শীতলতা পেরিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর জয়

চেমসফোর্ডের আকাশ থেকে মেঘ সরে গেল না। তবে জলঝরা বন্ধ হলো। সরে গেল উইকেটের উপর থাকা কাভার। খেলা গড়ালো মাঠে। টস জিতে আগে বোলিং করবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। দ্রুতই আয়ারল্যান্ডের উইকেট উপড়ে ফেলার পরিকল্পনা।

অধিনায়কের সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের শুরুটা করেন হাসান মাহমুদ। ইনিংসের প্রথম ওভারে আঘাত হানেন হাসান। সাজঘরে ফেরান অভিজ্ঞ পল স্টার্লিংকে। দিনটা হতে চলেছে বাংলাদেশের বোলারদের। তেমন আভাসকে আরও খানিকটা ঘনীভূত করেন হাসান ব্যক্তিগত দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিয়ে।

আগে থেকেই বৃষ্টির কারণে কেটে রাখা হয়েছিল পাঁচ ওভার। অন্যদিকে, দারুণ ছন্দে ছিলেন হাসান। তাইতো তামিমের নির্দেশে একটানা বল করে গেছেন তিনি। ইনিংসের সপ্তম ওভারে আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় উইকেটের পতন। এবার স্টিফেন ডোহেনির উইকেট নিজ পকেটে পুরলেন হাসান। বোলিং ইনিংসের শুরুটা হল দুর্দান্ত।

প্রাথমিক সে ধাক্কা ক্রমশ কাটিয়ে উঠতে শুরু করে আইরিশরা। অধিনায়ক অ্যান্ডি বার্লবির্নি ও হ্যারি টেক্টর হাল ধরেন আয়ারল্যান্ডের। ৪০ এর ঘরে শরিফুল ইসলামের শিকারে পরিণত হন বার্লবির্নি। কিন্তু অপরপ্রান্তে ক্রমশ আগ্রাসনের রসদ জোগাড় করতে থাকেন টেক্টর। লরকান টাকার ও কার্টিস ক্যাম্ফাররা খুব বেশি সময় সঙ্গ দিতে পারেননি টেক্টরকে।

তবে জর্জ ডকরেল ঠিকই জুটি বাঁধলেন। দুইজনে মিলে গড়লেন ১২৫ রানের জুটি। এই সময়ে হ্যারি টেক্টর পেয়ে যান তিন অংকের সেই ম্যাজিক ফিগারের দেখা। নিজের ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি এসে ধরা দেয় টেক্টরের কাছে। তবে শতক করেই থেমে থাকেননি। তিনি ইনিংসকে বড় করার চেষ্টা করেছেন। অবশেষে ১১৩ বলে ১৪০ রান করে থামেন টেক্টর।

তার মূল্যবান উইকেটটি তুলে নেন এবাদত হোসেন। শেষের দিকে ডকরেল ও মার্ক অ্যাডায়ের দ্রুত রান তোলার মিশনে নামেন। দলের সংগ্রহ ৩১৯ এ নিয়ে যান এই দুই ব্যাটার। ডকরেল অপরাজিত থাকেন ৭৪ রানে। শুরু ধাক্কা কাটিয়ে পাহাড়সম টার্গেট ছুঁড়ে দেয় আইরিশরা। অন্যদিকে, ইনিংসের শুরু হাসানের এনে দেওয়া মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারেনি টাইগার বোলাররা। দেদারছে রান বিলিয়েছেন সবাই।

বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসের সূচনা যেমন হয়েছিল, ঠিক বিপরীত হয়েছে ব্যাটিং ইনিংসের সূত্রপাত। অফফর্মে ভুগতে থাকা তামিম ইকবাল ফিরে গেলেন দ্রুতই। নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাসের ব্যাটে ভর করে চাপ সামলে নেওয়ার প্রচেষ্টা। বিশাল এক টার্গেট তাড়ায় লিটনের জ্বলে ওঠা ছিল ভীষণ জরুরি। তবে পাওয়ার প্লে শেষ হওয়া মাত্রই প্রস্থান ঘটে লিটনের। ৪৫ ওভারে ৩২০ রান টপকে যাওয়ার তখন উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দেওয়া।

সেখান থেকে প্রথমে শান্তর সাথে জুটি গড়েন সাকিব। দ্রুতই এগোতে থাকে বাংলাদেশের ইনিংস। তবে আবারও ছন্দপতন। ২৬ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাকিব। তখনই বাংলাদেশের ইনিংসে প্রয়োজন ছিল টেক্টরের মত একটি ইনিংস। আর তেমনই এক ইনিংসের পথে হাঁটতে শুরু করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার সঙ্গী হন তাওহীদ হৃদয়।

এই দুই ব্যাটারের যুগলবন্দী হয় দারুণ। দ্রুত জয়ের দিকে এগোতে থাকে টাইগাররা। বাইশ গজে এই দুই ব্যাটার বেশ সাবলীলভাবে ব্যাট করতে থাকেন। আর প্রচণ্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে মাঠে আসা দর্শকদের জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন। ১৩১ রানের জুটি ভাঙ্গে হৃদয়ের বিদায়ে। ৬৮ করা হৃদয়ের উইকেট শিকার করেন জর্জ ডকরেল। তবে শান্ত ঠিকই নিজের প্রথম ওয়ানডে শতকের দেখা পেয়ে যান।

সবাই প্রত্যাশার ছিল তিনি জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বেন। তবে কার্টিস ক্যাম্ফারের উইকেটে পরিণত হয়ে ১১৭ রানে থামে শান্তর ইনিংস। শান্ত-হৃদয়ের গড়ে দেওয়া জয়ের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে কাজটা করতে হতো বাকিদের। সে কাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। তার মত অভিজ্ঞ একজন ব্যাটার ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের জন্য এক আশীর্বাদ। সেটাই তিনি প্রমাণ করেছেন দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে।

তিন বল বাকি থাকতে তিন উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। প্রথম ম্যাচ ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টির জলে। তাই এই জয়ে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link