সুরিয়াকুমার যাদবের ব্যক্তিগত ইনিংস তখন দাঁড়িয়ে আছে ৪৮ বলে ৯৭-এ। কিন্তু তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগারে পৌঁছাতে তাঁর জন্য অবশিষ্ট ছিল একটি বলই। এমতাবস্থায় সুরিয়াকুমার যাদব সোজা ব্যাটেই খেলবেন বলেই সবাই ধরে নিয়েছিল।
কিন্তু না! সবাইকে ভুল প্রমাণ করে, আলজারি জোসেপের করা ইনিংসের শেষ বলটা সুরিয়াকুমার যাদব হাঁটু গেড়ে সুইপ শটে অনেকটা আয়েশি ভঙ্গিতেই স্কোয়ার লেগে তুলে দিলেন। ব্যাস! ছক্কা! এবং সেঞ্চুরি! আইপিএল ক্যারিয়ারে প্রথম শতকের দেখা পেলেন সুরিয়াকুমার যাদব।
কিন্তু, ঐ শট খেলার আগে কেইবা বলবে, সুরিয়া আইপিএলে তাঁর সেঞ্চুরির অপূর্ণতা ঘোচানোর সামনে রয়েছেন! আলজারি জোসেপের বলটা এমন ভাবেই খেললেন, দেখে মনে হলো, যেন নেট প্র্যাকটিসে নিজের এক্সপেরিমেন্টাল শট ঝালিয়ে নিচ্ছেন।
অনেক আগেই অবশ্য সুরিয়াকুমার যাদব একবার বলেছিলেন, ‘তিনি ম্যাচেও যতটা সিরিয়াস, ঠিক ততটাই ব্যাটিং প্র্যাকটিসে। আর নিজের ব্যাটিং অনুশীলনকে আরেকটু সমৃদ্ধ আর চ্যালেঞ্জিং করার জন্য তিনি নিজেই একটা উপায় বের করেছিলেন। অনুশীলনে আউট হলে সেখানেই শেষ হবে তাঁর ব্যাটিং প্র্যাকটিস, যাতে করে অনুশীলনের মঞ্চেও যেন ম্যাচের একটা ছাপ থাকে।
সুরিয়াকুমার যাদবের সেই পন্থা পরবর্তীতে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বড় একটা প্রভাব রেখেছে। বোলারদের আগ্রাসনের সামনে ক্ষুরধার মস্তিষ্কের ব্যাটার হয়ে ওঠেন সুরিয়াকুমার যাদব। আর ২০ ওভারের ক্রিকেট হলে তো কথাই নেই।
কোনো বোলারকেই ছাড় দেন না। সুইপ, ফ্লিক, কভার ড্রাইভে রীতিমত বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে দেন তিনি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাই সুরিয়াকুমার যাদব এ সময়ের অন্যতম এক ত্রাসের নাম।
সুরিয়াকুমার যাদবের পূর্ণ আত্মবিশ্বাসে এমন বিচিত্র শট খেলার রহস্যটা আসলে কোথায়? গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে পাওয়া সেঞ্চুরির পর অবশ্য সেই রহস্যের কিছুটা উন্মোচন করেছেন তিনি।
বলেছেন, ‘স্কোয়ার লেগের বাউন্ডারি ছিল ৭৫ থেকে ৮০ মিটার দূরে। তাই ঐ ওভারে ফ্লিক, সুইপের দিকেই আমার নজর ছিল। আমি সোজা ব্যাটে খেলতে চাইনি। কারণ আলজারি ইয়র্কার লেন্থে বল করার চেষ্টা করেছিল। তাই অমন শট খেলেছি। আর সত্যি বলতে কোনো শট খেলতেই আমি দ্বিধায় থাকি না, খুব বেশি চিন্তাও করি না। এমন শট আমি বহুবার খেলেছি। তাই অসুবিধা হয়নি।’
অবশ্য সেঞ্চুরি পাওয়া এ ম্যাচে সুরিয়ার ১১ চার ও ৬ ছক্কার বেশিরভাগই এসেছে সামনের দিকে শট খেলে। ১১ চারের মধ্যে ৪ টি পেয়েছেন বিহাইন্ড দ্য স্কোয়ারের ঠেলে দিয়ে। আর বাকি ৭ টিই খেলেছেন উইকেটের সামনে শট খেলে। আর ৬ ছক্কার মাত্র দুটি ব্যতিত ৪ টিই খেলেছেন কভার ড্রাইভ কিংবা পুল শটের মাধ্যমে উড়িয়ে মেরে।
অথচ আত্মবিশ্বাসে ভরপুর সুরিয়াকুমার যাদব চলতি আইপিলের শুরুতেও ছিলেন আত্মবিশ্বাসের তলানিতে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে টানা তিন শূন্যর পর আইপিএলেও সেই শূন্য তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু সুরিয়াকুমার যাদব ফর্মে ফিরতে তেমন সময় নেননি।
শুরুর কয়েক ম্যাচের ব্যর্থতা ভুলে রীতিমত রান ফোয়ারা ছোটাচ্ছেন তিনি। ১ সেঞ্চুরি আর ৪ হাফসেঞ্চুরিতে ৪৭৯ রান নিয়ে এখন পর্যন্ত এবারের আসরের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকদের তালিকায় তিনে আছেন সুরিয়া।
বাইশ গজের ক্রিকেটে এর আগে ‘মিস্টার থ্রি সিক্সটি’ বলতে একজনকেই চিনত বিশ্ব ক্রিকেট। তিনি এ বি ডি ভিলিয়ার্স। খুব সম্ভবত বাইশ গজের ক্রিকেটে যবনিকাপাত টানার সময় নিজের সেই সত্ত্বার ব্যাটনটি তিনি তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন সুরিয়াকুমার যাদবের হাতে।
যদিও এ দুই মিস্টার থ্রি সিক্সটির কখনোই একে অপরের সতীর্থ হয়ে খেলা হয়নি। তবে সুরিয়াকুমার যাদব ডি ভিলিয়ার্সকে বারবার বাইশ গজে ফিরিয়ে আনেন তাঁর সুইপ, ফ্লিক আর বৈচিত্র্যপূর্ণ সব শটে। এখন কে কার চেয়ে সেরা সেই বিতর্কও হয় অনলাইন পাড়ায়।
অবশ্য শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ডে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট ব্যবধানে ডি ভিলিয়ার্স এগিয়ে থাকলেও ২০ ওভারের ক্রিকেটে তাঁকে ছাপিয়ে যাওয়ার পথেই রয়েছেন সুরিয়াকুমার যাদব। অচিরেই হয়তো ছাপিয়েও যাবেন।