টপ অর্ডার ধ্বস, টিপিক্যাল বাংলাদেশ

মিরপুরে ৩০০ রান তাড়া করে কখনও ম্যাচ জেতা হয়নি বাংলাদেশের। সেখানে তাদের সামনে ৩২৭ রানের লক্ষ্য। ম্যাচ জিততে হলে ইতিহাস বদলাতে হবে, অভাবনীয় কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু ইংল্যান্ডের দেওয়া পাহাড়সম লক্ষ্যের পথে শুরুতেই ধাক্কা।

৯ রানে নেই ৩ উইকেট। এক স্যাম কারেনকে সামলাতেই হিমশিম খেয়েছে টপ অর্ডার ব্যাটাররা। লিটন, শান্ত- দুজনেই ফিরেছেন প্রথম বলে, শূন্য রানে। সাথে মুশফিকও কিছুক্ষণ বাদে তাদের পথ ধরেই প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা দিয়েছেন। ফলত, উড়ন্ত শুরু তো দূরে থাক, আপাতত সম্মানজনক পরাজয় এড়াতে লড়ছে বাংলাদেশ।

অবশ্য, ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার ব্যাটাররা যে আজ খুব সফল ছিলেন, তা নয়। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ডেভিড মালান ফিরেছেন ১১ রানে। আর আগের ম্যাচের মতোই এ দিনের ব্যাট হাতে খুব একটা আলো ছড়াতে পারেননি ফিল সল্ট আর জেমস ভিন্স। দু’জনই আউট হয়েছেন এক অঙ্কের ঘরে ইনিংস খেলে।

তবে টপঅর্ডারের সব ঘাটতি এ দিন একাই পুষিয়ে দিয়েছেন জেসন রয়। সাকিবের বলে আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ১২৪ বলে ১৩২ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। ইংল্যান্ড ইনিংসের রানের চাকা সচল করার পরের দায়িত্ব টুকু নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন অধিনায়ক জশ বাটলার। আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও এ ম্যাচে খেলেন ৭৬ রানের একটি ইনিংস। শেষ দিকে মইন আলীর ঝড়ো ৪০ আর স্যাম কারেনের ৩৩ রানের ক্যামিওতে ৩২৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড।

মিরপুরের মাটিতে এমন সংগ্রহ অস্বাভাবিকই বটে। তবে ইংল্যান্ড তাদের পরিকল্পনায় আজ শতভাগ সফল ছিল। টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার, এমন কি লোয়ার অর্ডার- প্রত্যেক অর্ডারে কেউ না কেউ রান করেছেন। তাই নিজেদের ইনিংস শেষ হওয়ার পর যথারীতি চালকের আসনেই চলে যায় ইংল্যান্ড।

লিটন, শান্ত এরপর মুশফিক, এমন টপ অর্ডার ধ্বসের পরেও কি এখন বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরা সম্ভব? সম্ভব। তবে এই মুহূর্তে বেশ কিছু সমীকরণ মেলাতে হবে। কোনো এক ব্যাটারকে জেসন রয়ের ভূমিকায় আবর্তিত হতে হবে। মিডল অর্ডারে কাউকে বাটলারের মত ইনিংস খেলতে হবে। যিনি ইনিংস জুড়ে ক্যালকুলেটিভ ব্যাট করে যাবেন। আর শেষদিকে ছোট কিছু ক্যামিও ইনিংস। এমন সব শর্ত পূরণ হলেই জয়ের পথে চোখ রাখতে পারে বাংলাদেশ।

তবে বাংলাদেশি ব্যাটারদের সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণই বলা চলে। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর এখন পর্যন্ত ব্যাট হাতে কোনো সেঞ্চুরি পাননি সাকিব। ভারত সিরিজ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচে রান সংখ্যা দুই অঙ্কেও নিয়ে যেতে পারেননি আফিফ।

আর এমন বড় রান চেজে, রিয়াদ আক্রমণাত্বক ভঙ্গিতে দলকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। সব মিলিয়ে টপ অর্ডার ধ্বসের পর এখন জয়ের দিকে চোখ রাখাই যেন বড় বিস্ময়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে একই সাথে এমন পরিস্থিতি অনেকগুলো প্রশ্নের মুখেও দাঁড় করিয়ে দেয়। আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপ হবে ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে। তিন শতাধিক রান নিয়েও সে সব উইকেটে বড় দলের বিপক্ষে ডিফেন্ড করা বড্ড কঠিন হবে। আবার বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করতে হলে, বড় রান তাড়া করেও ম্যাচ জিততে হবে।

কিন্তু ক্রিকেটের এত বিবর্তনের পরেও, বাংলাদেশ সেই তিমিরেই রয়েছে। তিন শতাধিক রান চেজ করের জয়ের অভ্যাসটা গড়ে ওঠেনি। বড় দলের সাথে ব্যবধান তৈরি হয়ে যায় এখানেই। দিনশেষে তাই বাংলাদেশ নামের পাশে ‘সম্ভাবনাময়’ শব্দটাই আটকে থাকে, বড় দল নয়।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link