রীতিমত এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সেই যে ২০০৮ সালে শুরু ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল), এরপর কেবলই বিস্তৃতি লাভ করেছে আইপিএল। মাঝে কত নতুন দলের যুক্ত হওয়া, আবার হারিয়ে যাওয়া। এতসব কিছুর মাঝে কলকাতা নাইট রাইডার্স টিকে আছে বছরের পর বছর।
সেই ২০০৮ সাল থেকে টানা সবগুলো আসরেই অংশ নিয়েছে ফ্রাঞ্চাইজিটি। দুই দফা শিরোপা জয়ের স্বাদও পেয়ে গেছে। এই দীর্ঘ পথচলায় ঠিক কতজন বাঙালি খেলোয়াড় কলকাতার ‘পার্পেল’ জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন? নিশ্চয়ই ঠাওর করতে কষ্ট হচ্ছে।
খুব বেশি কষ্ট করবার প্রয়োজন নাই। মোটামুটি ধারণা, মোট ১২ জন বাঙালি ক্রিকেটার খেলেছেন কলকাতার হয়ে। যার মধ্যে ২০০৮ ও ২০১০ মৌসুমে কলকাতার হয়ে সর্বোচ্চ ছয়জন বাঙালি ক্রিকেটার খেলেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই একাদশে সুযোগ না পেলেও ছিলেন দলের সাথে।
‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’ সৌরভ গাঙ্গুলি ছাড়াও প্রথম আসরে নাইট রাইডার্স শিবিরে ছিলেন, লক্ষ্মী রতন শুকলা, ঋদ্ধিমান সাহা, অশোক ডিন্ডা, দেবব্রত দাস ও অনুষ্টুপ মজুমদার ছিলেন কলকাতা দলে। ২০০৯ সালে সেখান থেকে একজনকে ছেঁটে ফেলে ফ্রাঞ্চাইজিটি।
দেবব্রত দাসের কপালে ছিল না ২০০৯ এর আসর। ঠিক পরের আসরেই আবারও কলকাতার ডেরায় ছয় বাঙালি ক্রিকেটার। এবার বাকিদের সাথে যুক্ত হন মনোজ তিওয়ারি। তবে সেবারই শেষ দেখা গিয়েছিল বাঙালি ক্রিকেটারদের আধিক্য। এরপর ক্রমান্বয়ে কলকাতা দলে বাঙালি ক্রিকেটারদের সংখ্যা কমেছে। এমনকি একটা সময় সেটা শূন্যের কোটায় নেমে গেছে।
২০১৮ থেকে ২০২১ এই সময়টাতে নাইট রাইডার্স দলে ছিল না কোন বাঙালি ক্রিকেটার। অথচ ফ্রাঞ্চাইজিটি প্রতিনিধিত্ব করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতাকে। যেখানকার অধিকাংশ মানুষই বাঙালি। তবে আবেগ ছাপিয়ে এখানে প্রাধান্য পায় ব্যবসানীতি। তাছাড়া দলের সাফল্যও বিবেচনায় থাকে এবং প্রাধান্য পায় সবার আগে।
সেক্ষেত্রে বাঙালি ক্রিকেটারদের সামর্থ নিয়ে প্রশ্ন হয়ত ছিল ম্যানেজমেন্টের। একটা সময় তো স্রেফ সাকিব আল হাসান ছিলেন বাঙালিদের প্রতিনিধি হিসেবে। তিনি প্রথম যোগ দিয়েছিলেন ২০১১ সালে। এর ঠিক এক বছর বাদেই কলকাতা পায় নিজেদের প্রথম আইপিএল শিরোপার স্বাদ। আবার মাঝের একটি মৌসুম বাদে নিজের দ্বিতীয় শিরোপা বাগিয়ে নেয় কলকাতা।
প্রথম শিরোপা জয়ে মনোজ তিওয়ারি, লক্ষ্মী রতন শুকলা, সাকিব আল হাসান ও দেবব্রত দাস ছিলেন দলের সঙ্গী। তবে দ্বিতীয় শিরোপা উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন কেবল সাকিব ও দেবব্রত। এরপর টানা দুই মৌসুম কেবল সাকিব ছিলেন বাঙালি ক্রিকেটারদের প্রতিনিধি হয়ে। ২০১৭ সালে সাকিবের সাথে যুক্ত হন শায়ান ঘোষ। এরপরই শূন্যতার সৃষ্টি।
২০২২ সালে অনুকুল রায় যুক্ত হন। এরপর বাঙালি খেলোয়াড়দের খরা কাটে কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরে। এই মৌসুমে সাকিব খেললে মোট তিনজন বাঙালি ক্রিকেটার হওয়ার কথা ছিল। যদিও সময়ের টানাপোড়েনে সাকিব নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এই মুহূর্তে কলকাতা দলে রয়েছেন দুইজন বাঙালি ক্রিকেটার। সর্বশেষ সংযোজন লিটন কুমার দাস।
নিশ্চয়ই বাঙালি খেলোয়াড় যুক্ত হওয়ার ধারা এখানেই থেমে যাবে না। আগামী দিনে হয়ত ভারত ক্রিকেটকে আরও একজন কিংবদন্তি বাঙালি ক্রিকেটার উপহার দেবে কলকাতা নাইট রাইডার্স।