কেন হঠাৎ ব্যালান্সের অবসর!

সবধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ইংল্যান্ড এবং জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যান গ্যারি ব্যালান্স। ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করলেও পড়ন্ত বেলায় ফিরেছিলেন জিম্বাবুয়েতে। কিন্তু সেই ফেরাটা দীর্ঘস্থায়ী হল না, মানসিক অবসাদে মাসতিনেক বাদেই বিদায় জানালেন ক্রিকেটকে। 

কাউন্টি ক্রিকেট ক্যারিয়ারে প্রায় পুরোটা সময় কাটিয়েছেন ইয়র্কশায়ারের হয়ে। দলটিকে শিরোপা জেতানোর পেছনেও বড় ভূমিকা ছিল তাঁর, ২০২৪ সাল পর্যন্ত নতুন চুক্তিতে সম্মত হয় দুই পক্ষ। কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধে গত বছর সতীর্থ আজিম রফিক তাঁর প্রতি বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ আনলে। ইসিবি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা উদ্যোগী হয়, চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় ইয়র্কশায়ারও। 

অথচ ব্যালান্সের দাবি ছিল তিনি স্রেফ মজা করেই বন্ধুকে ডাকতেন তিনি। এমনকি রফিকের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতি আর স্বাভাবিক হয়নি। সেই থেকে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ব্যালান্স। এর আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণেও ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন বড় একটা সময়।

সবমিলিয়ে ব্যালান্সের ধারণা ছিল ইংল্যান্ড ছাড়লে হয়তো সবকিছু থেকে দূরে সরতে পারবেন। তাছাড়া জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট বোর্ডেরও আগ্রহ ছিল ঘরের ছেলেকে ফিরিয়ে আনার। দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক ঘটে ব্যালান্সের। জিম্বাবুয়ের হয়ে অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখেন এই ব্যাটসম্যান। অপরপ্রান্তের ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলের মাঝেও খেলেছিলেন অপরাজিত ১৩৭ রানের ইনিংস। ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যালান্স বাদে কেবলমাত্র কেপলার ওয়েসেলসেরই রেকর্ড আছে দুই দেশের  হয়ে সেঞ্চুরি হাঁকানোর। 

সবাই ভেবেছিলেন ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলাতে হয়তো কপাল শিকে ছিঁড়লো প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যানের। কেননা ইংল্যান্ডের হয়ে দুর্দান্ত শুরু করলেও ধরে রাখতে পারেননি। প্রথম নয় ইনিংসেই তিন সেঞ্চুরি কিংবা তৃতীয় দ্রুততম হাজার রানের ক্লাবে পৌছলেও থ্রি লায়ন্সদের হয়ে থিতু হতে পারেননি। 

তবে জিম্বাবুয়ের হয়ে তাঁর আক্ষেপ মেটানোর সুযোগ ছিল। বছরের শেষভাগের বিশ্বকাপে তাঁকে ঘিরেই পরিকল্পনা সাজাচ্ছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু মাসছয়েক আগে তাঁর অবসরের সিদ্ধান্ত বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে দলটিকে। গোটা ক্রিকেট বিশ্বের কাছে তাঁর সিদ্ধান্তটা এসেছে বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়ে।

হারারেতে জন্ম নেয়া ব্যালান্সের ক্রিকেট জীবনের শুরুটা জিম্বাবুয়েতেই। ছোটদের বিশ্বকাপও খেলেছেন আফ্রিকার দেশটির হয়ে, কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রশ্নে বেছে নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডকেই। তাঁদের হয়ে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নিয়মিত মাঠে নেমেছেন। কিন্তু অধারাবাহিকতার কারণে দলে থিতু হতে পারেননি। 

অবসর নেবার আগে ২৪ টেস্টে ৪০.৩১ গড়ে ব্যালান্সের সংগ্রহ ১৬৫৩ রান। এছাড়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও তাঁর রেকর্ডটা ঝলমলে, ৪২ সেঞ্চুরিতে করেছেন ১২০৩১ রান। 

তাঁর প্রতিভা ছিল নিজের সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার। বয়সটাও সবে ৩৩ পেরিয়েছে, ক্রিকেটকে দেবার মতো আরো অনেক কিছু ছিল। অন্তত ভঙ্গুর জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে পথ দেখাতে পারতেন আরো কয়েক বছর। কিন্তু মানসিক অবসাদ আর নানা বিতর্কে আক্ষেপ রেখেই ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন গ্যারি ব্যালান্স। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link