আরেকবার বিগব্যাশ মাতালেন মুজিব-উর রহমান।
ব্রিসবেন হিটের হয়ে আফগান স্পিনার মুজিব-উর রহমান নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে চার ওভারের স্পেলে পাঁচ উইকেট নেওয়া ভীষণ দুরূহ কাজ। সেই ভীষণ দুরূহ কাজটা মুজিব করেছেন আরো দুর্দান্তভাবে! ৪ ওভারে ১৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট- ইকোনমি রেট ৩.৮! ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টিতে এরকম বোলিং ফিগারের প্রশংসা করার মত ভাষা আসলে অভিধান ঘেঁটে খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
তা সেই দুস্কর প্রশংসা আরো কঠিন হয়ে যাবে যখন আপনি জানবেন পাঁচ উইকেটের চারটেই এসেছে ক্লিন বোল্ডে! একটু খেয়াল করে দেখুন, ক্রিকেট ম্যাচে একজন স্পিনারের প্রভাব ঠিক কতটা বেশি হলে পাঁচ উইকেটের চারটেতেই ক্লিন বোল্ডে উইকেট আদায় করে নেওয়া যায়!
আফগানিস্তান কোচ অ্যান্ডি মোলস মুজিবকে বলতেন ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’।
বলার পেছনে কারণও ছিল। কাগজে কলমে মুজিব একজন স্পেশালিস্ট অফ স্পিনার। কিন্তু মুজিব শুধুমাত্র অফ স্পিনেই নিজেকে আটকে রাখেননি; শিখে নিয়েছেন লেগ স্পিনটাও। সেই শেখা এতটাই ভয়ংকর যে তিনি পুরোদস্তুর লেগিদের মত গুগলিও ছুড়তে পারেন। আর সত্যি বলতে, মুজিবকে এতসব করতেই হত। মাত্র ষোল বছর বয়স থেকেই তিনি রশিদ খানের উত্থান দেখে আসছেন। আর নিজে যখন স্পিনার হিসেবে আফগানিস্তান ক্রিকেটে আবির্ভূত হলেন, তাঁর ওপরও আরেকটা রশিদ খান হবার চাপ ছিল। পরিবেশ আর পরিস্থিতিই এই চাপ তৈরি করে দিচ্ছিল।
মুজিব প্রথম হেডলাইনে আসেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সময়; বাংলাদেশের সাথে এক ওয়ানডে সিরিজে। নতুন বলে বল করতে পারেন, নতুন বল ব্যাবহার করতে পারেন পুরোপুরিভাবে। আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দল তাই সেই সিরিজে বেশিরভাগ ম্যাচে বোলিং শুরু করেছে মুজিবকে দিয়ে। সেই পরিকল্পনা যে সফল তা তো প্রথম ৩ ম্যাচে ৮ উইকেট নেওয়াতেই প্রমাণ হয়ে যায়। সেই সিরিজেই একটা ম্যাচে মুজিব ৭ উইকেট নিয়েছিলেন ১৯ রানের বিনিময়ে, যেটা কিনা অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটের ইতিহাসেই দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার।
পুরো সিরিজটাতেই মুজিব ছিলেন হেডলাইনের আলোয়। সিরিজ শেষে দেখা গেল মুজিবের নামের পাশে ১৭ উইকেট, যেটা কিনা যুব ওয়ানডের ইতিহাসে এক সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড!
এভাবেই মুজিব পুরো ক্রিকেট বিশ্বের আলো কেড়ে নিয়েছিলেন। অবশ্য আজকাল শুধু আলো কাড়লেই চলেনা। এক সিরিজে আলো কেড়ে নিভে যাওয়া নক্ষত্র তো আর কম নেই। মুজিবকে তাই তার ওপর পড়া পাদপ্রদীপের শিখাকে জিইয়ে রাখতে হত । তা তিনি সেটা ভালভাবেই করেছেন।
তবে তার জন্যে মুজিবের সুযোগের দরকার ছিল। সেই সুযোগ মুজিবের মিলল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে যখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স তাকে দলে টানে ২০১৭-২০১৮ মৌসুমে। মোটামুটি একটা টুর্নামেন্ট কাটালেও তিনি কখনই থেমে যাননি।
মুজিবের খেলা অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের কথাই ধরুন। ২০১৭ সালের যে ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ওরা শিরোপা জেতে, সে ম্যাচেও মুজিব নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। ফাইনালে ওঠানোর ম্যাচ সেমি-ফাইনালেও মুজিব তুলে নিয়েছিলেন নেপালের ছয়টা উইকেট। পুরো টুর্নামেন্ট শেষে দেখা গেল মাত্র ৫ ম্যাচেই মুজিবের নামের পাশে ২০ উইকেট!
এরপর বিশ্বকাপের কথাই ধরুন। মুজিব এর আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দল সেবার সেমি-ফাইনাল খেলেছিল। তা সেই রাস্তাটা কিন্তু কঠিন ছিল না মোটেও। সেমি-ফাইনাল খেলতে হলে হারাতে হত নিউজিল্যান্ডকে। তখনও নিউজিল্যান্ডের চারটে উইকেট তুলে নিয়ে দলের জয়ের রাস্তা সোজা করে দিয়েছেন মুজিব।
এর কয়েকদিন পর সম্ভবত সবচাইতে সেরা সুযোগটা আসে মুজিবের সামনে। প্রীতি জিনতার কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ৪ কোটিতে রূপিতে দলে টেনে নেয় মুজিবকে; আইপিএল-২০১৮ তে সুযোগ পেয়ে যান মুজিব!
সেই যে আইপিএলে সুযোগ মিলল, আস্তে আস্তে বিগ ব্যাশ, সিপিএল কোথায় সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। দিনে দিনে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর পাখির চোখ হয়ে যাচ্ছেন মুজিব।
তবে এত কিছু পরও মুজিব কিন্তু আফগানিস্তানের হয়ে এতটা আলোচনায় থাকেন না। না থাকার কারণটাও অনুমেয়- রশিদ খান। দলে রশিদ খানের মত কেউ থাকলে যে কিনা ৬ বলে ভিন্ন ৬ টা ডেলিভারি করতে পারে, মুজিব একটু আলোর বাইরে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে মুজিব কিন্তু হাল ছাড়ছেন না। তিনি নিজের মত করে এগিয়ে যাচ্ছেন। সেই এগিয়ে যাওয়াটা যে বেশ আলোয় উদ্ভাসিত পথে হচ্ছে তা তো দেখা গেল!