ভার্লভার্দের ঘুষিতে প্রশ্নের উদয়

মাথা দিয়ে দেওয়া একটি আঘাত, নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা ফুটবল দুনিয়াকে। ২০০৬ বিশ্বকাপের ঘটনা। ভরা মজলিসে সেদিন কাণ্ডটা ঘটিয়েছিলেন জিনেদিন জিদান। এবার খেলার বাইরে আঘাত করার আরও একটি ঘটনার মঞ্চায়ন হলো স্পেনে। রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ফেদে ভালভার্দের বিপক্ষে অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের গায়ে হাত তোলার। তা নিয়েই যেন তোলপাড় গোটা ফুটবল বিশ্ব।

বড্ড ঠান্ডা মাথার খেলোয়াড় হিসেবেই পরিচিত জিদান। তিনি তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে দ্বন্দে জড়িয়েছেন খুব অল্প সময়ই। একবার এক সাক্ষাৎকারে জিদান বলেছিলেন যে তাঁর দেখা অধিকাংশ লাল কার্ডের পেছনে ছিল বাজে রকমের উস্কানিমূলক আচরণ। তবে ২০০৬ বিশ্বকাপে ইতালিয়ান ডিফেন্ডার মার্কো মাতারাজ্জির সাথে ঘটা সে ঘটনাই মনে রয়ে গেছে সবার।

যদিও খেলার মাঠে উস্কানি দেওয়া নতুন কিছু নয়। প্রাচীন কাল থেকেই খেলোয়াড়দের স্নায়ুচাপ বাড়াতে, মনযোগ বিনষ্ট করতে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা নানানরকম উস্কানিমূলক বাক্যের ব্যবহার করে থাকে। সেটা সম্ভবত সব ধরণের খেলাতেই হয়ে থাকে। স্লেজিং বিষয়টা যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন ঠান্ডা মাথার মানুষও নিজেদের ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে।

ফেদে ভালভার্দের ক্ষেত্রেও ঘটেছে ঠিক তেমনই কিছু। ঘরের মাঠে স্প্যানিশ ক্লাব ভিয়ারিয়ালকে আতিথিয়েতা দিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তাদের কাছে ৩-২ ব্যবধানে হেরেছে স্বাগতিকরা। এরপরই চমকে দেওয়ার মত কাণ্ড ঘটিয়েছেন ভালভার্দে। বেশ শান্ত স্বভাবের একজন খেলোয়াড় বলেই বিবেচিত হন উরুগুয়ান এই তারকা ফুটবলার।

সেই তিনিই ভিয়ারিয়ালের বাস পার্কিংয়ে অপেক্ষা করছিলেন। ভিয়ারিয়াল খেলোয়াড় অ্যালেক্স বেয়ানার সাথে তর্কে জড়িয়ে যান। এরপরই নাকি ঘুসি মেরে বসেন বেয়ানাকে। সে ঘটনার ভিডিও প্রমাণ আবার রয়েছে ভিয়ারিয়ালের অন্য খেলোয়াড়দের কাছে। এমন ঘটনার জন্যে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ভালভার্দেকে।

তবে তাঁর ভাষ্যমতে তিনি এমনটা করেছেন তাঁর পরিবারকে বাজে মন্তব্য করায়। এর আগে কোপা দেল রে-তে মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ ও ভিয়ারিয়াল। সেই ম্যাচেই বেয়ানা ভালভার্দেকে লাথি মারেন। অবশ্য তা খেলার মাঝেই, এরপর নাকি বেয়ানা বলে ওঠেন, ‘এখন কান্না করো কারণ তোমার ছেলে জন্ম নেবে না।’

সেই উস্কানিমূলক মন্তব্য নিশ্চিতরুপেই মনে আঘাত করেছিল ভালভার্দের। কেননা এই বছরের শুরুর দিকে ভালভার্দে দম্পতি নিজেদের দ্বিতীয় সন্তানকে গর্ভকালীন সময়ে হারাতে বসেছিল। যদিও শেষ অবধি তাদের দ্বিতীয় সন্তান সকল জটিলতা উপেক্ষা করে ভূমিষ্ঠ হয়। নিশ্চয়ই যেকোন দম্পতির জন্যেই সে সময়টা ভীষণ কঠিন। তবে সেবার কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি ভালভার্দে।

কিন্তু সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এসে একই রকম মন্তব্য আবারও করেছিলেন বেয়েনা। তেমনটাই জানিয়েছেন ভালভার্দে। এবার নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হন মাদ্রিদের মধ্যমাঠের অন্যতম সেনানী। তাইতো, বিতর্ক আর সমালোচনাকে দূরে ঠেলে তিনি আঘাত করে বসেন প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে। তাও আবার খেলার মাঠের বাইরে।

যদিও বিষয়টি ভীষণরকম অপেশাদার ও অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ। তবুও স্পর্শকাতর বিষয়গুলো দিয়ে মানুষের স্নায়ু পরীক্ষা করাটাও তো নিঃসন্দেহে গর্হিত কাজ। খেলার মাঠে জয়টাই মুখ্য বিষয়। তাইতো যেকোন পদক্ষেপ নিতেও পিছপা হয়না দলগুলো। ভালভার্দে কোন দ্বিধা ছাড়াই দোষ করেছেন। তবে কি পরিবারকে নিয়ে উস্কানি দেওয়ার ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর বিষয়গুলো টেনে নিয়ে আসা যৌক্তিক? ২০০৬ সালেও তো জিদানের বোনকে নিয়েই মন্তব্য করেছিলেন মাতারাজ্জি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link