এখানে সেখানে তো প্রায়ই লেখা হয় – সাকিব আল হাসান, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাকিবের এই ‘বিশ্বসেরা’র ট্যাগটার আদর্শ একটা টেমপ্লেট বলা যায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত শেষ ওয়ানডে ম্যাচটা। ৭৫ রান করেছেন, সাথে চার উইকেট নিয়েছেন। প্রতিপক্ষকে তিনি প্রায় একাই হারিয়েছেন।
আর এই ম্যাচে সাকিব এমন অনেক রেকর্ডই ছুঁয়েছেন, যা বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় যে – হ্যাঁ, সাকিব অলরাউন্ডার হিসেবে বিশ্বসেরাদেরই কাতারে। এই নিয়ে চতুর্থবারের মত এক ওয়ানডেতে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস ও চার উইকেট নিলেন সাকিব। ওয়ানডেতে এখানে তিনি সর্বোচ্চ।
দ্বিতীয় স্থানে আছেন দু’জন। পাকিস্থানের শহীদ খান আফ্রিদি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। এই সাবেক দুই ক্রিকেটার ওয়ানডেতে তিনবার করে ফিফটি করেছেন, আবার চার উইকেটও নিয়েছেন।
বিশ্বের সেরা বাঁ-হাতি স্পিনারদের তালিকা করলে আপনি সেখানে সাকিবকে রাখতে বাধ্য। আর ওয়ানডেতে এখানে সাকিবকে বলা যায় সর্বেসর্বা। সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে ৩০০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন তিনি।
২২৭ তম ম্যাচে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। এর আগে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ২৯১ তম ম্যাচে গিয়ে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। অবশ্যই ওয়ানডেতে তিনি অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক।
সাকিব আর ভেট্টোরি ছাড়া আর মাত্র একজন বাঁ-হাতি স্পিনারই ৫০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩০০ উইকেট নিয়েছেন। তিনি হলেন – শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়াসুরিয়া। লঙ্কান এই গ্রেট ৩২৩ উইকেট নেন ৪৪৫ ম্যাচ খেলে। আর ভেট্টোরি ৩০৫ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেন ২৯৫ তম ম্যাচে। নি:সন্দেহে সাকিব ছাড়িয়ে যেতে পারবেন এই দু’জনকেই।
সব মিলিয়ে ৩০০ উইকেট আর ছয় হাজার রান – ওয়ানডের এই অনন্য অলরাউন্ডার ক্লাবের সদস্য এখনও মোটে তিনজন। এখানে সর্বশেষ সংযোজন হলেন খোদ সাকিব আল হাসান। আর ক্লাবটিতে যোগ দেওয়া মাত্রই তিনি উঠে গিয়েছেন সবার চূঁড়ায়। কারণ, তিনিই যে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে গড়েছেন এই কীর্তি। ২২৭ ম্যাচে সাকিবের রান ৬৯৭৬।
এই ক্লাবের বাকি দু’জন হলেন জয়াসুরিয়া ও শহীদ আফ্রিদি। এর মধ্যে জয়াসুরিয়া রান করেছেন ১৩ হাজারের ওপরে। অন্যদিকে, আফ্রিদির রান আট হাজারের ওপরে। ফলে অন্তত আফ্রিদিকে সাকিব ছাড়িয়ে যেতেই পারেন। আফ্রিদির উইকেট সংখ্যা ৩৯৫। সেটাও চাইলে সাকিবের পক্ষে ভেঙে ফেলা খুব কঠিন হবে না।
আসলে, সাকিব বিশ্ব সেরাদের কাতারে উঠে গেছেন অনেক আগেই। এখন স্রেফ তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটে নতুন নতুন সব অর্জনের পালক যোগ হচ্ছে। আর সাকিব যখন মাঠে নামেন তখন তাঁর চেয়ে বেশি দলের প্রতি নিবেদন যেন আর কেউ দেখাতে পারেন না। সাকিব অবশ্যই বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড় নন, তবে অবশ্যই সবচেয়ে কার্যকর।
ওই নিবেদনটাই বাকিদের চেয়ে তাঁকে আলাদা করে তুলেছে। আর আলাদা বলেই মাঠের বাইরের ঘটনা তাঁকে খুব একটা ছুঁয়ে যায় না। ছুঁয়ে গেলেও পারফরম্যান্সে তার প্রভাব পড়ে না। বিশ্বসেরারা এমনই হন।