষ্যেও ছিলাম। কিন্তু একটা সময় পর আমরা খুব দ্রুত উইকেট হারিয়ে ফেল। আমি বোলিং আর ফিল্ডিং যথেষ্ট ভাল করেছি। কিন্তু দিনশেষে মালানের ইনিংসটা পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ম্যাচ জেতার জন্য, আপনাকে মাঝে মধ্যে মালানের মতো ইনিংসও খেলতে হবে।’
তামিমের সাথে গলা মিলিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তও। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০ থেকে ৩০ রান কম হয়েছে। তবে, বোলিংয়ে আমাদের শুরুটা ভাল ছিল। ওদের ১০০ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট চলে যায়। আমাদের বোলাররা ভাল কামব্যাক করে। শেষটা ভাল হলে ম্যাচটা আমরা জিততে পারতাম।’
২১০ রানের লক্ষ্য থেকে ইনিংস বিরতির সময় অনেকেই ভেবে নিয়েছিল ম্যাচটা এক পেশে হতে যাচ্ছে। কিন্তু লো স্কোরিং ম্যাচেও লড়াইটা হয়েছে দুর্দান্ত। এক মালান বাদে ব্যাট হাতে আলো ছড়াতে পারেননি কেউ। তাইজুল, সাকিব, মিরাজদের স্পিনবিষে নীল হয়েছে ইংলিশদের ব্যাটিং লাইনআপ। কিন্তু মালানের একার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত পরাজয়ই বরণ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
অবশ্য এমন লড়াই হওয়া ম্যাচেও বাংলাদেশের কিছু ভুল চোখ এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। নাজমুল হোসেন শান্ত ৫৮ করে আউট হয়েছেন। কিন্তু উইকেট থিতু হয়ে যাওয়ার পর ইনিংস বিল্ডআপ না করতে পারা এক প্রকার ব্যর্থতাই। একই সাথে রিয়াদও আউট হয়েছেন বড্ড দু:সময়ে। লোয়ার মিডল অর্ডারে আফিফও কিছু করে দেখাতে পারেননি। কিন্তু যখন তিনি ব্যাটিংয়ে নামলেন তখনও প্রায় একশোটারও বেশি বল ইনিংসে পড়ে আছে। কিন্তু আফিফ ফিরেছেন দ্রুতই।
বোলিং ইনিংসের সময় মালানের একটা ক্যাচ ড্রপ করেছিলেন উইকেটের পিছনে থাকা মুশফিকুর রহিম। সুযোগটা সহজ ছিল না। কিন্তু এমন লো স্কোরিং ম্যাচে কাউকে সুযোগ দেওয়া মানে ম্যাচও হাত ফসকে যাওয়া। হয়েছেও তাই। ডেভিড মালান উইকেটে টিকে ছিলেন শেষ পর্যন্ত। ২১০ রানের লক্ষ্যে একাই ইনিংসে যোগ করেছেন ১১৪ রান।
অবশ্য সিরিজে সমতায় আনার সুযোগ এখনো টিকে থাকছে টাইগারদের জন্য। আগামী ৩ মার্চে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে আবারো মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড। প্রথম ম্যাচ হেরে এখন নিশ্চিতভাবেই পরবর্তী ম্যাচে জয়ের দিকেই চোখ থাকার কথা বাংলাদেশের। তবে পুরনো ভুলের পুনরাবৃত্তি হলে সিরিজ বাঁচানোর শেষ সুযোগটাও হারাবে টাইগাররা।