সকালে সিলেটের আকাশ একেবারে পরিষ্কার। রোদের তীব্র তাপ। মাথায় পানি দিয়ে গরম খানিকটা প্রশমিত করবার প্রচেষ্টা চালালেন এবাদত হোসেন।
এরপর আবার ছুটে চললেন বল হাতে। ছন্দময় দৌড়ে গেলেন বল ছুঁড়তে। হাতুরুসিংহে মাঝে এগিয়ে এলেন। বাতলে দিলেন ম্যাচের পরিস্থিতি আর ফিল্ডিং পজিশন।
সিলেটে ক্যাম্পের শেষদিন। তিনদিনের ইন্টেন্স অনুশীলনের মূল ভাবনাটাই ছিল ভিন্ন ভিন্ন ম্যাচ পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়দের মানসিকতা গড়ে তোলা।
সেই সাথে খেলোয়াড়দের মধ্যে থাকা দূর্বলতাগুলোর সমাধান খোঁজা। সেই মোতাবেক ক্যাম্প চলেছে। সবাই নিজ নিজ কাজটা করে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
এবাদতও ব্যতিক্রম হবার কথা নয়। তিনিও নিজেকে শাণ দিয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট তো এখন তার উপরই ভরসা করে। একটা সময় ছিলেন ভলিবল খেলোয়াড়। সেখান থেকে জীবনের মোড় ঘুরে যায়। বিমান বাহিনীর জীবন ছেড়ে তিনি চলে আসেন ক্রিকেটের মোহনীয় ভুবনে।
সেখানে শুরুতেই বাজিমাত করবার মত সৌভাগ্য হয়ত হয়নি তার। সময় নিয়েছেন। অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এরপর নিজের সামর্থ্য আর দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
হয়েছেন বাংলাদেশ দলের পেস বিপ্লবের অন্যতম কাণ্ডারি। বন্ধুর একটা পথ পাড়ি তিনি দিয়েছেন। অকালেই হারিয়ে যাওয়ার জন্য নয় নিশ্চয়ই।
তাইতো রোদের ভীষণ তাপ উপেক্ষা করে অনবরত বোলিং করে গেছেন। নিজের দারুণ ছন্দটায় যেন কোন ধরণের বাঁধা না আসে সে প্রস্তুতিটুকুই যেন নিয়ে রাখছেন তিনি।
সেই মাউন্ট মঙ্গানুই থেকে শুরু। এরপর রীতিমত অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। সেই গতিতে এখনই ভাটা পড়ুক সেটা এবাদত যেমন চান না, তেমনি চায় না টিম ম্যানেজমেন্ট।
অন্যদিকে, চোটের কারণে আয়ারল্যান্ড সিরিজে থাকছেন না ইনফর্ম পেসার তাসকিন আহমেদ। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণটা তাসকিন আর এবাদত মিলে সামলে রেখেছেন।
দলের অন্যতম ক্ষুরধার বোলার মুস্তাফিজুর রহমান ক্যারিয়ার শুরুর সেই তেজ হারিয়ে ফেলেছেন। শরিফুলও রয়েছেন উত্থান-পতনের মাঝে।
এমন সময়ে আয়ারল্যান্ড সিরিজে বাংলাদেশের প্রধান অস্ত্র হতে পারেন এবাদত হোসেন। তাছাড়া পেসবান্ধব কন্ডিশনে এবাদত ঠিক কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন সেটা সবারই জানা। তার কল্যাণেই তো নিউজিল্যান্ডকে তাদের ঘরের মাটিতে টেস্টে হারাতে পেরেছিল টাইগাররা।
গতির সাথের ভ্যারিয়েশনের মিশ্রণে তিনি বেশ কার্যকর একজন বোলার। ২০২৩ সালে তিনি পকেটে পুড়েছেন ১৩ টি উইকেট, তিন ফরম্যাট মিলিয়ে।
তাসকিন আহমেদ নিয়েছেন ২৩টি। পেস ডিপার্টমেন্টে তাসকিনের পরেই অবস্থান এবাদতের। তাসকিন চলতি বছরে এখন অবধি বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।
স্বাভাবিকভাবেই তাসকিনের অনুপস্থিতিতে এবাদতকেই পেস বোলিং ইউনিটটার দায়িত্ব নিতে হবে তার। তপ্ত ইস্পাত একদিন কঠিন হয়। সেই সময়টাই যেন পাড় করলেন এবাদত।
সিলেটের সন্তান, সিলেটের মাটিতেই প্রস্তুতি নিলেন। জড়ো করলেন আগামী লড়াইয়ের রসদ। হাতুরুসিংহের আস্থার প্রতিদান নিশ্চয়ই দিতে মুখিয়ে আছেন এবাদত হোসেন।