হাসান মাহমুদ, নামটা মনে রেখো

সিলেটের আকাশে তখন কালো মেঘ। একটু আগে যা একটু রোদ ছিল, তাও ঢেকে গিয়েছে মেঘের আচ্ছন্নে। সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ার একটা পূর্বাভাস। গ্রাউন্ডসম্যানরা কভার নিয়ে প্রস্তুত। কিন্তু হঠাতই ভোল পাল্টে গেল সিলেটের আবহাওয়ার।

বৃষ্টি নামল না। খেলাও বন্ধ হলো না। খুব সম্ভবত হাসান মাহমুদ নামক এক ঝড়েই সিলেট হয়ে উঠেছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাসের এক মঞ্চ। কারণ আইরিশদের ইনিংসের ঝড়ো হাওয়াটা যে বয়ে দিয়েছেন তিনিই। একাই নিয়েছেন ৫ টি উইকেট।

সিলেটের উইকেটে পেসাররা ভাল মুভমেন্ট পান। তাই অধিনায়ক তামিম ইকবালও শুরু থেকেই আইরিশদের চেপে ধরতে চাইলেন। ইনিংসের শুরুটা করলেন হাসান মাহমুদকে বোলিং প্রান্তে এনে।

কিন্তু, শুরু থেকেই আয়ারল্যান্ডের অতি সাবধানী ব্যাটিং! ৪ ওভার শেষে মাত্র ৮ রান। মজার ব্যাপার হলো, ইনিংসের প্রথম তিন ওভারের সবকটি বল একাই খেললেন স্টিফেন দোহানি।

আইরিশ দুই ওপেনার তখন হাসান মাহমুদ, তাসকিনদের পেসের সামনে দুর্ভেদ্য দেয়াল হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু সেই দেয়াল ভেঙ্গে দেওয়ার প্রথম কাজটা করলেন হাসান মাহমুদ।

ইনিংসের পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলটা ছুঁড়ে ছিলেন ফুল লেংথেই। তবে সিলেটের উইকেটে যে সিম মুভমেন্টের আশায় পেসাররা ছিলেন, তা হাসান মাহমুদ পান এই ডেলিভারিতেই। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে বলটা শেষ মুহুর্তে একটু ঘুরে গেছে। আর সেই বলটাই বাড়িয়ে খেলতে গিয়েছিলেন দোহানি। ব্যাস। আউটসাইড এজড হয়ে বলটা সোজা উইকেটরক্ষক মুশফিকের গ্লাভসে। স্টিফেন দোহানির বিদায়ে ১২ রানে প্রথম উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড।

দোহানির পরেই হাসান মাহমুদের শিকার আরেক ওপেনার পল স্টার্লিং। এবার হাসান মাহমুদ দেখালেন তাঁর ইনসুইং দক্ষতা। পল স্টার্লিংকে লেন্থেই বলটা করেছিলেন হাসান। কিন্তু কভার প্রান্তে শট খেলার আগেই স্টার্লিং লাইনটা মিস করে যান। ফলাফল, অপ্রত্যাশিত ইনসুইংয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন স্টার্লিং।

আইরিশদের ইনিংসের তৃতীয় আঘাতটাও হানেন হাসান মাহমুদ। তবে তার জন্য শেষ পর্যন্ত শরণাপন্ন হতে হয়েছে ডিআরএসের। স্টার্লিংয়ের মতো হ্যারি টেক্টরকেও ইনসুইংয়ে পরাস্ত করেছিলেন হাসান মাহমুদ। কিন্তু জোরালো আবেদনেও আম্পায়ার সাড়া দিলেন না। হাসান মাহমুদ সহ অধিনায়ক তামিম ইকবালও ভেবেছিলে বলটা ইনসাইড এজ হওয়ার পর পায়ে লেগেছে।

তবে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম আত্মবিশ্বাসী ছিলেন শুরু থেকেই। শেষ মুহূর্তে গিয়ে এলবিডব্লুর রিভিউটা নেন তামিম ইকবাল। পরে টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখা গেল, ব্যাটে লাগার আগে হাসান মাহমুদের বলটা ছুঁয়ে গেছে টেক্টরের প্যাড! অর্থাৎ আউট। হাসান মাহমুদ পেয়ে যান তাঁর তৃতীয় উইকেট।

অবশ্য সে ওভারেই পেতে পারতেন চতুর্থ উইকেটটিও। হাসানের করা অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ তুলেছিলেন উইকেটে আসা লরকান টাকার। কিন্তু সেই ক্যাচটি আর লুফে নিতে পারেননি স্লিপে থাকা লিটন দাস।

তবে সেটি না হলেও আইরিশদের ইনিংসের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়ার কাজটা ঠিকই সেরে ফেলেন হাসান মাহমুদ। তাঁর বোলিং তোপের পর আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। শুরুর মতো শেষটিও করেন হাসান মাহমুদ। আইরিশদের ইনিংসে শেষ দুই উইকেট তুলে নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফারের স্বাদ পান এ পেসার।

ইনিংসের ২৭ তম ওভারে হাসান মাহমুদের করা শর্ট বলে পুল করেছিলেন কার্টিস ক্যাম্ফার। কিন্তু সেই শট আর সীমানা অতিক্রম করতে পারেনননি তিনি। ডিপ ফাইন লেগে থাকা তাসকিনের তালু-বন্দী হয় বলটি। হাসান মাহমুদ পান চতুর্থ উইকেটের দেখা। আর পরের ওভারেই এসে গ্রাহাম হিউমকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে বল হাতে ক্যারিয়ারে প্রথম ৫ এর চক্র পূরণ করেন হাসান মাহমুদ।

হাসান মাহমুদের ফাইফারের দিনে অনন্য এক রেকর্ড গড়েছে পেসাররা। আইরিশদের ইনিংসের ১০ টি উইকেটই তুলে নিয়েছে পেসাররা। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যা প্রথমবারের মতো ঘটলো। হাসান মাহমুদের ৫ উইকেটের পাশাপাশি তাসকিন ৩ টি আর এবাদত হোসেন নিয়েছেন ২ টি উইকেট।

হাসান মাহমুদ পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে মোটেই নিয়মিত নন। দুই বছরের ক্যারিয়ারে সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ৮ টি ম্যাচে। যার মধ্যে আবার শেষটি খেলেছেন ৩ মাস আগে। যদিও বৃষ্টিতে ভেজা এই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশের ছিলেন তিনি। কিন্তু সম্ভাবনাময় এ পেসার যেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বরাবরই সম্ভাবনার গল্প লিখেছেন। এবার তাঁর প্রতিফলন মিললো এক দিনের ক্রিকেটেও। এমন আগ্রাসী হাসান মাহমুদের পথচলা হোক আরো দীর্ঘ। ঠিক তাঁর স্বপ্নের মতো, ৫০০ উইকেট নেওয়ার।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link