স্রেফ একটা তাণ্ডব! তবে শেষটায় আক্ষেপ ভর করেছিল নিশ্চয়ই। পেশি শক্তি আর বুদ্ধির দারুণ সংযোগ। ঠিক কি করেননি ইফতেখার আহমেদ! শুধু দলের জয়টা নিশ্চিত করতে পারেননি। একটা বর্ণিল স্মৃতি জড়ো করতে পারেননি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি লাহোরে। ২-০ তে এগিয়ে পাকিস্তান। নিউজিউল্যান্ডের তাই ঘুরে দাঁড়ানোর মোক্ষম সময়। সেই সময়ে মাঝারি মানের একটা লক্ষ্যমাত্রা ছুড়ে দিলো ব্ল্যাকক্যাপসরা। টম লাথামের হাফ সেঞ্চুরির বদৌলতে ১৬৩ এর সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড।
মাঝারি মানের এই টার্গেটও কঠিন হয়ে যায় পাকিস্তানের জন্যে। এদিন পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ব্যর্থ। আবারও সেই পুরনো চিত্র। ওপেনিং জুটির ব্যর্থতার দিনে প্রতিবারই ধুকেছে পাকিস্তান। ব্যতিক্রম হলো না এদিনও। তবে ব্যতিক্রম একটি ফলাফলের জন্যে ছুটেছিলেন ইফতেখার আহমেদ।
ব্যাটিং বিপর্যয়ে পাকিস্তান। নিয়ম করে প্যাভিলনের পথে হেটেছেন পাকিস্তানের টপ অর্ডার থেকে শুরু করে মিডল অর্ডারের সকল ব্যাটাররা। মাত্র ৬৪ রানে নেই ছয় উইকেট। তখন প্রায় আট ওভারে প্রয়োজন ১০০ রান। জয় স্বাভাবিকভাবেই বেশ দূরের গন্তব্য। কিন্তু ইফতেখারের ব্যাটে চেপে রকেট গতিতে ছুটেছে পাকিস্তান। তবে জয়ের খুব কাছে গিয়ে থেমেছে ইফতেখার তাণ্ডব। আর তাতে জয় বঞ্চিত পাকিস্তান।
২০ তম ওভারের শুরুতে পাকিস্তানের জয়ের জন্যে প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। মুহূর্তেই সেটা হয়ে যায় ৫ বলে ৯ রান। জেমি নিশামে করা বলটা খেলতে খানিকটা শাফল করে অফ সাইডে চেপে যান ইফতেখার। এরপর ব্যাটে বলের দূর্দান্ত মেলবন্ধন। বল ছুটেছে বিদ্যুৎ গতিতে ডিপ স্কয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে। চোখ ধাঁধানো এক শট!
২৪ বলের ইনিংসে তিনি এমন শট খেলেছেন নিয়ম করে। দারুণ সব শটের পসরা বসিয়ে তিনি ব্যাটিং করেছেন ২৫০ স্ট্রাইকরেটে! লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ছক্কাবৃষ্টি ঝড়িয়েছেন ইফতেখার আহমেদ। জয়ের নিভু নিভু করে জ্বলতে থাকা আসাটা তিনি প্রবল করেছেন ছয়টি সুবিশাল ছক্কা হাকিয়ে। তিন খানা বাউন্ডারিও মেরেছেন তিনি এই সময়ে।
ব্ল্যাকক্যাপস বোলারদের রীতিমত স্নায়ুচাপ বাড়িয়েছেন ইফতেখার একা হাতে। তাকে কখনো সঙ্গ দিয়েছেন শাদাব খান কখনো আবার ফাহিম আশরাফ। তবে কেউই টিকে যেতে পারেননি ইফতেখারের পাশে। তবুও ইফতেখার নিজের কাজটা করে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। পপিং ক্রিজে তিনি নৃত্য করেছেন।
কখনো অফ সাইডে রুম বানিয়ে খেলেছেন তো কখনো লেগ সাইডে জায়গা বানিয়ে বল মাঠ ছাড়া করেছেন। প্রতিপক্ষ বোলারদের ব্যর্থ ইয়োর্কারগুলো সীমানা পেরিয়েছে প্রতিবার। ইফতেখার নিজের সবটুকু ঢেলে দিয়ে পাকিস্তানের জন্যে সিরিজ নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। তবে সেটা আর হয়নি।
নিশামের শেষ ওভারেই তিনি আউট হয়ে ফেরেন সাজঘরে। তবে সে আউট হওয়ার পেছনে ভাগ্যকেই দোষারোপ করতে পারেন ইফতেখার। কেননা নিশামের ছোড়া ফুলার লেন্থের বলটি তিনি চালিয়েছিলেন সজোরে। ডিপ স্কোয়ার লেগ অথবা ডিপ মিড উইকেট দিয়ে সেটি সীমানার বাইরে চলে যাওয়ার কথা। আর তাতেই জয় নিশ্চিত হয়ে যেতে পারত পাকিস্তানের।
কিন্তু গ্ল্যাভসের ভেতর ব্যাট ঘুরে যায়। আর তাতে ক্যাচ ওঠে লং অনে। সহজ সে ক্যাচ লুফে নিতে বিন্দুমাত্র ভুল করেনি ড্যারেল মিশেল। জয়ের জন্যে পাঁচ রান বাকি থাকতে প্যাভিলনে ফেরেন ইফতেখার। আর পাকিস্তান হেরে যায় চার রানে। শেষ মুহূর্তে আউট হয়ে প্যাভিলনে ফেরা নিশ্চয়ই বেশ পীড়া দিয়েছে এই হার্ড হিটার ব্যাটারকে।
পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে এখন অবধি ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে আছে পাকিস্তান। ২০ এপ্রিল আবারও মাঠে নামবে এই দুই দল। রাওয়ালপিন্ডিতে নিশ্চিয়ই সিরিজ নিশ্চিত করতে চাইবে পাকিস্তান।