সেই শুরু থেকে মেলবন্ধন। এখনও যেন অটুট। সম্পর্কের চলার পথে হয়ত বাঁক এসেছে। তবে ভাঙন ধরেনি এক ছটাক। বিরাট কোহলি যেন একেবারে অনড় থেকে গেলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু শিবিরে। দীর্ঘ একটা পথচলায় বিরাট আর ব্যাঙ্গালুরু একে অপরের অবিচ্ছেদ্য হয়ে রইলো।
এমনকি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এর ইতিহাসে বিরাটই একমাত্র খেলোয়াড় হয়ে রইলেন। তিনি শুরু থেকে এখন অবধি রয়েছেন একটি ফ্রাঞ্চাইজির পতাকা তলে। বহু কিংবদন্তি খেলোয়াড় খেলেছেন আইপিএলে। তবে একটানা একটি ফ্রাঞ্চাইজির সাথেই কাটিয়ে দেওয়ার মত রেকর্ড গড়তে পারেননি কেউই।
কিন্তু মাঝে দলবদলের সুযোগ এসে ধরা দিয়েছিল বিরাটের সামনে। তবে তাদের সাথে ঠিক বনিবনা হয়নি বিরাটের। তারা বিরাটের মত একজন ব্যাটারের কিঞ্চিৎ চাহিদা আমলে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেনি। সেদিক থেকে বিরাটের আবদার কিংবা অভিযোগ সবকিছু শুনে বাস্তবায়ন করবার চেষ্টা করেছে ব্যাঙ্গালুরু ফ্রাঞ্চাইজি।
সাম্প্রতিক সময়ে এক অনুষ্ঠানে এসব কথাই জানিয়েছেন বিরাট কোহলি। ২০১১ সাল থেকে টানা নয় বছর কোহলি ব্যাঙ্গালুরুর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। নিশ্চয়ই আফসোস তাকে ঘিরে ধরে। তবে ব্যাঙ্গালুরু ফ্রাঞ্চাইজি তাকে সেই বিষয়টি কখনো অনুভব করতে দেয়নি। তাছাড়া বিরাটের ক্যারিয়ারের উত্থানের পথে ব্যাঙ্গালুরুও রেখেছিল অবদান।
এই বিষয়ে বিরাট বলেন, ‘এটা (ব্যাঙ্গালুরুর সাথে যাত্রা) চমৎকার যাচ্ছে। কেন আমি আরসিবির সাথে আমার এই জুটি ও যাত্রা সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করি, কারণ আইপিএলের শুরুর তিন বছরে তারা আমাকে প্রচণ্ড সমর্থন দিয়েছে। এমনকি যখন রিটেনশন ঘটেছিল, তারা আমাকে বলেছিল, ‘আমরা তোমাকে রিটেইন করতে চাই।’ আমার প্রতিক্রিয়াতে আমি জানিয়েছিলাম যে আমি টপ অর্ডারের ব্যাট করতে চাই। আমি ভারতের হয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করি এবং আমি তিন নম্বরেই ব্যাট করতে চাই। এবং তারা বলে যে ঠিক আছে তুমি তিন নম্বরেই ব্যাট করবে।’
এই বিষয়টা দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল বিরাটের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সাফল্য পেতে। বিরাট এ বিষয়ে বলেন, ‘আমার যখন প্রয়োজন ছিল তারা আমার প্রতি তখন আস্থা দেখিয়েছিল। আমি আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেও সমৃদ্ধি লাভ করছিলাম।’ এরপরই মূলত আরেকটি ফ্রাঞ্চাইজির দ্বারা অবমূল্যায়িত হওয়ার কথা প্রকাশ করেন ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক।
তিনি বলেন, ‘আমি নাম নেবো না, তবে সে সময়ে আমি আরও একটি ফ্রাঞ্চাইজির সাথে কথা বলেছিলাম, তারা আমার কথার শোনার জন্য আগ্রহও প্রকাশ করেনি। আমি তখন একটু নিচের দিকে ব্যাট করতাম। আমি তখন অন্য কোথাও টপ অর্ডারে ব্যাটিং করবার সুযোগ খুঁজছিলাম।’
সেই ফ্রাঞ্জাইজি বিরাট কোহলির চাহিদাটুকু আমলে না নিয়ে তখন তাকে দলে ভেড়ায়নি। তবে পরবর্তীতে তারা তাকে দলে পেতে চেয়েছে। বিরাট বলেন, ‘সেই একই ফ্রাঞ্চাইজি ২০১১ সালে রিটেনশনের আগে আমাকে এসে অনুরোধ করেছিল যে তুমি কি নিলামে নিজের নামটি অন্তর্ভুক্ত করবে? কারণ আমি ২০১১ সালের বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছি এবং পারফর্ম করেছি। তবে আমি তাদেরকে বলে দেই যে কোন সুযোগ নেই, আমি সব সময় সেই ফ্রাঞ্চাইজির সাথে থাকব যারা আমাকে সমর্থন দেয়।’
এক্ষেত্রে লোকসানটা নির্ঘাতরুপেই হয়েছে সেই ফ্রাঞ্চাইজিটির। বিরাট ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে শিরোপা জিততে পারেননি, সে কথা ঠিক। তবে তিনি নিজের সর্বোচ্চটুকু নিঙড়ে দিয়েছেন দলটির জন্য। এমনকি অধিনায়ক হিসেবে নিজের টানা ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে তিনি স্বেচ্ছায় দলটির অধিয়াকত্ব ছেড়েছেন। হয়ত বিরাট সে দলে থাকলে শিরোপা জিতে নিতে পারতেন। তবুও সম্মান আর কথার মূল্য তার কাছে বেশি।