২০১৯ বিশ্বকাপের কথা। লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ। আগের ম্যাচেই ভারতের কাছে হেরে সেমিফাইনালের স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা তাই হয়ে উঠলো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
তবে এ ম্যাচ একদিক দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ঠাই পাওয়ার মতোই বটে। কারণ এ ম্যাচেই যে পঞ্চপাণ্ডবকে শেষবারের মতো এক সাথে খেলতে দেখা গিয়েছিল। মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ মিলে যে পঞ্চপাণ্ডব তা এ সময়ে এসেও অস্বীকার করার উপায় নেই।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থান পর্বে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন এ পাঁচ ক্রিকেটার। হ্যাঁ। বড় কোনো শিরোপা আসেনি। তারপরও এই পাঁচ জন একটা স্বপ্ন বুনেছিলেন। সে স্বপ্নযাত্রায় হয়তো তারা সফল হননি। কিন্তু অন্তত বড় স্বপ্নের পথে পা বাড়ানো সাহস জুগিয়েছেন নবীন ক্রিকেটারদের।
পঞ্চপাণ্ডব ভেঙ্গে গিয়েছে। কিন্তু মাশরাফি বাদে বাকি চারজন ঠিকই এখন পর্যন্ত দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। সাকিব, তামিম তো অধিনায়কত্বও করছেন। তাই সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রভাব রয়েছে আগের মতোই। তামিমের কাঁধে পঞ্চাশের ওভারের ক্রিকেট সামলানোর দায়িত্ব। আর বাকি দুই ফরম্যাটে নেতৃত্বে রয়েছেন সাকিব।
পঞ্চপাণ্ডব বাংলাদেশের সাফল্যের অগ্রযাত্রায় দারুণ ভূমিকা রেখেছেন। কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু একই সাথে আরেকটি প্রশ্ন চলে আসে। এই যাত্রায় তাদের প্রভাব কি একটুও তরুণ ক্রিকেটারদের গতিপথ রূদ্ধ করেনি? সাকিব ২০১৯ বিশ্বকাপের পর নিষিদ্ধ হলেন।
কিন্তু, নিষেধাজ্ঞা কাটানোর পরপরই তাঁকে দেওয়া হলো টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব। বিসিবি’র অসহায়ত্ব। দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো আর কেউ নেই। তাই নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ক্রিকেটারকে অধিনায়কত্বের ভার তুলে দেওয়ার মতো প্রায় বিরল কাজ করতে হলো।
তরুণদের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ নেই, এই কথাটা যত সহজ। ঠিক ততটাই সরলীকৃত, বিসিবি সিনিয়রদের তরী চেপেই এগিয়ে যেতে চেয়েছে। এর বাইরে আর কোনো বিশেষ পরিকল্পনা ছিল না বললেই চলে। তবে নতুন কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে নেতৃত্বের এ দিকটা নিয়ে অন্তত ভাবছেন। তাঁর পরিকল্পনায় রয়েছে তরুণ কিছু ক্রিকেটার যাদের উপরেই অর্পিত হবে আগামী দিনের নেতৃত্ব।
লাল বলের ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ মেহেদী হাসান মিরাজ। বল হাতে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ধারাবাহিক ছিলেন তিনি। সম্প্রতি ব্যাট হাতেও দলে দারুণ অবদান রাখছেন। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে দুইবার বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া এ অলরাউন্ডারকে অনেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনা করতেন।
তবে, ক্যারিয়ারে প্রায় ৭ বছর কাটিয়ে দিলেও এখনও অধিনায়কের আর্মব্যান্ডটা তিনি পাননি। তবে হাতুরুসিংহে ঠিকই তাঁকে টেস্ট দলের অধিনায়কত্বের জন্য ভাবছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে, আর ফর্মহীনতায় না পড়লে সাকিব পরবর্তী অধিনায়ক হতে পারেন মিরাজ।
ইংল্যান্ড সিরিজ শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে এসেই হাতুরু বলেছিলেন, তিনি আগামী দিনের নেতা খুঁজছেন। সেই ভাবনায় মিরাজ ছাড়াও বিবেচনায় রয়েছেন আরো তিন ক্রিকেটার। যাদের মধ্যে তিনি খুঁজে পেয়েছেন নেতৃত্বের রসদ। হাতুরুর সেই রাডারে রয়েছেন লিটন, তাসকিন আর শান্ত।
বাংলাদেশের বর্তমান দলটাই সেরা পারফর্মারদের একটা তালিকা করলে এই চারজনের নামই উঠে আসবে। বুঝাই যাচ্ছে, হাতুরু সেরা পারফর্মারদের হাতেই পরবর্তী নেতৃত্বের ভার তুলে দিতে চান। এমনিতে হাতুরু বরাবরই তরুণদের নিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে চান।
এটা তাঁর চিরায়ত কৌশল। সেই কৌশল মিলেছে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই। নাম্বার তিনে একজন নতুন ব্যাটারকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য সাকিবকে সরিয়ে এনেছেন পাঁচে। আর সাকিবের জায়গায় খেলিয়েছেন শান্তকে। শান্তও দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। করেছেন দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৮ রান।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মিরাজের কাঁধে টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি গেলে বাকি দুই ফরম্যাটে কে দল সামলাবেন? টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই মুহূর্তে সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। কিন্তু হাতুরুর হাবভাবে পরিস্কার, তাঁর পছন্দের পরবর্তী নেতাদের তালিকায় সোহান নেই। তাহলে সাকিবের পর এই ফরম্যাট নেতৃত্ব দিবেন কে?
যতটুকু ধারণা করা যেতে পারে, সাদা বলের ক্রিকেটে একজনকেই অধিনায়ক হিসেবে রাখতে চাইবে বিসিবি। আর সম্ভাব্য তালিকায় সেই দৌড়ে এগিয়ে থাকতে পারেন লিটন কুমার দাস। যদিও অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নিতে বরাবরই লিটনের একটা অনিচ্ছার কথা শোনা যায়। অবশ্য সেটা স্বল্পমেয়াদী অধিনায়কত্বের ক্ষেত্রে। এখন দীর্ঘ মেয়াদে লিটন নিশ্চিতভাবেই এ দায়িত্ব অগ্রাহ্য করতে পারবেন না।
তবে লিটন, মিরাজ, শান্ত নাকি তাসকিন, কে হচ্ছেন আগামীর নেতা? এ প্রশ্নের জট খুলতে এখনো বেশ কিছু সময়ের অপেক্ষা। তবে অতি নাটকীয় কিছু না ঘটলে, এই চার জনের মধ্যেই আপাতত খুঁজে নেওয়া যেতে পারে আগামী দিনের নেতৃত্ব।