শচীন হওয়ার পথে বিরাটের বাঁধা আইপিএল

স্রেফ একটা ফ্লিক। অমনি বল ডিপ মিড উইকেট অঞ্চল দিয়ে সীমানার বাইরে। ভিন্টেজ বিরাট কোহলি। বহু পরিচিত এক রুপ। কি অবলীলায় মাঠ ছাড়া করা যায় বল! ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে বিরাট পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। ফুলার লেন্থের বলটাকে অসাধারণ এক ফ্লিক শটে ছক্কা আদায় করে।

সেই ছক্কাই তার জন্যে নিয়ে এসেছে আইপিএল ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। তবে এই আইপিএলই যে কেড়ে নিয়েছে এভারেস্ট সমপরিমাণ এক সুযোগ। হয়ত কোথাও একটা আফসোস হয় তার। কিংবা অর্থের ঝনঝানি আর বর্ণিল আলোকসজ্জা ভুলিয়ে রাখে তাকে।

এই ক্রিকেট বিশ্বে প্রায় অসম্ভব এক রেকর্ডের মালিক শচীন টেন্ডুলকার। ২৪টা বছর তিনি বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করে গেছেন। দেশে কিংবা দেশের বাইরে সবখানেই ধারাবাহিক ছিল তার ব্যাট। দীর্ঘ সময়ের এই ক্যারিয়ারে ‘লিটল মাস্টার’ গড়ে গেছেন অবিশ্বাস্য এক রেকর্ড।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০ খানা শতক হাঁকানোর একটা বিরল আর দুর্ভেদ্য এক রেকর্ডের পাশে তো রয়েছেন ‘মাস্টার ব্লাস্টার’। তিনিই তো ভারতীয় ব্যাটিং কারখানার সর্বউৎকৃষ্ট উৎপাদন। তবে সেখানে ভারতের না যতটা কৃতীত্ব, তার থেকেও বেশি সংগ্রাম করেছেন শচীন নিজে।

ঠিক একই পরিমাণ হয়ত বিরাট করেননি। তবে তার নিজস্ব গল্পটাও তো কম পরিশ্রমের নয়। সেই পরিশ্রমের সিড়ি বেয়ে তিনি একটি সবার উপরে ওঠার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তামাম দুনিয়ার সকল রেকর্ড ভেঙে ফেলার এক ব্রত যেন তার চোখ ধাঁধানো এক একটি কাভার ড্রাইভ।

দূর্বার গতিতে ছুটে যাচ্ছিলেন বিরাট কোহলি। সেই গতিতে ছন্দপতন হয়েছে। হওয়াটাও স্বাভাবিক। একটা খেলোয়াড়ের জীবনটাই তো চড়াই-উতরাই। তবে সবার উৎফুল্ল নয়ন অপেক্ষায় ছিল বিরাট কোহলির শততম সেঞ্চুরির দেখার অপেক্ষায়।

তবে সেই অপেক্ষা দীর্ঘ হয়েছে। ক্রমশ ক্ষীন হয়ে যাচ্ছে সে সম্ভাবনা। অথচ একটা সময় ভাবা হতো এই বুঝি শচীনের রেকর্ডে ভাগ বসালেন বিরাট। এই বুঝি ছাপিয়ে গেলেন শচীনকে। তবে বিরাট দিনশেষে হয়ত সেটা করতে পারবেন না। এর পেছনের সবচেয়ে বড় কারণ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ।

২০০৮ সালে যেবার বিরাট কোহলির আন্তর্জাতিক উত্থান। সে বছরই তো আইপিএলের যাত্রা শুরু। দেখতে দেখতে আইপিএল আর বিরাটের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বয়সটা এখন ১৫। আইপিএল আর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ছিলো রেললাইনের দুইটি পাত। বিরাট রেলগাড়ি হয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন সর্বত্র।

তবে ক্রমশ আইপিএলের সময় দীর্ঘ হয়েছে। বছরের প্রায় মাস দু’য়েক কেড়ে নিতে শুরু করে আইপিএল। সেখানে  আদ্যোপান্ত থেকেছেন ব্যস্ত। এরপর খানিকটা অবসাদ তো এসে ভর করবারই কথা, করেছেও। মনোযোগে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ঠিক সেখানেই পিছিয়ে গেছেন বিরাট কোহলি।

তাছাড়া আইপিএলের এই পুরো দীর্ঘ সময় জুড়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবারও নেই কোন সুযোগ। ক্রমশ ভারতের বাইরের দেশগুলোও নিরুৎসাহিত হচ্ছে এই সময়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজনে। সেদিক থেকেও তো বিরাটের শচীনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে বাঁধা পড়েছে। বিরাট পিছিয়ে গেছেন অনেকটা পথ।

যদিও শচীনের খেলোয়াড়ি জীবনের বিস্তৃতি বহুদিনের। সেদিক বিবেচনায় বিরাট বেশ দ্রুতই এগিয়েছিলেন। তবে সেই দ্রুতগতির পথে বারেবারে হাজির হয়েছে আইপিএল। স্লথ করেছে গতি। বিরাট অবশ্য এখনও চাইলেই ছুটতে পারেন সেই চূড়ান্ত গৌরবের দিকে।

কিন্তু খুব বেশি সময়, বা সুযোগ হাতে যে বাকি নেই। হয়ত বিরাট পারবেন। অথবা আরাম কেদারায় বসে খানিকটা আফসোস করবার মত গল্প নিয়ে বিদায় জানাবেন ক্রিকেটকে। তুলে রাখবেন ব্যাট-প্যাড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link