বাংলাদেশের নিজস্ব চ্যাম্পিয়ন

তিনি অপ্রতিরোধ্য, তিনি প্রতিবাদি। আগ্রাসনের আরেক রুপ। রেকর্ড বইয়েও বিচরণ যার নিত্যদিনের ঘটনা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ধ্রুব তারকা সাকিব আল হাসান। স্রোতের বিপরীতে যিনি চলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। স্রোতের বিপরীতে চলেই যেন নিজেকে প্রমাণ করে তৃপ্তি পান সাকিব আল হাসান।

কতশত রেকর্ডেই তো সাকিবের নাম যুক্ত হয়। আলোচনায় তিনি থাকবেন না সেটা হবারই নয়। প্রতিটা মুহূর্তই যেন তাঁকে ঘিরে ঘুরপাক খায় বাংলাদেশের ক্রিকেট। এই তো ক’দিন আগেও নতুন এক বিতর্কের সাথে নিজের নামটি খুঁজে পাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান। সেই বিতর্কের সমাপ্তি তিনি ঘটালেন দূর্দান্ত এক পারফরমেন্স দিয়ে।

হয়ত দলের সফলতার মানদণ্ডে এই অসাধারণ পারফরমেন্স খানিকটা খাটো করে দেখতে পারেন অনেকেই। তবে সাকিবের হাত ধরেই লজ্জার স্মৃতি অল্পের জন্যে পেরিয়ে যেতে পেরেছে টাইগাররা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোয়াইট ওয়াশের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড আর বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স বিচারে অনায়াসে জিতে যাওয়ার কথা ইংল্যান্ডের।

তবে তখনও তো সাকিবের ভেল্কি দেখানো বাকি। ঠিক কি কারণে তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, সে প্রমাণটা আরও একবার রাখলেন সাকিব আল হাসান। ব্যাট আর বলে তিনি একাই যেন হারিয়ে দিলেন উড়তে থাকা ইংল্যান্ড দলকে। বোঝালেন এখনও লড়াই করবার রসদ হারিয়ে ফেলেননি সাকিব কিংবা বাংলাদেশ।

তাইতো ইংল্যান্ডের বোলারদের বিপক্ষে চোখে চোখ রেখে ব্যাট করে গেছেন। যেখানে দলের বাকি ব্যাটাররা খাবি খেয়েছেন সেখানে সাকিব সাবলীলভাবেই ব্যাট করে গেছেন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৫ রান তিনি করেছেন ১০৫.৬৩ স্ট্রাইকরেটে। রান বিচারে এরপরের অবস্থানে থাকা মুশফিকুর রহিমের স্ট্রাইকরেট যেখানে প্রায় ৭৫।

তাইতেই প্রমাণ হয়ে যায় স্রোতের বিপরীতে ঠিক কতটা স্বচ্ছন্দে ছিলেন সাকিব আল হাসান। অবশ্য অনেকেই ধারণা করতে শুরু করেছিলেন সাকিবের সেই ফ্লেক্সিবিলিটি আর নেই। সেটার সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে হয়ত যেতে চান না সাকিব। নিজের যতটুকু সামর্থ্য আছে সেটুকু দিয়েই তিনি দলের পক্ষে লড়াইটা চালিয়ে যান। এদিন ব্যাট হাতে সেটাই করেছিলেন সাকিব। অকূল দরিয়ায় বাংলাদেশের তরীকে সঠিক পথেই রেখেছিলেন তিনি। সেখানেই অবশ্য গল্পের ইতি টেনে দেওয়া যায়।

তবে না খুব অল্পেই সাকিব সন্তুষ্ট হওয়ার পাত্র নন। নিজের দিনে প্রতিপক্ষের পূর্ণ পরীক্ষা নিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেন না সাকিব আল হাসান। সাগরিকায় ফর্মে থাকা সাকিবের দেখাটাই যেন পেল ইংলিশরা। ব্যাট হাতে সকল পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটান সাকিব। তবে ইংলিশদের পরিকল্পনার ছকে পানি ঢেলে দেন বল হাতে। তিনি শিকার করেন চারটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।

শুরুটা করেন আতংকের বিস্তার ঘটানো ফিল সল্টের উইকেট শিকার করে। এরপর আগের দিন সেঞ্চুরি হাকানো জেসন রয়ের উইকেট উপড়ে ফেলেন বা-হাতি এই স্পিনার। তখনও অবশ্য ম্যাচ থেকে একেবারেই ছিটকে যায়নি ইংল্যান্ড। ম্যাচ জয়ের আশাটা তখনও বেশ উজ্জ্বল ইংলিশদের। তবে সাকিব আবার নাছোড়বান্দা। তাইতো ক্রমশ হুমকি হয়ে ওঠা জেমস ভিন্সকেও ফেরালেন তিনি। সেখানেই বাংলাদেশকে ম্যাচ জয়ের পথটা দেখিয়ে দন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

সেখান থেকে বাকি কাজটুকু দলের বাকি সদস্যদের করত হতো। এদিন অবশ্য তাঁরা নিরাশ করেননি। কিন্তু তিন উইকেট নিয়েই স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ফেলেননি সাকিব। সেকারণেই হয়ত তিনি বিশ্বসেরা। আরও একটি উইকেট শিকার করেন তিনি ইংলিশদের ইনিংসের শেষভাগে। অভিষেক হওয়া রেহান আহমেদের প্রায় অসম্ভব এক ক্যাচ লুফে নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আর তাতেই সাকিবের ট্যালিতে আরও এক উইকেট।

এই উইকেটই সাকিবকে ভিন্ন এক রেকর্ডের মালিক হিসেবে গড়ে তোলে। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন সাকিব আল হাসান। তাছাড়া বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে পঞ্চম বোলার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে এমন কীর্তি গড়লেন সাকিব। এমন সহস্র একমাত্র কিংবা প্রথম ঘটনার অবতারণা ঘটিয়েছেন সাকিব। তাই সম্ভবত তাঁকে ভক্তরা পরম মমতায় ‘বাংলাদেশের প্রাণ’ বলেই ডাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link