শচীন টেন্ডুলকারের বিদায়বেলায় ভারত পেয়ে গিয়েছিল বিরাট কোহলিকে। এক যুগ বাদে বিরাটের ফর্ম যখন পড়তির মুখে, তখনো অবশ্য ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না ভারতকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কিংবা আইপিএল, সবখানেই রানবন্যা বইয়ে দিয়ে শুভমান গিল জানান দিয়েছেন নিজের আগমনী বার্তার।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলার সময়ই পেয়ে গিয়েছিলেন ভবিষ্যৎ তারকার তকমা। ছোটদের বিশ্বকাপেও হেসেছে শুভমানের ব্যাট, কিউই মূলুকে দলকে শিরোপা জেতানোর পাশাপাশি সর্বোচ্চ রান আর টুর্নামেন্ট সেরার বরমাল্য উঠেছে তাঁর গলাতেই। এরপর সময় যত গড়িয়েছে, শুভমান এগিয়েছেন দুরন্ত গতিতে।
জাতীয় দলে অভিষেক হতেও সময় লাগেনি। যদিও তারকাবহুল ভারতীয় টপ অর্ডারে শুরুতে জায়গা মেলেনি, বড় একটা সময় থাকতে হয়েছে সাইড লাইনে। তবে শুভমান ধৈর্য্য হারাননি, বরং নিজেকে শাণিত করে তুলেছেন। রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে এ দলের হয়ে সফর করেছেন, ব্যাটিংকে আরো ক্ষুরধার করে তুলেছেন।
২০২২ সালে রীতিমতো স্বপ্নের মতো এক বছর কাটিয়েছেন শুভমান। তিন ফরম্যাটেই রানবন্যা বইয়ে দিয়েছেন, তাঁকে রুখে এমন সাধ্য কার! ওয়ানডেতে ভারতের হয়ে দ্রুততম হাজার রান কিংবা সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন। লাল বলের ক্রিকেটেও ছিলেন সমান সাবলীল, আসন্ন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও ইনিংস উদ্বোধন করতে নামবেন এই তারকাই।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে টি টোয়েন্টিতে ধীরগতির ব্যাটিংয়ের জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন শুভমান। তবে গত বছর থেকে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ব্যাটিংয়ে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজের সামর্থ্য। পেশির জোর নয় বরং নিখাদ ক্রিকেটীয় সব শটে নিজের ইনিংস সাজান এই তারকা।
আইপিএল ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে। জাতীয় দলের মতো কলকাতার হয়েও শুরুতে টপ অর্ডারে জায়গা মেলেনি। তবে মিডল অর্ডারে সুযোগ পেয়েই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন এই তারকা। গত মৌসুমেই ঠিকানা বদলে যোগ দেন নতুন দল গুজরাট টাইটান্সে।
চেনা ওপেনিং পজিশনে দুরন্ত শুভমানের ব্যাট হেসেছে গোটা টুর্নামেন্টজুড়েই, গুজরাটও শিরোপার দেখা পেয়েছে অভিষেক মৌসুমেই। ঋদ্ধিমান সাহাকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন অপ্রতিরোধ্য এক উদ্বোধনী জুটি, প্রতি ম্যাচেই দলকে এনে দিয়েছেন ঝড়ো সূচনা।
গতবারের ফর্মটা ধরে রেখেছেন এবারের মৌসুমেও। ১১ ইনিংসে এখনো পর্যন্ত তাঁর সংগ্রহ ৪৬৯ রান। লখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচেই খেলেছেন ৫১ বলে অপরাজিত ৯৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। উইকেটের চারপাশে দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে ইনিংসের শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্নক মেজাজে।
লখনৌর বোলাররা বিন্দুমাত্র বেকায়দায় ফেলতে পারেনি এই তারকাকে, যেন শুভমান আগে থেকেই জানতেন বোলার কি করতে যাচ্ছেন। দুই চার এবং সাত ছক্কায় সাজানো তাঁর ইনিংসে ভর করেই দুশো ছাড়ানো সংগ্রহ পায় গুজরাট। কে জানে হয়তো আর দুয়েক বল খেলার সুযোগ পেলে সেঞ্চুরির দেখাও পেয়ে যেতেন এই তারকা।
ছোটদের বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভাসিয়েছেন গোটা দেশকে। এবারের স্বপ্নটা আরো বড়, ঘরের মাঠে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিততেও শুভমান গিলেই ভরসা রাখছে ভারতবাসী।