আশা জাগানিয়া উত্থানের নিখুঁত বাস্তবায়ন
এই সিরিজ থেকে আসলে বাংলাদেশের প্রাপ্তির ছিল সামান্যই। হারানোর শঙ্কা ছিল বেশি। তবে দুটি ম্যাচে জয় যেভাবে এলো, তা ব্যক্তিগতভাবে কয়েক জনের এবং গোটা দলেরও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোয় কাজে দেবে আশা করি।
শেষ ওভারের প্রথম বলটি হাসান মাহমুদ করেছেন স্লোয়ার ডেলিভারি, ‘ব্যাক অব দা হ্যান্ড’ স্লোয়ার।
স্লোয়ারের নানা ধরনের মধ্যে খুবই কঠিন এবং ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ এটি। একদম নিখুঁত না হলেই আলগা একটি ডেলিভারি হয়ে যেত। তবু হাসান সেই সাহস দেখিয়েছেন। বলা ভালো, দু:সাহস। ওই সময় তিনি এমন পথ বেছে নেওয়ায় চমকে গেছি। খুব ভালোও লেগেছে। প্রবল চাপের মধ্যেও আশ্চর্য শীতলতায় তিনি একদম নিখুঁত বাস্তবায়ন করেছেন।
হ্যাঁ, ঝুঁকি ছিল এদিক-সেদিক হওয়ার। সেক্ষেত্রে তার দিকে আঙুল উঠতে পারত, আমরাই হয়তো বলতাম, ‘এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যাক অব দা হ্যান্ড স্লোয়ার কেন করতে হবে?’ তবে আরও বড় প্রতিপক্ষের সঙ্গে, আরও বড় মঞ্চে এটি তার করতে হতে পারে ভবিষ্যতে। সেটির জন্য আদর্শ অনুশীলন তো এইসব ম্যাচেই হতে পারে।
হাসান এতকিছু ভেবে করেছেন কি না, জানি না। তবে প্রবল চাপের মধ্যেও যেভাবে কাজটি তিনি করেছেন, নার্ভ ধরে রেখেছেন, তরুণ একজন পেসারকে এভাবে দেখতে পাওয়াটা দারুণ তরতাজা একটা ব্যাপার।
এমনিতেই হাসানের গত কিছুদিনের পারফরম্যান্স, নতুন-পুরনো বলে তার স্কিল একটা ফুরফুরে হাওয়া বয়ে এনেছে দলে। আজকের এই ম্যাচের অভিজ্ঞতা তাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
মুস্তাফিজুর রহমান ম্যাচ শেষে বললেন, আগের দিনই অধিনায়ককে তিনি বলেছিলেন যে, এই ম্যাচে ৫ উইকেট নেবেন। সেটা মজা করেই হয়তো। দুই ম্যাচ বসে থেকে তার আঁতে ঘা লেগেছে কি না, সেটিও জানি না। তবে আজকে তার পুরনো কিছু ঝলক দেখতে পাওয়াটা দলের জন্য আশা জাগানিয়া।
সবচেয়ে ভালো লেগেছে, অনেক দিন পর মুস্তাকে ‘প্রোঅ্যাক্টিভ’ মনে হয়েছে। নানা কিছু চেষ্টা করেছেন। গতি মোটামুটি ভাল ছিল। প্রয়োজন হলেই অ্যাঙ্গেল বদলেছেন কখনও ওভার দা উইকেট, কখনও রাউন্ড দা উইকেট করে। গতি বৈচিত্র ভাল ছিল। শেষ দিকে ফুল লেংথ ও ইয়র্কার চেষ্টা করেছেন।
শান্ত সেই অভাবনীয় ব্রেক থ্রু এনে দেওয়ার পর খুব জরুরি ছিল দ্রুত আর কিছু উইকেট। মুস্তা সেই কাজ করেছেন আগের দিনগুলির মতো। ৩-০-৯-৩, তার শেষ স্পেল মনে করিয়ে দিয়েছে সেই ফেলে আসা মুস্তাফিজকে।
এবাদত হোসেন শুরুতে ভালোই করেছেন। অ্যান্ড্রু বালবার্নিকে ফিরিয়ে শতরানের জুটি ভেঙেছেন তিনিই। এই জুটি আর কিছুক্ষণ থাকলে ম্যাচ বেরিয়ে যেত। যদিও শেষটা ভালো করতে পারেননি তিনি। তবে কিছু বোলারের সবসময় উইকেট শিকারের প্রবণতা থাকে। এবাদত তেমনই একজন।
মৃত্যুঞ্জয় ‘চলে না’ বলে আজকেই কিছু রায় দেখেছি নিউজ ফিডে। এমনিতে তিনি খুব স্পেশাল কেউ নন, বিশেষ কিছু তার বোলিংয়ে নেই। তবে স্কিল সেট দিয়ে নিজের সীমার মধ্যে থাকতে পারলে কার্যকর হতে পারেন যথেষ্টই। তরুণ একটি ছেলে অভিষেক ম্যাচে নানা রকম গড়বড় করতেই পারেন। তাকে নিয়ে এখনই কাটছেরা করা বা কোনো রায় দয়া করে না দেওয়া হলেই ভাল।
ব্যাটিংয়ে প্রথম ৭ ব্যাটসম্যানের ৫ জন ৩৫ ছুঁলেও ফিফটি করতে পেরেছেন কেবল ১ জন। আলাদা করে তাই বলার আছে সামান্যই। সেই একজনও করতে পেরেছেন কেবল ৬৯ এবং আউট হয়েছেন বাজে শটে বাজে সময়ে। আরও অন্তত ৮-১০ ওভার এগিয়ে যাওয়া এবং পুষিয়ে দেওয়া উচিত ছিল তামিমের। তবে শেষ দিকে চাপের সময় তার অধিনায়কত্ব ভাল ছিল।
ফিল্ডিং আজকে দুর্দান্ত ছিল বেশির ভাগ সময়। শান্ত ও মিরাজের কয়েকটি সেভ ম্যাচের প্রেক্ষাপটে মহামূল্যবান হয়ে উঠেছে। ডকরেলের বুলেট গতির শটে ইয়াসির রাব্বির চমৎকার রিফ্লেক্স ক্যাচ, শেষ দিকে বৃত্তের ভেতর স্রেফ ৩ জন ফিল্ডার আছে খেয়াল করে লিটনের এগিয়ে এসে তা শুধরে দেওয়া, এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলি দলের জয়ে বড় ভুমিকা রেখেছে।
এই সিরিজ থেকে আসলে বাংলাদেশের প্রাপ্তির ছিল সামান্যই। হারানোর শঙ্কা ছিল বেশি। তবে দুটি ম্যাচে জয় যেভাবে এলো, তা ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজনের এবং গোটা দলেরও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোয় কাজে দেবে আশা করি।
– ফেসবুক থেকে