নানা ঘাত প্রতিঘাত সয়ে বেড়ে উঠা তাঁর। ছোটবেলা থেকে লড়াকু জীবন, আর্থিক টানাটানির সংসারে পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে আঘাতটা প্রথম এসেছে তাঁর উপরই। সংসারের হাল ধরবেন ভেবে মাঝে ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্রিকেট যার রক্তে তিনি কি করে দূরে থাকেন বাইশ গজ থেকে, ক্রুনাল পান্ডিয়াও পারেননি। ক্যারিয়ারের পুরোটা জুড়ে স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।
তিন বছরের ছোট হার্দিক পান্ডিয়া তরতর করে এগিয়ে গেছেন। আইপিএল পেরিয়ে জাতীয় দলে নিয়মিত হলেও ক্রুনালের যাত্রাটা সহজ ছিল না। ২০১৫ আইপিএলে হার্দিক যখন ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে যাচ্ছেন, ক্রুনালকে তখন বসতে হয়েছে সাইড লাইনে। মাঝে কাঁধের ইনজুরিতে মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে প্রায় এক বছর। তবু তিনি হাল ছাড়েননি, ফিরে আসার লড়াইটা চালিয়ে গেছেন নিজের মতো।
পরিশ্রমের ফল পেতে সময় লাগেনি। ২০১৬ রঞ্জি ট্রফিতে রীতিমতো অতিমানবীয় পারফরম্যান্স করেন এই তারকা। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কোচ জন রাইটের জহুরির চোখ এড়ায়নি এই বাঁহাতি অলরাউন্ডারের পারফরম্যান্স। নিলামে সবাইকে অবাক করে দুই কোটি রুপিতে তাঁকে দলে ভেড়ায় রোহিত শর্মার দল। অথচ সে সময়ে ক্রুনালের প্রতিযোগিমূলক ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা বলতে ঘরোয়া ক্রিকেটে চারটি লিস্ট এ এবং ২৭ টি টোয়েন্টিতে মাঠে নামা!
তাঁকে নিয়ে মস্ত এক বাজিই ধরেছিল মুম্বাই ম্যানেজমেন্ট। তবে আস্থার প্রতিদান দিতে সময় নেননি পান্ডিয়া ভাইদের বড়জন। নিজের প্রথম ম্যাচেই ১১ বলে ২০ রানের ইনিংস খেলার পাশাপাশি বল হাতে তুলে নেন এক উইকেট।
ক্রুনাল পান্ডিয়ার সবচেয়ে বড় গুণ হলো তিনি আপাদমস্তক টিমম্যান। মুম্বাই তাঁকে নিয়ে বারবার পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছে। কখনো টপ অর্ডার, কখনো মিডল অর্ডার আবার কখনো ফিনিশার হিসেবে খেলিয়েছে। কিন্তু ক্রুনাল কখনো অভিযোগ জানাননি, বরং যখনই সুযোগ পেয়েছেন নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে গেছেন। দলের বিপদে সবসময়েই হেসেছে তাঁর ব্যাট। একবার তিন নম্বর পজিশনে হার্দিক ব্যর্থ হওয়ায় মুম্বাই ম্যানেজমেন্ট একপ্রকার বাধ্য হয়ে হুট করে তাঁকে সেই পজিশনে খেলায়। সেই ম্যাচে দিল্লীর বিপক্ষে ৩৭ বলে ৮৬ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে নিজের প্রতিভার জানান দেন এই তারকা।
ছোটবেলা থেকেই লড়াই করে বড় হয়েছেন। হাল না ছাড়ার অভ্যাসটা তাই ক্রুনালের জন্মগত। চাপের মুখে নিজের সেরাটা দিতে পারায় বারবার প্রশংসিত হয়েছেন এই তারকা। কেবল ব্যাটিং নয়, বল হাতেও সমান উজ্জ্বল এই তারকা। উইকেট থেকে সুবিধা নিয়ে টার্ন করানোর পাশাপাশি গতির হেরফেরটা ভালোই জানেন এই তারকা।
আইপিএলে পারফরম্যান্সের সুবাদে জাতীয় দলে অভিষেক হয়ে যায় দ্রুতই। ওয়ানডে অভিষেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গড়েন দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। কিন্তু মাঝে বাজে ফর্মের কারণে বাদ পড়েন জাতীয় দল থেকে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সও ২০২২ আইপিএলের আগে ছেড়ে দেয় তাঁকে, ক্রুনালের নতুন ঠিকানা হয় ,লখনৌ সুপার জায়ান্টস। কিন্তু নতুন দলে প্রথম মৌসুমে মোটেও নিজের স্বভাবজাত খেলাটা খেলতে পারেননি তিনি।
কিন্তু ক্রুনাল এত সহজে দমে যাবার পাত্র নন। নতুন মৌসুমে যেন নতুন রূপে ফিরে এসেছেন এই তারকা। এবারের আইপিএলে ব্যাটে-বলে দারুণ ফর্মে আছেন তিনি। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ১৮ রানে তিন উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেছেন ৩৪ রান।
বছরের শেষভাগে ভারতের মাটিতে বসবে বিশ্বকাপের আসর। আইপিএলের বাকি সময়টা ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ক্রুনাল পান্ডিয়াকে দেখলে অবাক হবেন না যেন।