সাকা: ব্রিটিশ-এশিয়ানদের পুনরুত্থানের মঞ্চ!

সেই রঞ্জি সিংজি থেকে শুরু। আর আজকের দিনের মঈন আলী বা আদিল রশীদ।

ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে উপমহাদেশীয়দের প্রতাপ আজকের নয়। নাসের হোসেন লম্বা সময় ইংল্যান্ড জাতীয় দলের অধিনায়কত্বও করেছেন। কিন্তু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনা বলছে, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে ব্রিটিশ এশিয়ানদের এই দাপট কমে আসছে।

নানারকম বৈষম্য ও বঞ্চনার কারণে পেশাদার ক্রিকেটে তাদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। আর সেই ব্যাপারটা ঠেকাতে, ব্রিটিশ এশিয়ানদের পেশাদার ক্রিকেটে উপস্থিতি বাড়াতে তৈরী হলো নতুন সংগঠন-সাউথ এশিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (সাকা)।

চিন্তার শুরুটা করেছিলেন বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি), ওয়ারউইকশায়ার এবং এসেক্সের যৌথ অর্থায়নে টম ব্রাউন নামে এক গবেষক কমে আসতে থাকা ব্রিটিশ এশিয়ান পেশাদার ক্রিকেটারদের নিয়ে গবেষনা করেন। তিনি দেখতে পান উল্লেখযোগ্য হারে তাদের পেশাদার পর্যায়ে অংশগ্রহন কমে আসছে।

২০১১ সালে ৩৬ জন ব্রিটিশ এশিয়ান খেলোয়াড় কাউন্টিগুলোতে চুক্তিভুক্ত হয়েছিলেন। ২০২০ সালে এসে সেই সংখ্যাটা ২২ জনে নেমে এসেছে। সাবেক ইংল্যান্ড ও এসেক্সের ফাস্ট বোলার কবির আলী বলছিলেন, আগে তিনি ৪০ জন প্রথম শ্রেনীর উপমহাদেশীয় ক্রিকেটার চিনতেন। এখন দশ জনের নামও মনে করা কঠিন।

বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটির এই গবেষণার ফল দেখার পর ইসিবি মনে করেছে, এই জায়গাটা নিয়ে কাজ করা দরকার। এ ছাড়াও গত কয়েক মাস ধরেই ইসিবি স্বীকার করে আসছে যে, ক্রিকেটে সাদা-কালো বৈষম্য ঘোচানোর জন্য আরও কাজ করতে হবে।

আর এই কাজটা করতে উদ্যোগে হলেন স্বয়ং গবেষক টম ব্রাউন। তিনি যোগাযোগ করলেন কবির আলীর সাথে। কবির আলীকে পরিচালক করে গঠন করা হলো সাকা। এই সংস্থার প্রধাণ নির্বাহী হিসেবে কাজ করবেন ব্রাউন নিজে। সাবেক ভারতীয় স্পিনার বিষেন সিং বেদী, সাবেক ইংলিশ নারী ক্রিকেটার ইশা গুহ, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধাণ নির্বাহী ওয়াসিম খান বিভিন্ন পদে থাকছেন। এ ছাড়া বর্তমান ইংল্যান্ডের খেলোয়াড় মঈন আলী, আদিল রশীদ ও সাকিব মাহমুদ শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করবেন।

বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটির গবেষনা বলছে, সাদা একজন কিশোর খেলোয়াড়ের তুলনায় ব্রিটিশ এশিয়ান এক কিশোর ক্রিকেটারের কাউন্টি কাঠামোতে ঢোকা বা পেশাদার সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা এখন ১৬ গুন কম! আবার যেসব সাদা কিশোর ক্রিকেটার প্রাইভেট স্কুলে পড়ে তাদের পেশাদার কাঠামোতে আসার সম্ভাবনা ২২ গুন বেশী।

অথচ এখানে মজার একটা অন্য চিত্র আছে। অপেশাদার ক্রিকেটে এশিয়ানদের অংশগ্রহণ সাদা চামড়ার খেলোয়াড়দের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশী। আবার এদেরই মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ পেশাদার পর্যায়ে যেতে পারছে। তার মানে বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটি মনে করছে, সমস্যাটা অবকাঠামো সুবিধা পাওয়া নিয়ে।

আর এখানেই কাজ করতে চায় সাকা।

আপাতত ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ১৬ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে সাকা কাজ শুরু করবে; যারা কোনো কাউন্টি চুক্তিতে নেই। এদেরকে সর্বোচ্চ অনুশীলন সুবিধা ও পরিবেশ দেওয়া হবে। এবং বিভিন্ন কাউন্টির দ্বিতীয় একাদশের সাথে এই দলটির নিয়মিত সিরিজ আয়োজন করবে সাকা।

এর পাশাপাশি সাকা দীর্ঘমেয়াদে একটা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলতে চায়। যেখানে আবাসন, অনুশীলন, খেলা এবং পড়াশোনার সব সুবিধা থাকবে। এই কাজে সাকা শুরু থেকেই ইসিবিকে পাশে পাচ্ছে। কট বড় বিশ্ববিদ্যালয় সাকার পাশে থাকার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।

এর পাশাপাশি সাকার একটা বড় চিন্তা ব্রিটিশ এশিয়ান নারী ক্রিকেটারদের নিয়ে। নারীদের ক্ষেত্রে এই বৈষম্যের হার আরও বেশী। সাকা এখন ন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের সাথে মিলে নারী ক্রিকেটারদের নিয়ে নতুন করে গবেষনা চালাতে চায়।

টম ব্রাউন বলছিলেন, ‘আমরা একই মানের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে দেখতে চাই যে, সকল প্রান্ত থেকে একইরকম ক্রিকেটার উঠে আসছে কি না। বৈচিত্র ধরে রাখাটাই আমাদের লক্ষ্য।’

এই কাজে দক্ষিণ এশিয়ান ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোও পাশে থাকবে বলে সাকা আশা করছে।

– ক্রিকবাজ অবলম্বনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link